সাকা বচন- প্রধানমন্ত্রীর কথার সঙ্গে কাজের মিল থাকলে ফুলের তোড়া নিয়ে যেতাম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফর সফল হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এমপি (সাকা)। তিনি বলেছেন, স্বাধীনতার পর মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান এদেশ থেকে ভারতীর সৈন্য প্রত্যাহার করতে ভারত সরকারকে বাধ্য করেছিলেন।


এটা ছিল শেখ মুজিবের রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় সফলতা। শেখ মুজিবের কন্যা হিসেবে শেখ হাসিনা বর্তমানে দেশের প্রধানমন্ত্রী। কাজেই শেখ হাসিনার ভারত সফরকে সামনে রেখে দেশবাসীর প্রত্যাশা অনেক বেশি। দেশবাসী আশা করে, প্রধানমন্ত্রী সফরে গিয়ে ভারতকে টিপাইমুখ বাঁধ বন্ধ ঘোষণা করাবে, সীমানত্মে বিএসএফ কতর্ৃক বাংলাদেশীদের হত্যা করার প্রবণতা বন্ধ করার অঙ্গীকার করাবে, সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করে আমাদের পণ্য সেদেশে সরবরাহ এবং পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করে তিনি দেশে প্রত্যাবর্তন করবেন। আর এ জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করে ভারতে পাঠাতে চাই। যাতে কোন কারণেই ভারত তাঁকে দুর্বল না ভাবে, কোন কিছু চাপিয়ে দিতে না পারে। ভারত যেন না ভাবে, আমরা দ্বিধাবিভক্ত জাতি। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যরা উস্কানিমূলক এবং উগ্র বক্তব্য দিলেও প্রধানমন্ত্রী সংযতভাবে কথা বলছেন। এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে সাকা চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের প্রাক্কালে এ সফর নিয়ে আমি খুবই আশাবাদী।
শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে 'কূটনীতিকদের নিরাপত্তা বিধানে সরকার কি ব্যর্থ' শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাকা চৌধুরী এসব কথা বলেন। ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) এ বৈঠকের আয়োজন করে। বৈঠকের বিষয়বস্তু তুলে ধরে প্রধান অতিথি বলেন, ১৯৭২-৭৫ আমলে যখন ভারতের হাইকমিশনার সমর সেনের ওপর আক্রমণ হয়েছিল, তখনও ভারতীয় কমান্ডো আনার প্রয়োজন অনুভব করেনি ভারত সরকার।
এনপিপির চেয়ারম্যান শেখ শওকত হোসেন নীলুর সভাপতিত্বে বৈঠকে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দা রাজিয়া ফয়েজ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরম্নল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব আব্দুল লতিফ নেজামী।
সাকা চৌধুরী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেভাবে সংযত ভাষায় কথা বলছেন, কথার সঙ্গে কাজের মিল থাকলে আমরা ফুলের তোড়া নিয়ে তার বাড়ির দিকে যেতে পারতাম। সরকারের এক বছর পূর্তি উপলৰে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের কথা উলেস্নখ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী যা বলেননি তা হলো, আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের বিরম্নদ্ধে কয়টি মামলা হয়েছে, তারেক রহমানের বিরম্নদ্ধে কয়টি মামলা হয়েছে, খালেদা জিয়ার বাড়ি নিয়ে টানাটানি হয়েছে, সরকারী দলের নেতাদের কতগুলো মামলা প্রত্যাহার হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের নতুন দৃষ্টানত্ম হলো প্যারোলে মুক্ত শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী এবং জামিনে মুক্ত খালেদা জিয়া বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে শপথ নিয়েছেন। তিনি বলেন আমরা সবই চাই, অতীতের ভুল ভ্রানত্মি সংশোধন করে সামনে এগোতে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য ইতিহাস আমাদের সে সুযোগ দেয় না। নাম পরিবর্তন করে ইতিহাস পরিবর্তন করা যাবে না বলে তিনি মনত্মব্য করেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারে ভারত সরকারকে শেখ মুজিব বাধ্য করেছিলেন। এটাকে আমরা সফলতা হিসেবে দেখলেও অন্য কেউ দুর্বলতা বা ব্যর্থতা হিসেবে দেখতে পারে। যারা জানে না আমাদের অসত্মিত্ব, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব কোন্ জাতীয়তাবাদী ভিত্তির ওপর টিকে আছে, তাদের দৃষ্টিভঙ্গি অন্য হতে পারে। ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ এবং পঞ্চম সংশোধনীর প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি হাবিবুর রহমান, বিচারপতি কামাল উদ্দিন, ব্যারিস্টার রফিকুল হক, ড. কামাল হোসেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৯৪৭ সালের পর কেন এদেশে এসেছিলেন, কেন থেকে গেছেন। এদেশে না এসে পশ্চিমবঙ্গ বা কুচবিহারে থেকে গেলে এরা উকিলের মুহুরিও হতে পারতেন না মনত্মব্য করে সাকা বলেন, তাঁরাই এখন আমাদের ধর্মনিরপেৰতার জ্ঞান দিচ্ছেন। তাঁরা এদেশে এসে রাষ্ট্রপতি, সেনাপ্রধান, বিচারপতি হয়েছেন উলেস্নখ করে সাকা বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা- সার্বভৌমত্ব সুরৰার দায়িত্ব শুধু আমরা নেব কেন, তাঁদেরও দায়িত্ব নিতে হবে। তিনি বলেন, পঞ্চম সংশোধনীর রায়ে বিচারপতি খায়রম্নল হক যে রায় দিয়েছেন তাতে লেখা আছে, যারা সংবিধান লঙ্ঘন করেছে তাদের বিচার হতে হবে। তাই সংবিধান লঙ্ঘনকারী হিসেবে ফখরম্নদ্দীন আহমদ, মইন উ আহমেদের বিচার করে রায় বাসত্মবায়ন করতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহবান জানান সাকা চৌধুরী।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দা রাজিয়া ফয়েজ বলেন, বাসত্মব কারণেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হয়েছিল। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী মূল্যবোধের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ না করতে পারলে দেশের স্বাধীনতা- সার্বভৌমত্ব রৰা করা যাবে না। সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরম্নল ইসলাম আলমগীর বলেন, বাংলাদেশ এখন অসত্মিত্ব সঙ্কটে আছে। বেশ কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের স্বাধীনতা- সার্বভৌমত্ব নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। এ সময় আমরা যদি জেগে না উঠি তাহলে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রৰা করা যাবে না। এৰেত্রে জাতীয় ঐক্যের কোন বিকল্প নেই। তিনি একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নতুন প্রজন্মকে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করার ওপর গুরম্নত্বারোপ করে বলেন, দেশের বিরম্নদ্ধে যে কোন ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.