জহির সেই বৃত্তেই

কাল মাঠে নামার সময় তাঁর ক্যারিয়ারের পরিসংখ্যানে ছিল অদ্ভুত এক ঘটনাচক্র। টেস্টে জহির খানের উইকেটসংখ্যা ২৭১, ওয়ানডেতেও তা-ই। এই তথ্য জহির কি জানতেন? না জানা থাকলেও তাঁর মাথায় নিশ্চয়ই ছিল ২০০৩ বিশ্বকাপের সেই দুঃস্মৃতি। যেদিন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তাঁর করা প্রথম ওভারটি অনেকেরই মতে ভাগ্য গড়ে দিয়েছিল ম্যাচের।
‘নার্ভাস’ জহিরের প্রথম বলটাই ছিল ‘নো’। পরেরটি ডট। পরের বলটি আবারও নো! সেটা থেকে অ্যাডাম গিলক্রিস্ট নিলেন ২ রান। পরের বলে এক। তৃতীয়, চতুর্থ বৈধ ডেলিভারি দুটো ডট। ভালো দুটি বলের পর বিশাল এক ওয়াইড, উইকেটরক্ষক রাহুল দ্রাবিড়ের পক্ষে সম্ভব হলো না বলটি ধরা। গড়িয়ে গড়িয়ে সীমানা পার। ওয়াইড আর চার মিলিয়ে ৫ রান। পরের বলে হেইডেনের ব্যাট থেকে চার। পরের বলটি আবার ওয়াইড। শেষ বলটি ডট। প্রথম ওভারেই আটটি অতিরিক্ত রান!
নড়বড়ে সেই শুরুর ধাক্কা ভারত সামলে উঠতে পারেনি। প্রথমে ব্যাট করে ২ উইকেটে ৩৫৯ রান করেছিল অস্ট্রেলিয়া। সেদিনের ফাইনালে ৭ ওভারে ৬৭ রান দিয়ে উইকেটশূন্য ছিলেন জহির।
কাল শুরু থেকেই মনে হলো, সেই স্মৃতি জহিরের গলায় অদৃশ্য তাবিজ হয়ে ঝুলছে। জহির যেন প্রেরণা খুঁজে নিয়েছেন সেই ম্যাচ থেকেই। প্রথম যে তিনটি ওভার জহির করলেন, তিনটিই মেডেন! ২০০৩ বিশ্বকাপে প্রথম তিন ওভারে জহির দিয়েছিলেন ২৮ রান!
চমকের শেষ সেখানেই নয়। নিজের ১৯তম বলে জহির তুলে নিলেন উপুল থারাঙ্গাকে। প্রথম রানটি দিলেন ২০তম বলে। ওই ওভারে আর একটি রান। প্রথম স্পেলে নিজের শেষ ওভারটাই হলো সবচেয়ে ‘খারাপ’। দিলেন ৪ রান। সব মিলে প্রথম স্পেলে জহিরের বোলিং বিশ্লেষণ: ৫-৩-৬-১। ইকোনমি রেট ১.২০!
২০০৩ জোহানেসবার্গ-দুঃস্বপ্নের কবর জহির দিতে চলেছেন বলেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু না, জহির শেষ পর্যন্ত সেই বৃত্তেই আটকে গেলেন। প্রথম ৫ ওভারে মাত্র ৬ রান দেওয়া বোলারটি শেষ ৫ ওভারে দিলেন ৫৪! এর মধ্যে তাঁর করা ইনিংসের ৪৮ ও ৫০তম ওভার দুটোতেই এল ৩৫ রান। শেষ পর্যন্ত ১০ ওভারে ৬০ রান, মাথা নিচু করেই ফিরলেন জহির খান!

No comments

Powered by Blogger.