আগামী অর্থবছরে দেশে মূল্যস্ফীতি বাড়বে, ভর্তুকি কমবে: অর্থমন্ত্রী

২০১১-১২ অর্থবছরে বৈদেশিক সাহায্য অনেক বেশি আসবে বলে আশাবাদের কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, অনেকেই বলছেন যে বৈদেশিক সাহায্য কমে গেছে। ব্যাপারটি মোটেও তা নয়। সাহায্য বরং বেড়ে গেছে, খরচ করা যাচ্ছে না।
এ বছরের সাহায্যের পরিমাণ ৩০০ কোটি ডলারের কথা উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী আরও ৯০০ কোটি ডলার ছাড়ের অপেক্ষায় (পাইপলাইন) আছে বলেও জানান।
এ ছাড়া আগামী বাজেটে বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল ও কৃষি খাতে ভর্তুকি কমতে পারে ইঙ্গিত দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিবছর ভর্তুকি দিয়ে যাওয়া অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর।’
চলতি অর্থবছরের বাজেটে এক লাখ ৩১ হাজার ১৭০ কোটি টাকার মধ্যে এক লাখ ২৮ হাজার বা ২৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। এই তথ্য উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী আরও জানান, আগামীতে বার্ষিক মূল্যস্ফীতির হার ৮ শতাংশের কাছাকাছি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সঙ্গে অনুষ্ঠিত প্রাক্-বাজেট আলোচনায় অর্থমন্ত্রী এসব কথা জানান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান, অর্থসচিব মোহাম্মদ তারেক, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন আহমেদ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শফিকুর রহমান পাটোয়ারী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ইআরএফের সভাপতি মনোয়ার হোসেন ইআরএফের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবু কাওসারসহ বিভিন্ন পত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার অর্থনৈতিক প্রতিবেদকেরা আলোচনায় অংশ নেন।
বৈদেশিক সাহায্য প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘চলতি বছরেও যে টাকা আছে, তার পুরোটা ব্যবহার করতে পারব না। সাহায্যের তুলনায় খরচের হার এবার গতবারের চেয়ে কম হবে।’
বিদেশি সম্পদকে বিনিয়োগে নিয়ে আসার ওপর গুরুত্বারোপ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামীতে বিদেশি পয়সা অনেক ব্যবহার করতে হবে।
চলতি অর্থবছরে বার্ষিক মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশ এবং এর আগেরবার তা ৬ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হয়েছিল উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১১-১২ অর্থবছরে তা কিছুটা বাড়তে পারে। তবে মূল্যস্ফীতি সত্ত্বেও অর্থনীতির সার্বিক অবস্থা ভালো। কারণ হিসেবে তিনি বিনিয়োগ, রাজস্ব আহরণ ও রপ্তানি বৃদ্ধির কথা জানান।
সভায় সাংবাদিকেরা দারিদ্র্য দূরীকরণ ও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বাড়ানো, ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য হ্রাসে উদ্যোগ গ্রহণ, দামি মোবাইল সেট ও কম দামি সিগারেটে কর বাড়ানো, যানজট কমাতে সিএনজি ও গাড়ির ওপর কর বৃদ্ধি এবং শুল্কায়নে প্রাক্-জাহাজীকরণ পরিদর্শন (পিএসআই) পদ্ধতি বাতিলের পরামর্শ দেন।
সভায় সাংবাদিকেরা আরও যেসব পরামর্শ দেন তা হলো—রমজান মাসের পরিবর্তে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (টিসিবি) বছরব্যাপী সচল রাখা, বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ, বাজেট বাস্তবায়ন দক্ষতা বাড়াতে বাস্তবায়ন মন্ত্রণালয় নামে নতুন মন্ত্রণালয় গঠন, এনবিআরের সাংগঠনিক কাঠামোতে পরিবর্তন আনা, স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করা, আবাদি জমি কমে যাওয়া রোধে ব্যবস্থা নেওয়া, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির দীর্ঘ পরিকল্পনা গ্রহণ, জেলা বাজেট এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারি (পিপিপি) বাস্তবায়ন।
অর্থমন্ত্রী এ এম এ মুহিত বলেন, ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত নিয়ে এবার পথ-নকশা দিয়েছিলাম। আগামীবার এর অগ্রগতি প্রতিবেদন দেব।’
পিপিপি প্রসঙ্গে অনেক ক্ষেত্রে সম্ভাব্যতা যাচাই হয়নি বলে উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী। নতুন মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আইন আগামীতে হবে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, মূসক আইন হবে। তবে আয়কর আইন হবে না। এটি আরও দেরি হবে।

No comments

Powered by Blogger.