এক দিন চাঙাভাবের পর ফের দরপতন শেয়ারবাজারে

দেশের পুঁজিবাজারে গতকাল মঙ্গলবার আবার দরপতন ঘটেছে। আগের দিন সোমবার হরতালের মধ্যেও দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জে মূল্যসূচকের উল্লম্ফন ঘটে। কিন্তু গতকাল আবার তা কমে গেছে। এর ফলে চলতি সপ্তাহের তিন কার্যদিবসের মধ্যে দুই দিনই শেয়ারবাজারে দরপতনের ঘটনা ঘটল।
দুই দিনের হরতালের পর গতকাল ছিল স্বাভাবিক কার্যদিবস। এদিন আগের দুই দিনের তুলনায় ব্রোকারেজ হাউসগুলোতে বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতিও ছিল কিছুটা বেশি।
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) গতকাল সাধারণ মূল্যসূচক আগের দিনের চেয়ে ৮৭ পয়েন্ট কমেছে। আর চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক কমেছে ২২০ পয়েন্ট।
ঢাকার বাজারে গতকাল সূচকের ঊর্ধ্বগতি দিয়ে লেনদেন শুরু হয়েছিল। লেনদেন শুরুর প্রথম ১০ মিনিটের মধ্যেই সাধারণ সূচক আগের দিনের চেয়ে ৭১ পয়েন্ট বেড়ে যায়। এর পরই শুরু হয় পতন। বেশ কয়েক দফা সূচকের উত্থান-পতন ঘটলেও দিন শেষে তা কমে দাঁড়ায় পাঁচ হাজার ৮১৭ পয়েন্টে।
দুই বাজারেই লেনদেন হওয়া বেশির ভাগ শেয়ারের দাম কমেছে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা-সংকটের কারণে বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অভিমত। তাঁদের মতে, বিনিয়োগকারীদের পুরোপুরি আস্থা ফিরে না আসা পর্যন্ত বাজার স্থিতিশীল হবে না।
যোগাযোগ করা হলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে বাজারে আস্থার সংকট বিরাজ করছে। এর ফলে বড় বিনিয়োগকারীরা বাজার থেকে দূরে রয়েছেন। তাই বাজারে অর্থপ্রবাহ কমে গেছে। এ ছাড়া মুদ্রাবাজারে সুদের হার বেশি হওয়ায় অনেকে সেদিকে ঝুঁকছেন।
আবু আহমেদের মতে, ২০১১-১২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শেয়ারবাজার বিষয়ে কিছু নীতি-সহায়তা ঘোষণা করা দরকার ছিল। কিন্তু সেটি করা হয়নি। তাই বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে।
এদিকে বেশ কয়েক দিন ধরে বাজারে গুজব রয়েছে, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তাদের ন্যূনতম শেয়ার ধারণসংক্রান্ত একটি নীতিমালা করা হচ্ছে। এ খবরে যেসব কোম্পানিতে উদ্যোক্তাদের শেয়ারের অংশ কম, সেসব কোম্পানির প্রতি বিনিয়োগকারীরা বেশি ঝুঁকছেন।
ডিএসইতে গতকাল ২৫১টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়। এর মধ্যে ২১৯টিরই দাম কমেছে, বেড়েছে ২৪টির আর অপরিবর্তিত ছিল আটটি কোম্পানির শেয়ারের দাম। তবে দিন শেষে স্টক এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন বেড়েছে। গতকাল ডিএসইতে ৬০৬ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়, যা আগের দিনের চেয়ে ৩৯ কোটি টাকা বেশি।
খাতওয়ারি লেনদেন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঢাকার বাজারে তালিকাভুক্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সিমেন্ট ও সিরামিক খাতের সব কটি কোম্পানিরই দাম কমেছে। এ ছাড়া ব্যাংকিং খাতের ৩০টির মধ্যে ২৪টির, প্রকৌশল খাতের ২৩টির মধ্যে ২০টির, খাদ্য খাতের ১৫টির মধ্যে ১২টির, জ্বালানি খাতের ১২টির মধ্যে ১১টির, বিমা খাতের ৪৪টির মধ্যে ৪২টির, ওষুধ খাতের ২০টির মধ্যে ১৮টির, বস্ত্র খাতের ২৫টির মধ্যে ২১টির ও টেলিযোগাযোগ খাতের একমাত্র প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোনের শেয়ারের দাম কমেছে।
সিএসইতে লেনদেন হওয়া ১৮৯টি কোম্পানির মধ্যে ১৫৫টিরই দাম কমেছে। বেড়েছে ২৮টির আর অপরিবর্তিত ছিল ছয়টি কোম্পানির শেয়ারের দাম। চট্টগ্রামের বাজারে দিন শেষে ৮৮ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়, যা আগের দিনের চেয়ে ছয় কোটি টাকা কম।

No comments

Powered by Blogger.