দিল্লির রাডার, মৃত্যু চুম্বন ও দেশের নিরাপত্তা by শাহ আহমদ রেজা

ভারত সফরের তুলনায় প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর নিয়ে মোটেও হইচই হয়নি। পাঁচদিনের সফর শেষে ২১ মার্চ অনেকটা নীরবে তিনি দেশে ফিরে এসেছেন। অথচ ২০০৮ সাল পর্যন্ত সমুদয় ঋণ মওকুফ এবং সপ্তম মৈত্রী সেতু ও কয়েকটি কারখানা নির্মাণসহ বিভিন্ন চুক্তির দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, যার বিরুদ্ধে ভারতকে শুধু দিয়ে আসার অভিযোগ উঠেছে সেই একই প্রধানমন্ত্রী চীন সফরকালে দেশের স্বার্থে যথেষ্টই অর্জন করেছেন।

তা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা কেন দলে দলে বিমানবন্দরে ছুটে গেলেন না, কেন প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে মিছিল করা হলো না—এসব প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।
কথা শুধু এটুকু হলে বিষয়টিকে সামনে আনার প্রয়োজন পড়ত না। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের দিন ক’টিতেই ভারত থেকে এমনকিছু খবর এসেছে যেগুলো শুধু তাত্পর্যপূর্ণ নয়, আশঙ্কাজনকও। এরকম প্রথম খবরটি তৈরি করেছেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব জি কে পিল্লাই। ১৯ মার্চ নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত ‘ইন্দো-বাংলাদেশ সিকিউরিটি ডায়ালগ’-এ শেখ হাসিনার নয়াদিল্লি সফরকে ‘মাইলফলক’ হিসেবে চিহ্নিত করে তিনি বলেছেন, এর মধ্য দিয়ে যে ‘সুফল’ পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে তা শুধু কাগজপত্রে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। এই ‘সুফল’ অর্জন করতে হবে। কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়েও চমত্কার কথা শুনিয়েছেন মিস্টার পিল্লাই : ‘সুযোগের জানালা’ সব সময় খোলা থাকে না। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্কের ক্ষেত্রে আগামী নয় মাসকে ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ’ চিহ্নিত করে তিনি বলেছেন, ‘সুফল’ অর্জনসহ যা কিছু করার সবই এ নয় মাসের মধ্যে করতে হবে।
বাংলাদেশকে পাকিস্তান ও পশ্চিম এশিয়ার সন্ত্রাসবাদীদের ‘ট্রানজিট পয়েন্ট’ হিসেবে উল্লেখ করার পাশাপাশি আরও কিছু কথাও বলেছেন ভারতের স্বরাষ্ট্র সচিব। কিন্তু বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে ‘সুযোগের জানালা’বিষয়ক মন্তব্যটুকু। এর মধ্য দিয়ে পরিষ্কার হয়েছে, বাংলাদেশকে নিয়ে আসলেই ভারতের কিছু বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে এবং আওয়ামী লীগ সরকার সেসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করছে বলেই ভারতের জন্য ‘সুযোগের জানালা’ খুলে গেছে। কিন্তু যে কোনো মুহূর্তে ‘জানালা’ বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে ভারতীয়দের মনে। এজন্যই হুশিয়ার করতে গিয়ে মিস্টার পিল্লাই বলেছেন, ‘সুযোগের জানালা’ সব সময় ‘খোলা’ থাকে না। কাব্য করেছেন, নাকি কূটনীতির ভাষায় কথার মারপ্যাঁচ খাটিয়েছেন সেটা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বটে, তবে বুঝতে কষ্ট হয়নি যে, মূল কথায় তিনি সন্ত্রাস দমন এবং করিডোর সংক্রান্ত চুক্তিগুলোর দিকেই আঙুল তুলেছেন।
এদিকে ভারতের স্বরাষ্ট্র সচিব যে শুধু কথার কথা বলেননি বরং ‘মিন’ও করেছেন বা বুঝিয়েও ছেড়েছেন, তার প্রমাণ পাওয়া যাবে আওয়ামী লীগ সরকারের কার্যক্রম লক্ষ্য করলে। দেশপ্রেমিক দলগুলোর বিরুদ্ধে বেড়ে চলা হুমকি-হামলা-মামলা ও গ্রেফতার পর্যন্ত বিভিন্ন পদক্ষেপের বিশ্লেষণে পরিষ্কার হয়ে যাবে, ভারতের ইঙ্গিতে সরকার দেশপ্রেমিকদের দমন ও উত্খাত করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। উদ্দেশ্যেও রাখঢাক নেই তাদের। করিডোরসহ কোনো প্রশ্নেই কোনো রকম বিরোধিতা সহ্য করতে রাজি নয় তারা। অন্যদিকে দেশপ্রেমিক দলগুলো যেহেতু চুক্তি বাতিল করার দাবিতে প্রতিবাদী অবস্থান নিয়েছে, সেহেতু অজুহাত সৃষ্টি করে হলেও দলগুলোকে প্রতিহত করতে চাচ্ছে দু’ দেশের সরকার। তেমন কিছু অজুহাত ইতোমধ্যে সৃষ্টিও করা হয়েছে। পাশাপাশি চলছে নতুন নতুন অজুহাত তৈরি করার প্রস্তুতি। সম্ভবত এজন্যই ‘আগামী নয় মাসকে’ খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ভারতের স্বরাষ্ট্র সচিব। এ সময়ের মধ্যে দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক নেতাদের বাহারি নামের নানা মামলায় জড়িয়ে কারাগারে ঢোকানো হবে। সংবাদ মাধ্যমকেও ‘একহাত’ দেখানো হবে, যাতে করিডোরসহ বিভিন্ন ‘সুফল’ পাওয়ার পথে কেউ প্রতিবন্ধক হয়ে উঠতে না পারে। একই উদ্দেশ্য থেকে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকেও ‘হাত’ করার পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত। ভারতের এই চেষ্টা অবশ্য আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চলছে। এ ব্যাপারে সাফল্যও পেয়েছে দেশটি। কারণ, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পুনরুল্লেখে না গিয়েও বলা যায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষে সহজে আর কোমর সোজা করে দাঁড়ানো এবং ভারতের ইচ্ছার বাইরে যাওয়া সম্ভব নয়—বিশেষ করে আওয়ামী লীগ যতদিন ক্ষমতায় আছে ততদিন তো বটেই।
সেনাবাহিনী সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হয়েছে ২২ মার্চ সংখ্যা ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’য়। দৈনিকটি লিখেছে, ভারত সফরের শেষ পর্যায়ে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল মোহাম্মদ আবদুল মুবীনের সঙ্গে কলকাতায় এক অঘোষিত শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ফোর্ট উইলিয়ামে অবস্থিত ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের সদর দফতরে ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে অংশ নিয়েছেন ভারতের পরবর্তী সেনাপ্রধান ও ইস্টার্ন কমান্ডের জিওসি-ইন চিফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল ভি কে সিং এবং বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল দীপক কাপুর। অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ বিষয় হলো, মাত্র দু’দিন আগে জেনারেল মুবীনের সঙ্গে দিল্লিতে বৈঠক করা সত্ত্বেও কলকাতায় উড়ে এসেছিলেন জেনারেল কাপুর। ফোর্ট উইলিয়ামের ‘বিশ্বস্ত সূত্রের’ উদ্ধৃতি দিয়ে ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’ জানিয়েছে, জেনারেল মুবীনের ভারত সফর দু’দেশের সেনাবাহিনীর যৌথ মহড়ার পথ খুলে দিতে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে দু’ দেশের সম্পর্কে যে উন্নতি শুরু হয়েছে তার ভিত্তিতে ভারত সামরিক সম্পর্কেরও উন্নতি ঘটাতে চাচ্ছে। ভারতের ইচ্ছা, বাংলাদেশ চীনের প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসুক, ভারতীয় সমরাস্ত্র কিনুক এবং বাংলাদেশের সেনাবাহিনী চীনা সেনাবাহিনীর পরিবর্তে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে যৌথ মহড়ায় অংশ নিক। এ উদ্দেশ্যে মিজোরাম রাজ্যের ভাইরাংটেতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর জঙ্গলযুদ্ধের প্রশিক্ষণ স্কুলে যৌথ মহড়ার প্রস্তাব দিয়েছেন ভারতের দুই জেনারেল।
বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ভারতীয় জেনারেলদের প্রস্তাবের জবাবে ঠিক কী বলে এসেছেন, সে ব্যাপারে ধারণা করার জন্য প্রকাশিত রিপোর্টের একটি তথ্যই সম্ভবত যথেষ্ট—যেখানে বলা হয়েছে, জেনারেল মুবীনের সফর দু’ দেশের সেনাবাহিনীর যৌথ মহড়ার পথ খুলে দিতে চলেছে। এই রিপোর্ট সত্য হলে ধরে নেয়া যায়, ফোর্ট উইলিয়ামে জেনারেল মুবীন হ্যাঁসূচক জবাবই দিয়ে এসেছেন। পর্যবেক্ষকরা এতে অবশ্য মোটেও অবাক হননি। কারণ, সবই ঘটে চলেছে সেই ‘রোডম্যাপ’ অনুযায়ী। প্রসঙ্গক্রমে এখানে সাবেক সেনাপ্রধান ও জরুরি সরকারের নেপথ্য নায়ক জেনারেল মইন উ আহমেদের ভারত সফরের কথা স্মরণ করা যেতে পারে। ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে মইন উ যখন সফরে গিয়েছিলেন তখন তিনবাহিনী প্রধান তো বটেই, ভারতের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রীও তার সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। ক্ষুদ্র কোনো দেশের সেনাপ্রধানকে বড় কোনো দেশ সাধারণত এতটা ‘সম্মান’ দেখায় না। পাঠকদের নিশ্চয়ই মনে পড়বে, মইন উ সেবার ছয়টি ঘোড়া ‘উপহার’ হিসেবে এনে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন—যদিও পরে জানা গেছে, এই ‘উপহার’-এর জন্য বাংলাদেশকে নগদে ছয় কোটি টাকা গুণতে হয়েছিল। বিষয়টিকে তখন মইন উর ‘অশ্ব কূটনীতি’ আখ্যা দেয়া হয়েছিল। এতদিনে প্রমাণিত হয়েছে, এটা নিতান্ত কথার কথা ছিল না। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে এখনও ওই ‘অশ্ব কূটনীতি’রই দায় টানতে হচ্ছে।
উদাহরণ দেয়ার জন্য কয়েকটি তথ্যের উল্লেখ করা যায়। প্রথম তথ্যটি হলো, সিলেটের জালালাবাদ সেনানিবাসে ভারতের অর্থ সাহায্যে একটি ক্লাইম্বিং ওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে (যে সেনাবাহিনী ছয় কোটি টাকা দিয়ে ছয়টি ঘোড়া কিনতে পারে, একটি ক্লাইম্বিং ওয়াল নির্মাণ করার জন্য সে সেনাবাহিনীর ভারতের দ্বারস্থ হওয়াটা অবশ্যই স্বাভাবিক ব্যাপার হতে পারে না)। গত বছরের ২৯ জুলাই হাসতে হাসতে সে ওয়ালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাই কমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী। দ্বিতীয় তথ্যটি হলো, সেদিনই ওই সেনানিবাসে বাংলাদেশ ও ভারতের সেনা কমান্ডোরা যৌথ মহড়ায় অংশ নিয়েছিল এবং মহড়ার অনুষ্ঠানেও প্রধান অতিথি ছিলেন পিনাক রঞ্জন। যৌথ মহড়া সংক্রান্ত তৃতীয় তথ্যটি হলো, সিলেটে ক’দিন আগে, ১৯ জুলাই আগরতলার ১৫ কিলোমিটার উত্তরে নরশিংগড় সীমান্তে বিডিআর ও বিএসএফ যৌথ টহল দিয়েছে। টহলের ছবিসহ খবরটি প্রচার করেছিল ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি। তারও আগে, গত বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ মার্চ পর্যন্ত আসামের জোড়হাটে দু’ দেশের সেনাবাহিনী যৌথ মহড়ায় অংশ নিয়েছে (এ সময়ই পিলখানায় সেনা অফিসারদের হত্যা করা হয়েছিল!)।
এভাবে তথ্যের সংখ্যা বাড়ানোর পরিবর্তে বলা যায়, ফোর্ট উইলিয়ামের শীর্ষ বৈঠকে আকস্মিকভাবে কোনো প্রস্তাব দেয়া হয়নি। যৌথ মহড়ার মতো আয়োজনগুলো জেনারেল মইন উ’ই করে গেছেন। বর্তমান সেনাপ্রধান তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখছেন মাত্র। বিষয়টি কিন্তু মোটেও সহজ-সরল নয়। মইন উর কুখ্যাত ‘অশ্ব কূটনীতির’ দায় এবং ‘রোডম্যাপ’-এর শর্ত অনুযায়ী আওয়ামী লীগ সরকারকে ভারতের জন্য বাংলাদেশের ‘জানালা’ খুলে দিতে হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের নিরাপত্তাই শুধু হুমকির মুখে এসে পড়েনি, একই সঙ্গে জানালার পর এসেছে বাংলাদেশের দরজা খুলে দেয়ারও প্রস্তাব। দরজা খুলে দিতে হবে ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য। সে উদ্দেশ্য থেকেই সবশেষে এসেছে যৗথ মহড়ার প্রস্তাব। সরকারের ইঙ্গিতে জেনারেল মুবীন সে প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়ে থাকলে বাংলাদেশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রবেশ সময়ের বিষয়ে পরিণত হবে। কারণ, কলকাতায় যেদিন সেনাপ্রধানদের শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে ঠিক সেদিন, ১৯ মার্চই ভারতের স্বরাষ্ট্র সচিব জি কে পিল্লাই দিল্লিতে ঘোষণা করেছেন, ‘জানালা’ যেহেতু সব সময় ‘খোলা’ থাকে না, সেহেতু ‘সুফল’ অর্জনের ব্যাপারে তারা সময় নষ্ট বা সুযোগ হাতছাড়া করবেন না। সময়ের কথাও জানিয়ে দিয়েছেন মিস্টার পিল্লাই—আগামী নয় মাসের মধ্যেই সবকিছু ‘সাঙ্গ’ করতে চান তারা।
ভীত ও উদ্বিগ্ন হওয়ার অন্য একটি বিশেষ কারণও উল্লেখ করা দরকার। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পরপর ‘এশিয়ান এজ’কে দেয়া সাক্ষাত্কারে (২৪ মার্চ, ২০০৯ সংখ্যা) ভারতের সাবেক সেনা প্রধান জেনারেল শঙ্কর রায় চৌধুরী বলেছিলেন, বাংলাদেশ খুব সহজে এবং বার বার নয়াদিল্লির ‘রাডার’ থেকে সরে যায়। কিন্তু এবার আর তা হতে দেয়া যাবে না। সাবেক এই জেনারেলের বিশ্বাস, নয়াদিল্লিও নিশ্চয়ই চায় না, বাংলাদেশ আবারও তার ‘রাডার’ থেকে সরে যাক। ওই সাক্ষাত্কারে জেনারেল চৌধুরী একটি তত্ত্বও হাজির করেছিলেন : বাংলাদেশকে নিজের কব্জায় রাখার উদ্দেশ্যে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান ‘গ্রেট গেম’-এর অংশ হিসেবেই নাকি পিলখানা হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল! এই ‘গ্রেট গেম’ নাকি চলছেও অনেক আগে থেকে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ছিল ‘গ্রেট গেম’-এর ‘রাউন্ড ওয়ান’ বা প্রথম পর্ব। ওই ‘রাউন্ডে’ ভারত বিজয়ী হয়েছিল। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমানকে বাঁচাতে পারেনি ভারত। এটা ছিল ভারতের বড় ধরনের পরাজয় এবং ‘অপর পক্ষের’ বিজয়। ফলে ‘গ্রেট গেম’-এর ‘রাউন্ড টু’ চলে গেছে পাকিস্তানের পক্ষে। জেনারেল চৌধুরীর মতে একই ‘গ্রেট গেম’-এর সর্বশেষ ‘রাউন্ড’-এর সূচনা হয়েছে পিলখানায়। বড় কথা, এর মধ্যে ভারতের পরাজিত হওয়ার সম্ভাবনা লক্ষ্য করেছেন তিনি। এজন্যই জেনারেল চৌধুরী ভারত সরকারকে সতর্ক করে দিয়েছেন, বাংলাদেশ যাতে আবারও নয়াদিল্লির ‘রাডার’ থেকে সরে যেতে না পারে। সাক্ষাত্কারটিতে আরও কিছু তাত্পর্যপূর্ণ কথাও বলেছিলেন জেনারেল শঙ্কর রায় চৌধুরী। যেমন, আওয়ামী লীগ কখনও ক্ষমতায় এলে সেটা ভারতের জন্য ‘শুভ সংবাদ’ হয়ে ওঠে। দ্বিতীয়ত, নয়াদিল্লি অবশ্যই শেখ হাসিনার সরকারকে ‘পুরোপুরি এবং চূড়ান্তভাবে’ সমর্থন করে। কিন্তু এ সমর্থনই এক সময় আওয়ামী লীগের জন্য ‘মৃত্যু চুম্বন’ হয়ে উঠতে পারে। ভারতকে তাই খুবই সতর্কতা ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে তার ‘কার্ড’ খেলার পরামর্শ দিয়েছিলেন সাবেক এই সেনাপ্রধান।
ওই ‘কার্ড’ খেলার অংশ হিসেবেই ফোর্ট উইলিয়ামে শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে কিনা, সে প্রশ্ন উঠেছে একটি বিশেষ কারণে : এমন এক সময়েই বাংলাদেশের সেনাপ্রধানকে ভারত সফরে নেয়া হয়েছে যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গিয়েছিলেন ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্র চীন সফরে। এখানে জেনারেল শঙ্কর রায় চৌধুরী এবং ভারতের স্বরাষ্ট্র সচিবের দুটি বক্তব্য স্মরণ করা যেতে পারে। সাবেক জেনারেল বলেছেন, ভারতের ‘পুরোপুরি এবং চূড়ান্ত’ সমর্থনই একসময় আওয়ামী লীগের জন্য ‘মৃত্যু চুম্বন’ হয়ে উঠতে পারে। এর পাশাপাশি মিস্টার পিল্লাইয়ের মন্তব্য লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, তিনি শুধু ‘জানালা’ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেই থেমে যাননি, নয় মাসের সময়ও নির্ধারণ করেছেন। কে জানে, এই সময়ের সঙ্গে জেনারেল চৌধুরী বর্ণিত ‘মৃত্যু চুম্বনের’ কোনো সম্পর্ক রয়েছে কিনা!
লেখক : সাংবাদিক ও ইতিহাস গবেষক
ই-মেইল : shahahmadreza@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.