কালোবাজারে গরিবের চাল-গম

চালের দাম দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ক্রয়ক্ষমতার বাইরে থাকায় সরকার এমন কিছু উদ্যোগ নিয়েছে, যাতে তারা কম দামে চাল ও গম পেতে পারে। সরকারের এই উদ্যোগ সব মহলে প্রশংসা পেয়েছে এবং দরিদ্র জনগণ এতে উপকৃত হচ্ছে। কিন্তু এ ধরনের উদ্যোগে যেসব দুর্বলতা থাকে, তার কিছু নজির পাওয়া গেছে। সম্প্রতি কিশোরগঞ্জের তাড়াইল, মৌলভীবাজার ও কুলাউড়ায় গরিবের জন্য বরাদ্দ করা চাল-গম কালোবাজারে বিক্রির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনাগুলোকে উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। কারণ এ ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকলে যে উদ্দেশ্যে সরকার কাজটি করছে, তা ব্যাহত হবে।
গরিবদের জন্য কম দামে চাল-গম বিক্রির অর্থ হচ্ছে, সরকার তাতে ভর্তুকি দিচ্ছে। সেই চাল-গম কালোবাজারে বিক্রির অর্থ হচ্ছে সরকারের ভর্তুকির অর্থ গরিবের লাভে না এসে ডিলার বা ব্যবসায়ীদের পেটে যাওয়া। কিশোরগঞ্জ ও মৌলভীবাজার বা কুলাউড়ায় এমন ঘটনাই ঘটেছে। আশার কথা, গরিবের চাল-গম কালোবাজারে বিক্রির এই ঘটনাগুলো উদ্ঘাটিত হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দায়ী ডিলারদের জেল-জরিমানা করা হয়েছে, ডিলারশিপ বাতিল হয়েছে, দোকান সিলগালা করা হয়েছে, মামলাও দায়ের হয়েছে। গরিবদের কাছে কম দামে চাল-গম পৌঁছানোর এই কার্যক্রম যেহেতু দেশজুড়ে বিস্তৃত, তাই আরও অনেক স্থানে এ ধরনের অনিয়মের আশঙ্কা রয়েছে।
এই ঘটনাগুলো এ ব্যাপারে সতর্কতা ও নজরদারির প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি তুলে ধরেছে। যেসব স্থানে গরিবদের জন্য খোলাবাজারে বিক্রি (ওএমএস) বা হতদরিদ্রদের জন্য ফেয়ার প্রাইস কার্ডের মাধ্যমে চাল-গম বিক্রির কার্যক্রম চলছে, এমন প্রতিটি ক্ষেত্রে তাই নিয়মিত নজরদারি নিশ্চিত করা জরুরি। আর কোথাও কোনো অনিয়ম ধরা পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা গেলে এ ধরনের প্রবণতা কমে আসবে।
প্রসঙ্গক্রমে আরও একটি বিষয়ের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা প্রয়োজন মনে করছি। সরকার হতদরিদ্রদের কাছে কম মূল্যে চাল-গম বিক্রির জন্য যে ফেয়ার প্রাইস কার্ড বিতরণ করছে, তাতে রাজনৈতিক বিবেচনায় কার্ড বিতরণের অভিযোগ রয়েছে। হতদরিদ্রদের সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে এ ধরনের প্রবণতা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।

No comments

Powered by Blogger.