একের পর এক মার্কিন সরকার ভিয়েতনাম নিয়ে জনগণকে মিথ্যা বলে গেছে

সোমবার প্রকাশিত ভিয়েতনাম যুদ্ধবিষয়ক গোপনীয় সরকারি নথি অনুযায়ী, মার্কিন প্রশাসন দীর্ঘ সময় ধরে ভিয়েতনাম যুদ্ধের ব্যাপারে জনগণকে মিথ্যা তথ্য দিয়েছিল। জাতীয় আর্কাইভ (মহাফেজখানা) আনুষ্ঠানিকভাবে সাত হাজার পৃষ্ঠার ওই গোপন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনটির অংশবিশেষ ৪০ বছর আগে নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। সদ্য প্রকাশিত ৪৭ খণ্ডে সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি অনলাইনে পাওয়া যাবে।
১৯৬৭ সালে প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসনের গঠিত টাস্কফোর্স ভিয়েতনাম যুদ্ধ বিষয়ে ওই প্রতিবেদন প্রণয়ন করে। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের বেশির ভাগ মানুষই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ওই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের বিপক্ষে ছিল।
১৯৭১ সালে প্রতিবেদনটির কিছু অংশ নিউইয়র্ক টাইমস এর কাছে পৌঁছে দেন এক মার্কিন সামরিক বিশ্লেষক। সেখানে দেখা যায়, জনসন প্রশাসন গোপনে যুদ্ধ তীব্রতর করেছে এবং সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে কংগ্রেসের কাছে মিথ্যা বলেছে। একাধিক সরকার এ মিথ্যাচার অব্যাহত রেখেছিল।
পরবর্তী সময়ে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন প্রতিবেদনটির প্রকাশ আটকে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। ওই চেষ্টার ধারাবাহিকতায় আদালত একটি যুগান্তকারী রায় দেন। ওই রায়ে সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যাপারে অনুসন্ধানে গণমাধ্যমকে আরও ক্ষমতা দেন।
প্রেসিডেন্ট নিক্সন শেষ পর্যন্ত ‘পেন্টাগন পেপার্স’ নামে পরিচিত ওই প্রতিবেদনের প্রকাশ রুখতে ব্যর্থ হন। একপর্যায়ে এর বেশির ভাগ ফাঁস হয়ে গেলেও তা এতদিন গোপনীয় বলে বিবেচিত হতো।
‘পেন্টাগন পেপার্স’ ভিয়েতনামে দৃশ্যত পদে পদে মার্কিননীতির ব্যর্থতা তুলে ধরেছিল। এর একটি ছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত ভিয়েতনামের পল্লি অঞ্চলের মানুষকে সন্তুষ্ট করার জন্য ‘স্ট্র্যাটেজিক হ্যামলেট প্রোগ্রাম’ নামে এক কর্মসূচি। এর আওতায় সামরিক অভিযানের পাশাপাশি নির্মাণ প্রকল্প, অর্থনৈতিক সহায়তা ও অন্যত্র পুনর্বাসনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র অতীত থেকে শিক্ষা নেয়নি। কারণ গ্রামের কৃষকেরা যে তাঁদের জীবনযাত্রার বদল মেনে নেবেন না, তা তারা বিবেচনায় নেয়নি।
রুশ-মার্কিন স্নায়ুযুদ্ধের উত্তুঙ্গ সময়ে ১৯৫৫ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ভিয়েতনাম যুদ্ধ চলে। যুদ্ধটি হয় তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন-সমর্থিত ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট-উত্তর ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তাপুষ্ট দক্ষিণের মধ্যে। যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সমাজতন্ত্রের বিস্তার রোধের কৌশল হিসেবে এ যুদ্ধে লিপ্ত হয়।
১৯৭১ সালে প্রতিবেদনটির অংশবিশেষ নিউইয়র্ক টাইমসসহ অন্য কয়েকটি পত্রিকা কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেন এর অন্যতম প্রণেতা সামরিক বিশ্লেষক ড্যানিয়েল এলসবার্গ। এ ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের অন্যতম প্রধান গোমর ফাঁকের ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়।
এলসবার্গ সোমবার তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, প্রকাশিত সম্পূর্ণ প্রতিবেদন থেকে নতুন বড় ধরনের কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। বার্তা সংস্থা এপিকে তিনি বলেন, সরকারিভাবে প্রতিবেদন প্রকাশের তাৎপর্য হলো, পুরো প্রতিবেদনটি একসঙ্গে পাওয়া যাবে। আর প্রতিবেদনটি অনলাইনে রাখায় নতুন প্রজন্ম বিষয়টি সম্পর্কে সহজে জানতে পারবে।

No comments

Powered by Blogger.