লিবিয়ার বিদ্রোহীদের রসদ সহায়তা দেবে যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্র লিবিয়ার বিদ্রোহীদের জন্য আড়াই কোটি মার্কিন ডলারের রসদ সহায়তা পাঠাবে। লিবিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর বেনগাজিভিত্তিক ট্র্যানজিশনাল ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের কাছে এই রসদ পাঠানো হবে। বিদ্রোহীরা এই কাউন্সিল গঠন করেছে।
লিবিয়ার বিদ্রোহীরা গতকাল বৃহস্পতিবার তিউনিসিয়া সীমান্তের কাছে ওয়াজিন বর্ডার পোস্ট দখল করে নিয়েছে। লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলির কাছে গাদ্দাফি বাহিনীর দুটি ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে মার্কিন জেট বিমান। এতে স্থাপনা দুটি ধ্বংস হয়ে গেছে।
গত বুধবার মিসরাতায় যুদ্ধের খবর ও ছবি সংগ্রহ করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের দুই ফটোসাংবাদিক নিহত হয়েছেন। এদিকে, ন্যাটো এক বিবৃতিতে গাদ্দাফি বাহিনী বা তাদের সামরিক স্থাপনা থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকার জন্য লিবিয়ার বেসামরিক জনগণকে সতর্ক করে দিয়েছে। বেসামরিক জনগণের প্রাণহানি এড়াতেই এই সতর্কতা বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। গত বুধবার রাতে ন্যাটোর হামলায় ত্রিপোলির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সাতজন বেসামরিক নাগরিক নিহত ও ১৮ জন আহত হয়। এরপর ন্যাটোর সদর দপ্তর থেকে এই বিবৃতি দেওয়া হলো।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন গত বুধবার জানান, বিদ্রোহীদের অস্ত্র খাতে সহযোগিতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়নি। রসদ ও খাবারের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ তহবিল থেকে মানবিক সহযোগিতার অংশ হিসেবে আড়াই কোটি ডলার পাঠানো হচ্ছে। জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী লিবিয়ার বেসামরিক জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
হিলারি জানান, প্রাথমিকভাবে চিকিৎসার সরঞ্জাম, পোশাক, তাঁবু, বেতার যোগাযোগযন্ত্র এবং খাবার সরবরাহ করা হবে। অধিকাংশ রসদ-সামগ্রী পেন্টাগনের বর্তমান মজুদ থেকে সরাসরি পাঠানো হবে।
হোয়াইট হাউস থেকে লিবিয়ার বিদ্রোহীদের সহযোগিতা-সংক্রান্ত একটি বিবরণী ইতিমধ্যে লিখিতভাবে কংগ্রেসকে জানানো হয়েছে।
পশ্চিমা দেশগুলো লিবিয়ায় বিদ্রোহীদের সরাসরি সহায়তা করছে। ন্যাটোর সামরিক পদক্ষেপের পাশাপাশি যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও ইতালি বিদ্রোহীদের কাছে তাদের সামরিক উপদেষ্টা পাঠিয়েছে। ফ্রান্স ও ইতালি ইতিমধ্যে বিদ্রোহীদের ট্র্যানজিশনাল ন্যাশনাল কাউন্সিলকে লিবিয়ার সরকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
হোয়াইট হাউস থেকে জানানো হয়, বিদ্রোহীদের সরাসরি অস্ত্র সরবরাহ বা গাদ্দাফিবিরোধী অভিযানে মার্কিন সেনা পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনার মধ্যে রয়েছে।
বার্তা সংস্থা এএফপির একজন প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক জানান, বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে সাতটার দিকে তিউনিসিয়া সীমান্তের কাছে ওয়াজিন বর্ডার পোস্টে গাদ্দাফি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের সংঘর্ষ হয়। বিদ্রোহীদের হামলার মুখে টিকতে না পেরে গাদ্দাফি বাহিনীর দেড় থেকে ২০০ সেনা তিউনিসিয়ায় পালিয়ে যায়। পরে বিদ্রোহীরা ফাঁকা গুলি ছুড়ে উল্লাস করে।
মিসরাতায় গত বুধবার গাদ্দাফি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের যুদ্ধের খবর ও ছবি সংগ্রহ করতে গিয়ে মর্টার হামলায় ব্রিটিশ ফটোসাংবাদিক টিম হেটেরিংটন নিহত হয়েছেন। একই ঘটনায় ওয়াশিংটনভিত্তিক ফটো এজেন্সি গেটি ইমেজের ফটোসাংবাদিক ক্রিস হন্ড্রোস নিহত হন। কয়েকজন ফটোসাংবাদিক বিদ্রোহীদের সঙ্গে মিসরাতার কেন্দ্রস্থলের একটি সড়কে যান। সেখানে যুদ্ধের ভয়াবহতার ছবি সংগ্রহই ছিল তাঁদের উদ্দেশ্য। এ সময় মর্টার হামলায় টিম ও ক্রিস নিহত হন। আহত হন প্যানোস ফটো এজেন্সির গাই মার্টিন ও করবিস ইমেজের মাইকেল ক্রিস্টোফার ব্রাউন।
ভ্যানিটি ফেয়ার সাময়িকীর ফটোসংবাদিক টিম হেটেরিংটন ডকুমেন্টারি ফিল্ম রেস্ট্রেপোর জন্য ২০১০ সালে সানডেন্স চলচ্চিত্র উৎসবে গ্র্যান্ড জুরি পুরস্কার পান।

No comments

Powered by Blogger.