খালেদার বিরুদ্ধে চার্জশীট গৃহীত, হারিছকে গ্রেফতারে পরোয়ানা জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা ফখরুলকে এক মামলায় জামিন

বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় চার্জশীট আমলে নিয়ে মামলার অপর পলাতক আসামি খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। মঙ্গলবার ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোঃ জহুরুল হক খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে শুনানি শেষে বিকেলে এ আদেশ দেন। এ ছাড়া দিনের প্রথমভাগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দুটি মামলার একটিতে জামিন মঞ্জুর করে একই আদালত। আরেকটি মামলায় জামিন না হওয়ায় মির্জা ফখরুলের জামিন মুক্তি ঝুলে গেল। মঙ্গলবার আদালতে দুপুর ২টা ১০ মিনিটে হাজির হন খালেদা জিয়া। প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা অভিযোগপত্রের গ্রহণযোগ্যতার শুনানি শেষে বিচারক বিকেলে খালেদার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আমলে নেন এবং হারিছ চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। একই সঙ্গে আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে এ মামলার পলাতক আসামি হারিছ চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়েছে কি না সে সম্পর্কে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল শুনানিতে বলেন, ‘জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধ লেনদেনের অভিযোগ আনা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আদালত আমলে নেবেন কি না তার এখতিয়ার একমাত্র বিচারকের। খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন শুনানিতে বলেন, ‘জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট সম্পূর্ণভাবে গঠন করা হয়েছে বিএনপির নিজস্ব তহবিল থেকে। এ ট্রাস্টে সরকারের একটি টাকাও নেই। এ ট্রাস্টের যদি কোন আর্থিক অনিয়ম হয়ে থাকে তা দেখার দায়িত্ব ট্রাস্টি বোর্ডের। তাই দুর্নীতি মামলায় চলে না। মামলায় বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান আদালতে উপস্থিত হন। মামলার অন্যতম আসামি খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু থেকেই পলাতক।
এ মামলায় খালেদা জিয়াসহ চারজনকে অভিযুক্ত করে গত বছরের ১৬ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ খান। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে ‘শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টে’র নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়। কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত ১ কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেয়া হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়, যার কোন বৈধ উৎস্য ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি। জমির মালিককে দেয়া ওই অর্থ ছাড়াও ট্রাস্টের নামে মোট ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ৮ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের নামে তেজগাঁও থানায় দুর্নীতির অভিযোগে এ মামলা করেছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ।
গাড়ি ভাংচুরের অভিযোগে দায়ের করা সূত্রাপুর থানার মামলায় জামিন পেলেও মতিঝিল থানার বিস্ফোরক আইনের মামলায় জামিন পাননি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার সকালে ঢাকা মহানগরের দায়রা জজ মোঃ জহুরুল হকের আদালতে মির্জা ফখরুল ইসলামের দুটি মামলায় জামিন শুনানি হয়। শুনানি শেষে বিচারক সকালেই সূত্রাপুর থানার মামলার জামিন দিলেও বিকেলে মতিঝিল থানার মামলায় জামিন নামঞ্জুর করেন। বিরোধীদলের অবরোধে গাড়ি পোড়ানোসহ ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় গত ৩ জানুয়ারি মতিঝিল ও সূত্রাপুর থানায় করা দুটি মামলায় গ্রেফতার দেখানও হয় ফখরুলকে। ৯ ডিসেম্বর ১৮ দলের রাজপথ অবরোধ কর্মসূচীতে সহিংসতার ঘটনায় রাজধানীর সূত্রাপুর ও মতিঝিল থানায় মামলা দুটি করা হয়েছিল। ওই সময় এ ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ৩৭টি মামলা করা হয়। সব মামলায় ফখরুল ইসলামকে আসামি দেখানও হয়েছে। ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনের বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে মির্জা ফখরুলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মির্জা ফখরুল গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন।

No comments

Powered by Blogger.