রাজশাহীকে চ্যালেঞ্জ জানাবে রংপুর?

দিন পাঁচেক আগের ঘটনা। জাতীয় দলের অনুশীলন শেষে মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দী এই প্রতিবেদকের কাছে জানতে চাইলেন, ‘জাতীয় লিগে কি এবার রংপুর বিভাগের আলাদা দল হবে?’
শুধু সোহরাওয়ার্দী নন, রংপুর নতুন বিভাগ হয়ে আত্মপ্রকাশ করার পর থেকে অপেক্ষাটা অনেক ক্রিকেটারেরই ছিল। রংপুর অঞ্চলের খেলোয়াড়েরা এত দিন রাজশাহীর হয়ে জাতীয় লিগে খেলতেন। রংপুর বিভাগ হয়ে যাওয়ার পর আলাদা দলের স্বপ্ন তাঁরা দেখতেই পারেন।
১৯ সেপ্টেম্বর বিসিবির ৩৩তম সভায় স্বপ্ন পূরণ হয়েছে রংপুরের খেলোয়াড়দের। আসন্ন জাতীয় লিগে নতুন দল হিসেবে নাম লেখাচ্ছে রংপুর বিভাগ ও ঢাকা মহানগর। সোহরাওয়ার্দী যেন এর চেয়ে বেশি আনন্দিত আর কোনো কিছুতেই নন, ‘আমরা সবাই অনেক দিন ধরে এমন একটা কিছুরই আশায় ছিলাম। রংপুরে অনেক ভালো ভালো খেলোয়াড় আছে, অথচ তারা প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে খেলতে পারে না।’ এ রকম কয়েকটা উদাহরণও দিলেন জাতীয় দলের এই অলরাউন্ডার, ‘সাজিদ ভাই (পেসার সাজিদুল ইসলাম) জাতীয় দলে খেলেছেন, অথচ গত জাতীয় লিগে খেলতে পারেননি। নাসিরের মতো খেলোয়াড়কে রাজশাহী বসিয়ে রেখেছিল। এসব তো আমাদের ক্রিকেটের জন্যই লজ্জার।’ বঞ্চনার এই ক্ষোভ জাতীয় লিগে রংপুরের বড় শক্তি হবে বলেও বিশ্বাস তাঁর।
সোহরাওয়ার্দী, সাজিদ, নাসিরদের মতো দেশের ক্রিকেটের আরও অনেক পরিচিত মুখ রংপুর থেকেই আসা। নাঈম ইসলাম, ধীমান ঘোষ, শুভাশিস রায়, মাহমুদুল হাসান, আলাউদ্দিন বাবু তাঁদের মধ্যে অন্যতম।
নাঈম ইসলামের বাড়ি গাইবান্ধায়। এত দিন রাজশাহী দলে খেললেও ২০১১-১২ মৌসুমের জাতীয় লিগে তাঁকেও দেখা যাবে রংপুর বিভাগীয় দলে। নাঈমের কথায় আত্মপরিচয় ফিরে পাওয়ার আনন্দ, ‘নিজের এলাকার দলের হয়ে খেলতে পারব, এর চেয়ে ভালো আর কি আছে? আমার বিশ্বাস, রংপুর দলটা খুবই ভালো হবে। ঢাকা লিগের বড় বড় দলে আমাদের ছেলেরা খেলে।’ আনন্দের আতিশয্যে রংপুর বিভাগীয় দলের জন্য একজন কোচের নামও প্রস্তাব করে ফেললেন নাঈম, ‘আমাদের হাসানুজ্জামান রুশো স্যার বিকেএসপির কোচ। কোচ হিসেবে ওনার আরও অভিজ্ঞতা আছে। ওনাকে রংপুরের কোচ করা যেতে পারে।’
১৯ সেপ্টেম্বর সিদ্ধান্ত হলেও রংপুরের জাতীয় লিগে অন্তর্ভুক্তির খবর নাসির হোসেন পেয়েছেন কাল। তিনি এবং রংপুরের আরও অনেকেই নাকি জানতেন রংপুরকে আলাদা দল ঘোষণার সিদ্ধান্ত হয়নি। মাঝে একটা দিন তাই খুবই মন খারাপ ছিল তাঁদের। ‘বলে বোঝাতে পারব না কেমন লাগছে। আমরা তো শুনেছিলাম, রংপুর আলাদা দল হচ্ছে না! সবার খুব মন খারাপ ছিল। এখন তো মনে হয় অনেকে প্র্যাকটিসও শুরু করে দিয়েছে।’ নাসিরই জানালেন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে এখন রংপুর অঞ্চলের ১১-১২ জন ক্রিকেটার খেলছে। গত জাতীয় লিগে রাজশাহী দলের ৮-৯ জন ছিল রংপুর থেকেই।
রাজশাহীর হয়ে খেলে গত জাতীয় লিগের সেরা উইকেটরক্ষক ধীমান ঘোষও আরও অনেকের মতো রংপুর বিভাগের ক্রিকেটার হয়ে যাবেন এখন। তাতে অবশ্য রাজশাহীর খুব একটা সমস্যা হবে বলে মনে হচ্ছে না তাঁর, ‘রংপুর আলাদা দল হওয়ায় আমাদের ভালো হয়েছে, তবে এতে রাজশাহীর শক্তি কমবে না। রাজশাহী চাইলে গত বছর জাতীয় লিগে দুটি দল করতে পারত। রাজশাহীতে অনেক ভালো ভালো ক্রিকেটার মাঠের বাইরে বসে থাকে। তারা এখন সুযোগ পাবে।’
আঞ্চলিকতার টান জাতীয় লিগে রাজশাহীর আধিপত্যের একটা বড় কারণ। ব্যাপারটা রংপুরের ক্রিকেটারদের মধ্যেও আছে বলে বিশ্বাস সোহরাওয়ার্দী-নাঈমদের। দলছুট হয়ে যাওয়ারা কি তাহলে চ্যালেঞ্জই জানাচ্ছেন জাতীয় লিগে গত তিনবারের চ্যাম্পিয়ন রাজশাহীকে? নাসির-ধীমানরা কিন্তু বিশ্বাস করেন, রাজশাহীর আধিপত্য কেড়ে নেওয়া সম্ভব।
রাজশাহীর হয়ে এই ক্রিকেটাররা দীর্ঘদিন খেলেছেন খালেদ মাসুদের অধীনে। রংপুরের খেলোয়াড়দের সামর্থ্যে বিশ্বাস করেন জাতীয় দল ও রাজশাহীর সাবেক এই অধিনায়কও, ‘তারা আমাদের চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে, এটাই হওয়া উচিত। রংপুরের ক্রিকেটাররাও অনেক ভালো, অনেক পরিশ্রমী।’ তবে সোহরাওয়ার্দী-ধীমানরা চলে যাওয়ায় রাজশাহীর ক্ষতি হবে না বলে মনে করছেন মাসুদও, ‘এতে রংপুরের যেমন ভালো হয়েছে, তেমনি রাজশাহীরও। যারা থাকবে না, তাদের মধ্যে এক নাঈম ছাড়া সবারই বিকল্প আছে। রাজশাহীতে অন্তত ২৫ জন সম্ভাবনাময় ক্রিকেটার আছে, যারা প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে খেলতে পারে। রংপুর আলাদা দল হওয়ায় তাদের জন্য দুয়ার খুলে গেল। এমন একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বিসিবিকে ধন্যবাদ।’

No comments

Powered by Blogger.