বিদ্যুত খাতে ১৬০ কোটি ডলার দিচ্ছে দাতারা, নেতৃত্বে এডিবি- প্রথম পর্যায়ে ৪ কেন্দ্র কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্টে রূপান্তর করা হচ্ছে by হামিদ-উজ-জামান মামুন

বিদ্যুত খাতে প্রথমবারের মতো চালু হতে যাচ্ছে মাল্টিট্রাস্ট ফাইন্যান্সিং ফেসিলিটি (এমএফএফ) পদ্ধতি। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) নেতৃত্বে এটি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ পদ্ধতিতে বিদ্যুত খাতে মোট অর্থায়ন হচ্ছে ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রথম পর্যায়ে দেশের চারটি বিদ্যুত কেন্দ্র কম্বাইন্ড সাইকেল করার উদ্যেগ নেয়া হয়েছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) মনে করছে এমএফএফ পদ্ধতির ফলে সরকারকে আর অহেতুক কমিটমেন্ট চার্জ গুনতে হবে না।
ইআরডি সূত্র জানায়, বর্তমানে শিক্ষা খাতে নতুন এ পদ্ধতিটি চালু রয়েছে এবং আগামীতে পানি উন্নয়ন খাতও এই (এমএফএফ) পদ্ধতির আওতায় আনা হবে।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক মাল্টিট্রাস্ট ফাইন্যান্সিং ফেসিলিটিজ পদ্ধতিতে প্রস্তাবিত চারটি বিদ্যুত কেন্দ্র সংস্কারের জন্য ৭০ কোটি মার্কিন ডলার অর্থায়ন করতে সম্মতি দিয়েছে। বাকি দাতারা হচ্ছে ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি), ইউরোপীয় ইনভেসমেন্ট ব্যাংক এবং এএফডি। এ পদ্ধতিতে দাতারা যৌথভাবে অর্থায়ন করবে। অর্থছাড় করবে তিন ধাপে। ফলে আগে থেকেই জানা যাবে দাতারা কোন সময় এবং কতটাকা ছাড় করবে। এ কারণে প্রকল্পের গতি বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি সরকারকে কমিটমেন্ট চার্জ দিতে হবে না।
সম্প্রতি এডিবির একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন বাংলাদেশ সফর করেছে। তারা এই পদ্ধতি বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশন, ইআরডি, বিদ্যুত বিভাগ ও বিদ্যুত উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছে।
সূত্র জানায়, বিদ্যুতের চারটি কেন্দ্রকে কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্টে রূপান্তরিত করায় বর্তমান যে জ্বালানি ব্যয় হচ্ছে তা দিয়েই এখনকার চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি বিদ্যুত উৎপাদন করা যাবে। ফলে একদিকে যেমন জ্বালানির অপচয় রোধ হবে তেমনি অন্যদিকে একই জ্বালানি দিয়ে বাড়তি বিদ্যুত পাওয়া যাবে। চার বিদ্যুত কেন্দ্রের ১ হাজার ৬৫৪ মেগাওয়াটের পুনঃ ক্ষমতায়ন (রিপায়ারিং) করে অতিরিক্ত ১ হাজার ৮শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করা সম্ভব বলে মনে করছে বিদ্যুত বিভাগ।
ঘোড়াশাল, আশুগঞ্জ, শাহাজীবাজার ও বাঘাবাড়ি বিদ্যুত কেন্দ্রের ৯টি ইউনিটকে রিপায়ারিংয়ের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে।
ঘোড়াশাল বিদ্যুত কেন্দ্রে রয়েছে তিন, চার, পাঁচ ও ছয় ইউনিট। প্রতিটি ইউনিটের উৎপাদন ক্ষমতা ২১০ মেগাওয়াট। সম্মিলিতভাবে উৎপাদন ক্ষমতা ৮৪০ মেগাওয়াট হলেও এখন ক্ষমতা কমে দাঁড়িয়েছে ৭৪০ মেগাওয়াটে। কেন্দ্রগুলো এখন দিনে ৩৯০ এবং রাতে ৫৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করছে।
আশুগঞ্জ বিদ্যুত কেন্দ্রের তিন, চার ও পাঁচ ইউনিটকে রিপায়ারিং করা প্রয়োজন। প্রতিটি ইউনিটের উৎপাদন ক্ষমতা ১৫০ মেগাওয়াট। সম্মিলিতভাবে কেন্দ্রগুলো ৪৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন করার কথা থাকলেও এখন ক্ষমতা কমে ৩৯০ মেগাওয়াটে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া আশুগঞ্জে-৬২ মেগাওয়াটের আরও দুটি কেন্দ্র রয়েছে যেখানে রিপায়ারিং সম্ভব।
বাঘাবাড়িতে জিটি-১ ইউনিট ৭১ মেগাওয়াট এবং জিটি-২ ইউনিট ১০০ মেগাওয়াটের দুটি কেন্দ্র রিপায়ারিং করার জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। ইউনিট দুটি সম্মিলিতভাবে ১৭১ মেগাওয়াট উৎপাদন করার কথা থাকলেও ১৬০ মেগাওয়াট উৎপাদন করছে।
শাহাজীবাজারে ৭০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুত কেন্দ্রকে রিপায়ারিং করা সম্ভব।
সূত্র জানায়, বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর নতুন বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের ব্যাপক উদ্যোগ নেয়া হলেও পুরানো বিদ্যুত কেন্দ্রের ক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়টি তেমনভাবে আলোচিত হয়নি। উল্টো বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোর কম উৎপাদন দক্ষতার কারণে বোঝা মনে করা হয়েছে। কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সম্প্রতি সরকারের কাছে প্রস্তাব দেয় পাওয়ারসেল। পরবর্তীতে সরকারের পক্ষ থেকে দাতাদের বিনিয়োগের প্রস্তাব দেয়া হলে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এমএফএফ পদ্ধতিতে অর্থায়ন করতে রাজি হয়েছে। সংস্কার হলে খুব কম খরচ এবং কম জ্বালানি ব্যয়ে কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন দক্ষতা বাড়বে। এতে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয়ও অনেক কমে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.