পুঁজিবাজারে স্থবিরতার জন্য দায়ী কিছু কর্মকর্তাঃ সমৃদ্ধি চাইলে আপদ বিদায় করুন

বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও পুঁজিবাজারের সুষ্ঠু বিকাশ ঘটছে না। সরকার এক পা এগিয়ে দু’পা পিছিয়ে যাচ্ছে এবং প্রতি পদে পদে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন বিনিয়োগে আগ্রহীরা। সব মিলিয়েই পুঁজিবাজার স্থবির হয়ে পড়েছে। কথাগুলো ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রেসিডেন্ট রকিবুর রহমানের।

বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে নেতিবাচক এই পরিস্থিতির জন্য তিনি পুঁজিবাজারবিরোধী কর্মকর্তাদের দায়ী করেছেন। কিছু উদাহরণও তুলে ধরেছেন ডিএসইর প্রেসিডেন্ট। যেমন—আগামী জুন মাসের মধ্যে বাজারে ২৮টি কোম্পানির শেয়ার ছাড়া হবে বলে অর্থমন্ত্রী ঘোষণা দেয়া সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত এব্যাপারে কোনো অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর পুঁজিবাজারবিরোধী কর্মকর্তারা বিষয়টিকে বাধাগ্রস্ত করে চলেছেন। তারা এমনকি ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশনের এমডিকে পর্যন্ত নিজেদের প্রতিষ্ঠানে ঢুকতে দিচ্ছেন না। ফলে জুন তো দূরের কথা, ওই ২৮ কোম্পানির শেয়ার আদৌ কখনও বাজারে আসতে পারবে কিনা সে ব্যাপারে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। এটাই স্বাভাবিক। কারণ চারদলীয় জোট সরকার ২০০৫ সালে একবার ২৬টি কোম্পানির শেয়ার ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু পুঁজিবাজারবিরোধী কর্মকর্তাদের দৌরাত্ম্যে সেসব কোম্পানির শেয়ার বাজারে আসতে পারেনি। মাত্র সেদিনের এই তিক্ত-অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই ডিএসইর প্রেসিডেন্ট একদিকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, অন্যদিকে বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে পুঁজিবাজারবিরোধী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এসব কর্মকর্তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিতে হবে।
শুনতে কঠোর মনে হলেও ডিএসইর প্রেসিডেন্টের দাবিটি সব বিচারেই যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত। কারণ পুঁজিবাজারের সুষ্ঠু বিকাশ না ঘটলে জাতীয় অর্থনীতিরও সমৃদ্ধি আশা করা যায় না। পুঁজিবাজারের বিকাশ ঘটাতে হলে বাজারে যত বেশি সম্ভব নতুন নতুন কোম্পানির শেয়ার ছাড়তে হবে। জনগণকে শেয়ার কেনার সুযোগ দিতে হবে। জনগণ যদি শেয়ার কেনার সুযোগ পায় তাহলে একদিকে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর এবং সেগুলোর মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতির বিকাশ ঘটতে থাকবে, অন্যদিকে সরকারও শেয়ারবাজার থেকে টাকা নিয়ে উন্নয়নমূলক কার্যক্রম চালাতে পারবে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা সম্প্রসারণ ও স্বাস্থ্যসেবার মতো কার্যক্রম চালানোর জন্য সরকারকে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ ধরনের সংস্থাগুলোর কাছে ধরনা দিতে হবে না। ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে এদেশে-ওদেশে দৌড়ে বেড়াতে হবে না। এটাই যুক্তির কথা, বাস্তবেও জনগণের হাতে বিপুল অর্থ রয়েছে। দেশে বিনিয়োগের জন্য বিপুল অর্থ নিয়ে উন্মুখ হয়ে আছেন প্রবাসীরাও। ব্যবসায়ীরা তো রয়েছেনই। সুযোগ দেয়া হলে বিদ্যুত্ উত্পাদনেও জনগণের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ আসতে পারে। এর ফলে বিদ্যুত্ সমস্যার সমাধান হতে পারে অল্পদিনের মধ্যে।
অন্যদিকে কয়েকজন মাত্র কর্মকর্তার ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণে বারবার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পুঁজিবাজারের বিকাশ। ডিএসইর প্রেসিডেন্টের মতো আমরাও মনে করি, বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থেই পুঁজিবাজারবিরোধী কর্মকর্তাদের অবিলম্বে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া দরকার। এসব কর্মকর্তাকে চিহ্নিত করা মোটেও সমস্যা হতে পারে না। কারা জোট সরকারের সময় ২৬টি কোম্পানির শেয়ার ছাড়তে দেননি এবং কারা এ মুহূর্তে ২৮টি কোম্পানির ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি করছেন—সবই সরকারের জানা রয়েছে। জানে ডিএসই, এসইসি এবং ইনভেস্ট করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোও। সুতরাং দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াও কঠিন হওয়ার কথা নয়। এখানে দরকার আসলে সাহসী সিদ্ধান্তের। সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারলে, একের পর এক কোম্পানির শেয়ার বাজারে এলে এবং প্রবাসী ও ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি নিম্নআয়ের সাধারণ মানুষ পর্যন্ত সবাই বিনিয়োগ করার সুযোগ পেলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি সময়ের বিষয়ে পরিণত হবে। এক্ষেত্রে সরকারকে এবং এসইসি, ডিএসই ও সিএসইসহ স্টক এক্সচেঞ্জগুলোকেও বিনিয়োগকারীদের অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নিতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে, পুঁজিবাজারে যাতে ১৯৯৬ সালের মতো বিপর্যয় না ঘটে এবং সাধারণ মানুষকে যাতে সর্বস্বান্ত না হতে হয়। এমন ব্যবস্থাও করা দরকার যাতে পৃথিবীর যে কোনো দেশ থেকে প্রবাসীরা অনলাইনে শেয়ার কেনাবেচা করতে পারেন; দেশের ভেতরে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ব্রোকারেজ হাউস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জন্য শেয়ার কেনাবেচার ব্যবস্থাও চালু করতে পারেন। আমরা আশা করতে চাই, পুঁজিবাজারের বিকাশ নিশ্চিত করার জন্য সরকার ডিএসইর দাবি ও পরামর্শ অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবে এবং অবিলম্বে বিদায় করবে পুঁজিবাজারবিরোধী সব কর্মকর্তাকে।

No comments

Powered by Blogger.