মিসরে আর্থিক সহায়তায় সমাধান দেখছে যুক্তরাষ্ট্র

মিসরে সেনা অভ্যুত্থানে ইসলামপন্থী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার চার দিন পরও যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপকে ‘ক্যু’ বা সেনা অভ্যুত্থান আখ্যায়িত করেনি। তবে যুক্তরাষ্ট্র আশা করছে, মিসরে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে দেশটির সেনাবাহিনীকে বাধ্য করার ক্ষেত্রে সে দেশে সহায়তা বন্ধের হুঁশিয়ারি যথেষ্ট ফলদায়ক হবে। ১৯৮৫ সালের একটি মার্কিন আইনে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে সেনাবাহিনীর হাতে কোনো দেশের বৈধ নির্বাচিত সরকার উৎখাত হলে দেশটিতে মার্কিন সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা অবশ্যই স্থগিত করা হবে। মোহাম্মদ মুরসি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে প্রেসিডেন্ট ওবামা তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, মিসরের ঘটনাপ্রবাহে মার্কিন প্রশাসন ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’। মার্কিন আইনের আওতায় মিসর সরকারকে দেওয়া সহায়তার বিষয়টি পুনর্বিবেচনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও এ সময় জানান তিনি। এই বক্তব্যের ব্যাখ্যায় ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট অব নিয়ার ইস্ট পলিসির পরিচালক রবার্ট স্যাটলফ বলেন, ওবামা প্রশাসন যত শিগগির সম্ভব মিসরে বেসামরিক নির্বাচিত কর্তৃপক্ষের হাতে ক্ষমতা ফিরে আসা দেখতে চায়। আর তারা এ ইঙ্গিতও দিচ্ছে যে মিসরকে মার্কিন সহায়তা বন্ধের হুমকির ক্ষমতা তার পকেটেই রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, মিসরের সামরিক অভ্যুত্থানকে ‘ক্যু’ হিসেবে আখ্যায়িত না করে মার্কিন প্রশাসন যে কথার কারিগরি দেখাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে প্রেসিডেন্ট ওবামা মিসরীয় জেনারেলদের খাটো করতে চাইছেন না। ওবামা প্রশাসনের প্রত্যাশা, ২০১১ সালে হোসনি মোবারকের পতনের পর যুক্তরাষ্ট্র যে পদক্ষেপ নিয়েছিল, সেভাবেই ওয়াশিংটন দেশটিকে আবারও গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে নিতে সমর্থ হবে। মিসর নিয়ে মার্কিন আইনের এক বিশেষ ধারায় বলা হয়েছে, বেসামরিক সরকারব্যবস্থায় উত্তরণে সরকারকে অবশ্যই সহায়তা করতে হবে। তবে এই ধারায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ‘যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তাগত স্বার্থে’ শর্ত স্থগিত রেখে মিসরকে সহায়তা অনুমোদনের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ঘনিষ্ঠ আরব মিত্র এবং প্রভাবশালী আঞ্চলিক শক্তি মিসরকে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবছর প্রায় ১৫০ কোটি ডলার সহায়তা প্যাকেজ দেয়। এর প্রায় ১৩০ কোটি ডলারই সামরিক সহায়তা। মিসরীয় সেনাবাহিনীর বার্ষিক উপকরণ ও সরঞ্জাম ব্যয়ের ৮০ শতাংশই জোগান দিয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। রবার্ট স্যাটলফ বলেন, মার্কিন প্রশাসন এখন চাইলে মিসরকে উপকরণ সরবরাহ করা বন্ধ রাখতে পারে। তবে, এরই মধ্যে এসব উপকরণ বাবদ অর্থ বরাদ্দ এবং এর অনেকটাই খরচও হয়ে গেছে। মার্কিন কংগ্রেসের নিরপেক্ষ একটি প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, মিসরে ২০টি এফ-১৬ জঙ্গি বিমান সরবরাহে লকহিড মার্টিন কোম্পানির সঙ্গে ২০১০ সালে একটি চুক্তি সই করা হয়। এসব বিমানের মধ্যে চারটি মিসরকে গত জানুয়ারিতে হস্তান্তর করা হয়েছে। ১৯৮০ সাল থেকে মিসরীয় সেনাবাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে প্রায় ২২০টি এফ-১৬ জঙ্গি বিমান পেয়েছে। ব্রুকিংস সাবান সেন্টারের পরিচালক তামারা কফম্যান উইটস বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, কায়রোতে যা ঘটেছে (সামরিক অভ্যুত্থান) তা কংগ্রেস স্বীকৃত ‘ক্যু’-এর সংজ্ঞার সঙ্গে মেলে কি না—বিষয়টির আইনি ব্যাখ্যা নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরকে এখন কাজ করতে হবে। কফম্যান বলেন, সুতরাং এ বিষয়টি মিসরীয় সেনাবাহিনীর অভিপ্রায়, সংকট থেকে উত্তরণের রোডম্যাপ ও এ-সংক্রান্ত সময়সীমা প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র ও মিসর সরকারের মধ্যে সংলাপের কিছু সময় দেবে।

No comments

Powered by Blogger.