যুক্তরাষ্ট্র-দ. কোরিয়ার সামরিক মহড়া উপদ্বীপকে যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেবে

উত্তর কোরিয়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন যৌথ সামরিক মহড়া এ অঞ্চলকে যুদ্ধের মুখে ঠেলে দেবে। উত্তর কোরিয়াকে লক্ষ্য করেই এ মহড়া চালানো হবে বলে পিয়ংইয়ং অভিযোগ করেছে।
এদিকে উত্তর কোরিয়া গতকাল শুক্রবার দক্ষিণ কোরিয়ার সীমান্তের কাছে গোলা নিক্ষেপের মহড়া চালিয়েছে। এতে আতঙ্কে দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়নপিয়ং দ্বীপের বাসিন্দারা ঘরবাড়ি ছেড়ে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া বলেছে, তারা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে সাবেক সেনাপ্রধান কিম কোয়ান জিনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। কিম সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী কিম তায়ে-ইয়ংয়ের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন। উত্তর কোরিয়ার গোলা হামলার জবাব যথাযথভাবে দিতে না পারার দায় নিয়ে কিম তায়ে-ইয়ং ঘটনার দুই দিন পর গত বৃহস্পতিবার পদত্যাগ করেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে চার দিনব্যাপী নৌ-মহড়ায় অংশ নিতে মার্কিন রণতরী ‘ইউএসএস জর্জ ওয়াশিংটন’ পীত সাগরের উদ্দেশে রওনা হয়েছে। কাল রোববার কোরীয় উপকূলের পশ্চিমাংশে এ মহড়া শুরু হওয়ার কথা।
উত্তর কোরিয়ার সরকারি বার্তা সংস্থা কেসিএনএ বলেছে, উত্তর কোরিয়াকে লক্ষ্য করে দক্ষিণ কোরিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের বেপরোয়া সামরিক মহড়ার পরিকল্পনা এ অঞ্চলকে যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
এর আগেও দক্ষিণ কোরিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক মহড়ার সময় উত্তর কোরিয়া একই ধরনের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে। তবে এবার এ মহড়া ঠেকাতে পিয়ংইয়ংয়ের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি না, সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। উত্তর কোরিয়ার বড় মিত্র বলে পরিচিত চীনও আগেকার মহড়াগুলোর সমালোচনা করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের এ সামরিক মহড়া আত্মরক্ষামূলক। তা ছাড়া উত্তর কোরিয়ার ‘উসকানিমূলক’ গোলা ছোঁড়ার আগেই এ মহড়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে ওয়াশিংটন প্রতিরোধব্যবস্থার মাধ্যমে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় বদ্ধপরিকর।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র জানান, গতকাল দুপুর থেকে বেলা তিনটার মধ্যে সীমান্তবর্তী এলাকায় বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি, উত্তর কোরিয়া গোলা নিক্ষেপের মহড়া চালিয়েছে।’ সামরিক সূত্র জানিয়েছে, সীমান্তবর্তী এলাকায় এ মহড়ার সময় অন্তত ২০টির মতো গোলা দক্ষিণ কোরিয়ার অংশে বিস্ফোরিত হয়েছে। এ ঘটনায় ইয়নপিয়ং দ্বীপের যেসব মানুষ এখনো মূল ভূখণ্ডে যায়নি, তারা আতঙ্কে ঘর ছেড়ে খোলা আকাশের নিচে চলে এসেছে।
উত্তর কোরিয়া ফের হামলা চালালে তার কঠোর জবাব দিতে দক্ষিণ কোরিয়ার পত্রিকাগুলো সে দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এ ছাড়া পিয়ংইয়ংয়ের গোলা নিক্ষেপের ঘটনায় নিন্দা জানাতে ব্যর্থ হওয়ায় চীনের সমালোচনাও করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বিক্রীত পত্রিকা কোসান ইলবো তাদের সম্পাদকীয়তে বলেছে, ‘দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সংস্কার করার সময় হয়েছে। পিয়ংইয়ংয়ের হামলার পাল্টা জবাব দিতে ব্যর্থ হয়েছে সিউল। এর ফলে কিম জং-ইল ও তাঁর সরকার দক্ষিণ কোরিয়াকে কাকতাড়ুয়া ছাড়া আর কিছুই ভাববে না।’
ইয়নপিয়ং দ্বীপে গোলা নিক্ষেপের ঘটনায় দক্ষিণ কোরিয়ার দুজন মেরিন সেনাসহ চারজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও অন্তত ১৫ জন। দক্ষিণ কোরিয়ার দাবি, উত্তর কোরিয়াই প্রথমে গোলা ছুড়েছে। পরে তারা এর জবাব দেয়। দুই পক্ষের ছোড়া গোলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে দ্বীপটি। এটি দক্ষিণ কোরিয়ার ইনচিয়ন বন্দর থেকে ৮০ কিলোমিটার এবং উত্তর কোরিয়ার উপকূলবর্তী এলাকা থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

No comments

Powered by Blogger.