আমি গ্রেফতার হতে প্রস্তুতঃ মাহমুদুর রহমান by মেহেদী হাসান পিয়াস

দৈনিক আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেছেন, তিনি গ্রেফতার বরণে সর্বান্তকরণে প্রস্তুত। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়েরের পর বৃহস্পতিবার রাত থেকে তার নিজ কার্যালয়েই অবস্থান করছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার দুপুর সাড়ে তিনটার পরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারের বিসিআইসি ভবনের ১১ তলায় দৈনিক আমার দেশের সম্পাদকের কার্যালয়ে বসে মাহমুদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘আমি যে কোনো সময় গ্রেফতার হতে পারি। তাই এ কার্যালয় থেকে বের হচ্ছি না। আমাকে গ্রেফতার করতে হলে পুলিশকে এখানে ১১ তলায় এসে নিয়ে যেতে হবে। না হলে মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।’’

পাশে এনে রাখা জামা-কাপড় ও অন্যান্য জিনিসপত্রের ব্যাগ দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমি গ্রেফতার বরণে সর্বান্তকরণে প্রস্তুত।’’

নিজ কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার রাতযাপন করেছেন বলেও জানান মাহমুদুর রহমান। তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপিপন্থী প্রকৌশলীদের সংগঠন ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসেসিয়েশন অব বাংলাদেশের (অ্যাব) ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান চুন্নু, অ্যাবের ক্রীড়া সম্পাদক প্রকৌশলী জিয়াউল হাসান, সদস্য প্রকৌশলী আহমেদ শুভ্র ও প্রকৌশলী তুহিন।

‘তাহলে কি আপনি অবরুদ্ধ হয়ে আছেন?’- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘হ্যাঁ, নিশ্চয়ই।’’

তবে দুপুরের পর একবার ছাড়া কার্যালয়টির আশেপাশে পুলিশ সদস্যদের দেখা যায়নি। সাড়ে ৩টার দিকে ২০/২৫ জনের একদল পুলিশ সেখানে এলে মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতারের আশঙ্কা করেন অনেকে। তবে ওই পুলিশ সদস্যরা জানান, তাদের দায়িত্ব ছিল পাশের এটিএন বাংলা কার্যালয়ের পাশে। তারা ভুলক্রমে বিসিআইসি ভবনের দিকে এসে পড়েছেন। 

এদিকে শুক্রবার সারা দিনে মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে দেখা করতে আসেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও বিএনপির চেয়ারপারসন বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা শফিক রেহমান, ফরহাদ মাজহার ও তার স্ত্রী ফরিদা আক্তার, খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. এমাজ উদ্দিন আহমেদ, সাবেক ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য প্রফেসর ইউসুফ হায়দার, ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ড. সদরুল আমিন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পিয়াস করিম, বিএফইউজের একাংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, মহাসচিব শওকত মাহমুদ, জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, বিএনপির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, নির্বাহী কমিটির সদস্য সরওয়ার-এ আযম খান, ঢাকা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, অ্যাবের মহাসচিব প্রকৌশলী হারুন, কলামিস্ট ও তাতীদলের সহ সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু।   

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর সদ্য পদত্যাগী চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের স্কাইপিতে করা সংলাপ প্রকাশের অভিযোগে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও প্রকাশক হাসমত আলীর বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রদ্রোহ ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬ এর ৫৬ ও ৫৭ ধারায় ও দণ্ডবিধির ১২৪, ১২৪-এ, ৫০৫এ, ১২০বি ও ৫১১ ধারায় আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান এ মামলাটি দায়ের করেন। পিটিশন মামলা নম্বর ৩৪/১২  (তেজগাঁও)।

মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এসএম আশিকুর রহমান মামলাটি এজাহার হিসাবে গণ্য করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রাতেই মামলার কপি তেজগাঁও থানার পাঠানো হয়।

এরপর থেকেই মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করা হচ্ছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়েছে।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি স্কাইপির মাধ্যমে বেলজিয়ামের ব্রাসেলস প্রবাসী বাংলাদেশি আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন বিশেষজ্ঞ ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের সঙ্গে আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের কথিত কথোপকথনের ওপর সংবাদ প্রকাশিত হয় দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায়। গত মঙ্গলবার পদত্যাগপত্র জমা দেন বিচারপতি নিজামুল হক।

বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন মন্ত্রণালয়। এতে ট্রাইব্যুনাল-১-এ নিজামুল হকের জায়গায় দায়িত্ব পান দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর।

এদিকে বৃহস্পতিবারই বিচারপতি নিজামুল হকের স্কাইপিতে কথোপকথনের ভিত্তিতে কোনো ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।

অন্যদিকে স্কাইপিতে কথিত কথোপকথন দৈনিক আমার দেশে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশের পর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের অভিযোগে পত্রিকাটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চেয়ে বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে আবেদন করেন আইনজীবী মো. আজাহার উল্লাহ ভূঁইয়া। আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি করে বিচারপতি এইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি ফরিদ আহমেদের বেঞ্চ এ বিষয়ে সংবিধান ও তথ্য প্রযুক্তি আইন অনুযায়ী অপরাধীদের বিচার ও গ্রেফতারে কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন।

মামলা দায়েরের প্রতিবাদে পত্রিকাটির সামনে শুক্রবার দুপুরে মানববন্ধন করেছে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইজে)।

No comments

Powered by Blogger.