রোমাঞ্চের নগর মুম্বাই

মুম্বাই বিশ্বব্যাপী খ্যাত বাণিজ্যনগর হিসেবে। ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী। কাল হয়তো সেরা বাণিজ্যটাই দেখল এই নগর। তবে তা কোনো পণ্য বেচাকেনার বাণিজ্য নয়, ক্রিকেটীয় বাণিজ্য। অন্যকিছুই নয়, সবার মুখে ছিল একটাই কথা, ‘জয় হো ইন্ডিয়া।’
রুদ্ধশ্বাস ফাইনাল দেখার জন্য আগেই সরকারি অফিসগুলোয় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় ছুটি ঘোষণা করা না হলেও দুপুরের আগেই প্রায় শূন্য হয়ে যায়। দু-চারজন যাঁরাও বা ছিলেন, মন ছিল ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে, টেলিভিশনের পর্দায়। হেডফোন ছিল দুই কানে।
রোমাঞ্চিত সমর্থকদের কেউ কেউ খেলা শুরুর আগেই ভারতের পক্ষে ফল দেখে ফেলেছিলেন। কেউ কেউ তো ঘোষণা দিয়েই রেখেছেন, লিটল মাস্টার শচীন টেন্ডুলকার এই ম্যাচেই কাঙ্ক্ষিত সেঞ্চুরিটি করবেন। ‘আমরা সবাই চাই, শচীন তাঁর শততম সেঞ্চুরিটি করুক এবং ম্যাচটি একপেশে করে জিতিয়ে দিক’—বললেন সুনীল ভাবে নামের একজন অপেশাদার ক্রিকেটার। শচীনের এটা শেষ বিশ্বকাপ বলেই ট্রফিটা তাঁর পাওয়া উচিত, মুম্বাইয়ের এই যুবক তা মনে করলেও তাঁর দুশ্চিন্তা অন্য জায়গায়, ‘প্রায়ই দেখা যায়, শচীন সেঞ্চুরি করেছে কিন্তু দল হেরেছে। তাই শচীন ৯৯ রানে আউট হওয়ার পরও ভারত যদি শ্রীলঙ্কাকে হারায়, তাতে আমি কিছুই মনে করব না।’
ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিতিন নিজেকে ভাগ্যবান মনে করতেই পারেন। ফাইনালে স্টেডিয়ামের হসপিটালিটি অংশে দায়িত্ব পেয়ে পুলকিত তিনি, ‘আমার বন্ধুরা হিংসায় পুড়ছে। শচীনকে দেখার সুযোগ পেয়েই আমি খুশি। আমি অবশ্যই চাইব ভারত জিতুক। তবে তারা হেরে গেলেও আমার কোনো অভিযোগ থাকবে না।’
নিতিনের মনে ভারতের জয় নিয়ে কিছুটা সংশয় থাকলেও পানবিক্রেতা কানাইয়ালাল তিওয়ারি কিন্তু শতভাগ নিশ্চিত, ‘অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তানকে হারানোর পর ভারতের কাছে শ্রীলঙ্কার পাত্তাই পাওয়া উচিত নয়। বীরেন্দর শেবাগ ২০ ওভার পর্যন্ত ব্যাট করতে পারলে শ্রীলঙ্কা জেতার কথাই ভুলে যাবে।’ ফাইনালকে সামনে রেখে বিহার থেকে ব্যবসা করতে এসেছেন তিওয়ারি। তবে নিরাপত্তাজনিত কারণে ব্যবসা করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে শঙ্কিত, ‘অনেক লোক আসছে। ব্যবসা ভালো হওয়ারই কথা। কিন্তু পুলিশ সম্ভবত স্টেডিয়ামে আশপাশে আমাদের ভিড়তে দেবে না।’ ভারত জিতলে ব্যবসায় ক্ষতি হলেও খুশি তিওয়ারি, ‘ভারত জিতলে এই ক্ষতিতে আমার কিছুই আসে-যায় না।’
মুম্বাই বিশ্বখ্যাত তার চলচ্চিত্রশিল্পের জন্য, যেটির নাম বলিউড। আর বলিউডের চিত্রনায়ক আমির খান ছিলেন ওয়াংখেড়ের ৩৩ হাজার দর্শকের একজন। অস্কার মনোনয়নপ্রাপ্ত লগান ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র ভুবনের ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি। এই ভুবনই একটি ক্রিকেট ম্যাচে তাঁর দলকে জিতিয়েছিলেন ইংরেজদের বিপক্ষে। কাল কি ভারতের জয় দেখেছেন আমির খান? ওয়েবসাইট।

No comments

Powered by Blogger.