সুদের হার বেড়ে চলায় এফবিসিসিআই উদ্বিগ্ন



ব্যাংকঋণের ওপর আরোপিত সুদের হারের সর্বোচ্চ সীমা ১৩ শতাংশ প্রত্যাহার করায় আকস্মিকভাবে সুদের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নগদ অর্থ প্রবাহে টান পড়ায় উচ্চ মার্জিনে ঋণপত্র (এলসি) খোলা এবং বৈদেশিক মুদ্রার সংকট।
এই ত্রিমুখী সংকটের প্রভাবে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য তথা বিনিয়োগ পরিবেশ ক্রমেই স্থবির হয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কায় প্রকাশ করেছে দেশের ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই)।
এফবিসিসিআই মনে করে, ব্যাংকঋণের ওপর আরোপিত সুদের হারের সর্বোচ্চ সীমা প্রত্যাহার করায় আমদানি ও রপ্তানি ব্যয় বাড়বে। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয়সহ সব ধরনের পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাবে, যা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করবে বলে সংগঠনটি আশঙ্কা প্রকাশ করছে।
একই সঙ্গে দেশের ব্যবসা-বণিজ্যের স্বার্থে এফবিসিসিআই আগামীকাল সোমবারের সকাল-সন্ধ্যা হরতাল প্রত্যাহারের জন্য আহ্বান জানিয়েছে।
গতকাল শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এফবিসিসিআই এসব দাবি জানিয়েছে।
এফবিসিসিআই বলছে, উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগের জন্য ব্যাংকঋণের সুদের হার সর্বোচ্চ ১৩ শতাংশ ধার্য করা হয়েছিল। কিন্ত গত ৯ মার্চ ২০১১ তারিখে এ সীমা প্রত্যাহার করায় বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকঋণ প্রদানের জন্য সুদের হার ১৬ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত নির্ধারণ করছে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানসমূহ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনটি আরও বলেছে, সুদের হার বৃদ্ধি, অপ্রতুল মুদ্রা সরবরাহ ও বৈদেশিক মুদ্রাসংকটজনিত সমস্যা জরুরি ভিত্তিতে নিরসন করা না হলে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় গৃহীত বিনিয়োগ ও বাড়তি কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে না। এ ছাড়া আমদানি ও রপ্তানি ব্যয় বৃদ্ধি পাবে, যা আবার নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ঘটাবে।
এফবিসিসিআই অনতিবিলম্বে আগের মতো ব্যাংকঋণের সুদের হারের সর্বোচ্চ সীমা আরোপ এবং শিল্প তথা উৎপাদনশীল খাতে ব্যাংকঋণের হার প্রতিযোগী দেশসমূহে বিদ্যমান সুদের হারের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ করে এক অঙ্কে (সিঙ্গেল ডিজিট) নামিয়ে আনার প্রস্তাব করছে।
হরতাল প্রত্যাহার করুন: দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও ব্যবসা-বণিজ্যের স্বার্থে এফবিসিসিআই আগামীকালের সকাল-সন্ধ্যা হরতাল প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে। ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটি নারী নীতির বিরুদ্ধে এই হরতাল ডেকেছে।
এফবিসিসিআই মনে করে, সরকার প্রস্তাবিত নারীনীতিতে একজন নাগরিক হিসেবে সংবিধানে বর্ণিত নারীর যে অধিকার সংরক্ষিত আছে তার কথা তুলে ধরা হয়েছে। প্রস্তাবিত নারীনীতিতে নারীর সম্পদ অর্জন, ব্যবসা-বাণিজ্য, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নাগরিক হিসেবে তার অধিকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। আবার সরকারের দিক থেকে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, কোরআন-সুন্নাহিবরোধী কোনো আইন সরকার প্রণয়ন করেনি এবং ভবিষ্যতেও এ ধরনের কোনো আইন প্রণয়ন করা হবে না। প্রকৃত অর্থে নারীনীতি একটি লিখিত নীতিমালা, যা কোনো আইন নয়, বরং সংবিধানে প্রদত্ত নারীর মর্যাদায় দিকনির্দেশনার প্রকাশমাত্র।
এফবিসিসিআই আরও বলেছে, যেহেতু বিষয়টি সম্পর্কে অস্বচ্ছতার কিছুই নেই এবং সর্বমহলে সরকারের ব্যাখ্যাটি গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছে, সেহেতু এ ইস্যুতে হরতাল আহ্বান অযৌক্তিক। এ ছাড়া দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সব সময় হরতাল ও নৈরাজ্যের বিরোধী। এফবিসিসিআই মনে করে, জাতীয় অর্থনীতি এবং দেশের সার্বিক ব্যবসা-বাণিজ্য কর্মকাণ্ড সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে ব্যবসায়ী সমপ্রদায় জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সবার মতৈক্য কামনা করে।

No comments

Powered by Blogger.