শিক্ষা চিন্তা বন্ধুত্ব by জাফরিন গুলশান

শিক্ষা-চিন্তা-বন্ধুতা বিনিময় চমৎকারভাবে দেশকালভেদে মানুষকে আরও অসীম উৎকর্ষের দিকে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনার উৎস জোগান দিয়েছে ঐতিহাসিকভাবে। গত জানুয়ারিতে হয়ে যাওয়া চারুকলা অনুষদ (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), কলাভবন শান্তিনিকেতন (ভারত) শিক্ষা বিনিময় কার্যক্রম দূরবর্তী উদ্দেশ্য সাধনের সফলতা দেখার বিষয় হলেও দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা এবং বাংলাদেশের বিশিষ্ট শিল্পীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত আর্ট ক্যাম্পের চিত্রকর্ম নিয়ে বেঙ্গল গ্যালারি অব ফাইন আর্টসে ১৬ মে থেকে শুরু হয়েছে বিশেষ এক চিত্রকর্ম প্রদর্শনী, যা শিল্পরসিক বোদ্ধা সাধারণ দর্শকের জন্য দারুণ সুযোগ। ভারতীয় ও বাংলাদেশের সমকালীন চিত্রকলা চর্চায় নিয়োজিত বিভিন্ন শিল্পীর মতাদর্শগত ভাষা নিজ নিজ দেশের সামাজিক-সাংস্কৃতিক চর্চার প্রেক্ষাপটে চর্চিত হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে সপ্তাহব্যাপী কর্মশালা-সেমিনারে কলাভবন শান্তিনিকেতনের ১২ জন শিক্ষক অংশ নেন। তিন দিনব্যাপী ছবি আঁকেন বাংলাদেশের নবীন-প্রবীণ শিল্পীদের সঙ্গে। অনুষদের ছাত্রদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ ভাব-মতবিনিময় করেন শিল্পীরা। দুই পর্যায়ে বিভক্ত সেমিনারে বাংলাদেশ ও পশ্চিম বাংলার শিল্পচর্চা বিষয়ে আলোচনা হয়। নন্দলাল বসু, রামকিঙ্কর বেইজ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিত্রকলা, চিত্রচিন্তা নিয়ে সচ্চিত্র উপস্থাপনা হয়। বাংলাদেশের লোকশিল্পচর্চা, মূলধারার সমকালীন বাংলাদেশি শিল্পচর্চা, ঐতিহাসিক অবস্থান ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হয়। সচিত্র উপস্থাপনা করেন নিসার হোসেন, লালারুখ সেলিম, সৌমিক নন্দী মজুমদার, সঞ্জয় মল্লিক ও সঞ্চয়ন ঘোষ। উপস্থাপনার ক্ষেত্রে বিশিষ্ট শিল্পীদের শিল্পকর্মকে প্রশংসামূলকভাবেই উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রচলিত বা ব্যক্তি সমালোচনামূলক কিছু তথ্য উপস্থাপিত হলে উপস্থিত ছাত্রদের জন্য নতুন ভাবনা-প্রশ্ন বিনিময়ের অবস্থা আরও চমৎকার হতো।
গ্যালারিতে প্রদর্শনীর শিল্পকর্মগুলো খুব স্পষ্টভাবেই শিল্পীদের দীর্ঘদিনের চর্চার নিজস্ব দর্শন-কর্মকৌশলের নান্দনিক প্রতিফলন। প্রতিটি ক্যানভাস শিল্পীর স্বকীয়তার আধার। বরেণ্য প্রবীণ শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর বাংলাদেশের লোকজ মোটিফে ইলাস্ট্রেটিভ ধারায় করা কাজ বিশুদ্ধভাবে বাংলাদেশ ও শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীকে উপস্থাপন করে। শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ারের ওয়াশের কাজ দর্শককে সব সময়ই প্রশান্তি দেয়। শিল্পী আবু তাহের, রফিকুননবী, কালিদাস কর্মকার, হাশেম খান, শহীদ কবির, কনকচাঁপা চাকমা ও আমন্ত্রিত ভারতীয় অতিথি শিল্পীদের ক্যানভাসে বিভিন্নতা লক্ষণীয় ভারতীয়পনার ভেতরই। ভারতীয় মিথের নতুন ঢঙে উপস্থাপন কিংবা তাৎক্ষণিক চিন্তায় আঁকা বিষয়, কখনো কিছুটা বিমূর্ততা প্রভৃতি বিষয় ব্যাপকতা পেয়েছে শিল্পীদের রঙে, টেক্সচারে, রেখায়। শিল্পী প্রবীর কুমার বিশ্বাস, শিল্পী নন্দদুলাল মুখার্জি, শিল্পী প্রসূনকান্তি ভট্টাচার্য্য, শিল্পী পঙ্কজ পানওয়ার, শিল্পী দীলিপ মিত্র, শিল্পী সঞ্চয়ন ঘোষ, শিল্পী সুমিতাভ পাল, শিল্পী অর্পণ মুখার্জি, শিল্পী সৌমিক নন্দী মজুমদার, শিল্পী সালিল সাহানী প্রমুখ অংশ নিয়েছেন প্রদর্শনীতে। বাংলাদেশের নবীন-প্রবীণসহ প্রায় ৫০ জন শিল্পীর ৫১টি শিল্পকর্মের প্রদর্শনী চলবে ২১ মে পর্যন্ত।
একদিকে ব্রিটিশ ষড়যন্ত্রে ঘটা বঙ্গভঙ্গের বিষাদময় অতীতবিধুরতার কষ্ট, অন্যদিকে একই মাতৃভাষার অধিকারে আনন্দিত হওয়ার হূদ্যতা শিল্প-শিক্ষা বিনিময় কার্যক্রমের উপরিপাওনা।

No comments

Powered by Blogger.