দখল-দূষণ রোধ করে নদী রক্ষায় কমিশন হচ্ছে by আবুল কাশেম

বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও শীতলক্ষ্যাসহ সারা দেশের নদী দখল রোধ এবং দূষণমুক্ত করতে একটি স্থায়ী কমিশন গঠন করতে যাচ্ছে সরকার। সারা দেশে নদী খননসহ নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ পুনরুদ্ধার, নদীর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ ও নৌপরিবহনযোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতেও কাজ করবে এই কমিশন।
'জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন' নামের এ কমিশন গঠনের জন্য একটি খসড়া আইন চূড়ান্ত করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। 'জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আইন ২০১২' নামে খসড়াটি আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন শেষে মন্ত্রিসভার আগামী বৈঠকে উত্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছে নৌ মন্ত্রণালয়।
নৌমন্ত্রী মো. শাজাহান খান কালের কণ্ঠকে জানান, কমিশন গঠনের আইনের খসড়াটি আইন মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র পাওয়ার পর মন্ত্রিসভায় পাঠানো হয়েছে। সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এটি অনুমোদন পেলে পরে সংসদে বিল আকারে উত্থাপন করা হবে।
নৌমন্ত্রী আরো বলেন, নদীর দখল-দূষণ রোধের জন্য এত দিন অবহেলা ও অযত্ন ছিল। নদী রক্ষায় হাইকোর্টেরও নির্দেশনা রয়েছে। এ অবস্থায় জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন দেশের নদীগুলোর 'অভিভাবক' হিসেবে কাজ করবে।
কমিশন গঠনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে খসড়া আইনে বলা হয়েছে, 'নদীর অবৈধ দখল, পরিবেশ দূষণ, শিল্প কারখানা কর্তৃক সৃষ্ট নদী দূষণ, অবৈধ কাঠামো নির্মাণ ও নানাবিধ অনিয়ম রোধকল্পে এবং নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ পুনরুদ্ধার, নদীর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ এবং নৌপরিবহনযোগ্য হিসেবে গড়িয়া তোলাসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নে নদীর বহুমাত্রিক ব্যবহার নিশ্চিত করিবার প্রয়োজনে একটি কমিশন গঠন করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়।'
এ আইনের আওতায় গঠিত কমিশন ঢাকাসহ সারা দেশের নদীগুলো দখল রোধ করে পরিবেশ সুরক্ষা ও নদীর নাব্যতা রক্ষায় সরকারকে পরামর্শ দেবে। সরকার কমিশনের পরামর্শ মেনে কাজ করবে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদী খননের ব্যাপারেও কমিশন সরকারকে সুপারিশ করবে।
মন্ত্রিপরিষদে পাঠানো কমিশন আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, কমিশন নদীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় বা বিভাগের মধ্যে সমন্বয় রক্ষার জন্য সুপারিশ করা ছাড়াও নদীর অবৈধ দখলমুক্ত ও পুনঃদখল রোধ করা, নদী ও নদীর তীরে স্থাপিত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, নদীর পানি দূষণমুক্ত রাখা, বিলুপ্ত বা মৃতপ্রায় নদী খননের সুপারিশসহ নিয়মিত নদী পরিদর্শন করবে।
খসড়া আইনে বলা হয়েছে, নদী রক্ষা কমিশন হবে একটি স্থায়ী ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থা। কমিশনের মামলা দায়ের করার ক্ষমতা থাকবে। কমিশনের বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করা যাবে। কমিশনে চেয়ারম্যান ও চারজন সদস্য থাকবেন। তাঁরা তিন বছরের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন। তবে কেউ দুই মেয়াদের বেশি থাকতে পারবেন না। বাছাই কমিটির সুপারিশক্রমে রাষ্ট্রপতি চেয়ারম্যান নিয়োগ দেবেন। আর অন্য চার সদস্যের মধ্যে একজন দেশীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নদী বিশেষজ্ঞ ও পানি বিশেষজ্ঞ, একজন পরিবেশ বিশেষজ্ঞ, একজন নদী প্রকৌশলী বা নদী জরিপ বিশেষজ্ঞ বা নদী ব্যবস্থাপনায় বিশেষজ্ঞ এবং একজন মানবাধিকারকর্মী বা একজন আইনজ্ঞ থাকবেন। সদস্যদের কমপক্ষে ১২ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। তবে সদস্যদের মধ্যে একজন মহিলা হবেন।
চেয়ারম্যান ও সদস্য নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে যে বাছাই কমিটি সুপারিশ করবে, সেই কমিটির সভাপতি হবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। এ ছাড়াও থাকবেন অর্থসচিব, জনপ্রশাসনসচিব, নৌসচিব, আইনসচিব, ভূমিসচিব, পানিসম্পদসচিব এবং পরিবেশ ও বনসচিব। কমপক্ষে চারজনের উপস্থিতিতে বাছাই কমিটির কোরাম হবে।
নৌমন্ত্রী জানান, তাঁর সভাপতিত্বে নদী রক্ষায় এখন একটি আন্তমন্ত্রণালয় টাস্কফোর্স কাজ করছে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, গৃহায়ণ, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ও এ টাস্কফোর্সে রয়েছে। তবে টাস্কফোর্স সাধারণত কোনো একটি বিশেষ বিষয় নিয়ে কাজ করে। নদী দখলমুক্ত করা, নদীর পরিবেশ সুরক্ষা, নদী খননের মতো বড় বিষয়গুলো পরিপূর্ণভাবে দেখা টাস্কফোর্সের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই বড় আয়োজন করে নদী রক্ষার কৌশল নির্ধারণ ও তা বাস্তবায়নের জন্যই এ কমিশন গঠন করা হচ্ছে। কমিশনের সুপারিশগুলো টাস্কফোর্স সক্রিয়ভাবে বাস্তবায়ন করবে।

No comments

Powered by Blogger.