প্রবন্ধ- ‘পারস্যে’: মধ্যপ্রাচ্য ও পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে রবীন্দ্রনাথের ভাবনা' by অদিতি ফাল্গুনী

    ‘বোগদাদে ব্রিটিশদের আকাশফৌজ আছে। সেই ফৌজের খৃষ্টান ধর্মযাজক আমাকে খবর দিলেন, এখানকার কোন্ শেখদের গ্রামে তাঁরা প্রতিদিন বোমা বর্ষণ করছেন। সেখানে আবালবৃদ্ধবণিতা যারা মরছে তারা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের উর্দ্ধলোক থেকে মার খাচ্ছে; এই সাম্রাজ্যনীতি ব্যক্তিবিশেষের সত্তাকে অস্পষ্ট করে দেয় বলেই তাদের মার এত সহজ। খৃস্ট এই-সব মানুষকেও পিতার সন্তান বলে স্বীকার করেছেন, কিন্তু খৃস্টান ধর্মযাজকের কাছে সেই পিতা এবং তাঁর সন্তান হয়েছে অবাস্তব, তাঁদের সাম্রাজ্যতত্ত্বের উড়ো জাহাজ থেকে চেনা গেল না তাদের, সেইজন্যে সাম্রাজ্য জুড়ে আজ মার পড়ছে সেই খৃস্টেরই বুকে। তা ছাড়া উড়ো জাহাজ থেকে এই-সব মরুচারীদের মারা যায় এত অত্যন্ত সহজে, ফিরে মার খাওয়ার আশঙ্কা এতই কম যে, মারের বাস্তবতা তাতেও ক্ষীণ হয়ে আসে। যাদের অতি নিরাপদে মারা সম্ভব মারওয়ালাদের কাছে তারা যথেষ্ট প্রতীয়মান নয়। এই কারণে, পাশ্চাত্য হননবিদ্যা যারা জানে না তাদের মানবসত্তা আজ পশ্চিমের অস্ত্রীদের কাছে ক্রমশই অত্যন্ত ঝাপসা হয়ে আসছে।’ (পারস্যে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, পৃষ্ঠা ৬২৯, একাদশ খণ্ড , বিশ্বভারতী কর্তৃক প্রকাশিত ১২৫ তম রবীন্দ্রজন্মজয়ন্তী উপলক্ষে প্রকাশিত সুলভ সংস্করণ, আষাঢ় ১৩৯৭, পুনর্মুদ্রণ পৌষ ১৪০২।)
তেতাল্লিশ পৃষ্ঠার ভ্রমণ কাহিনী ‘পারস্যে’ মূলতঃ রবীন্দ্রনাথের ইরান যাত্রার বিবরণ হলেও এই ভ্রমণ কাহিনীর শেষ কয়েক পাতায় ইরান সীমান্ত পার হয়ে ইরাক ঘুরে দেখার কথাও আছে। অন্য নানা ভ্রমণ আখ্যানের মতো ভ্রমণ কড়চার পাশাপাশি সমকালীন বিশ্ব রাজনীতি বিশ্লেষণ, পূর্ব-পশ্চিম বা প্রাচ্য-পাশ্চাত্য নিয়ে ভাবনা, বেড়াতে যাওয়া দেশের ইতিহাস-শিল্প-সংস্কৃতি বিষয়ক তথ্য পর্যালোচনা সহ নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু, সবচেয়ে যেটা বিস্ময়কর মনে হয়েছে তা’ হলো পশ্চিম এশিয়া তথা খনিজ সম্পদ সমৃদ্ধ ইরান-ইরাক-আরবে পশ্চিমা বৃটিশ-মার্কিনী শক্তিসমূহের লুব্ধ আগ্রাসী তৎপরতা কবির তীক্ষ্ণ দৃষ্টি এড়াতে পারে নি। মুখর হয়েছেন তিনি পশ্চিমের আগ্রাসী ও সাম্রাজ্যবাদী তৎপরতার বিরুদ্ধে। ভ্রমণ কাহিনীর শুরুতেই কবি আমাদের জানিয়ে দিচ্ছেন ১৯৩২ এর ১১ এপ্রিল পারস্যরাজের কাছ থেকে তিনি নিমন্ত্রণ পেলেন। সত্তর বছরে দেশের বাইরে আর ঘুরে না বেড়ানোর ভাবনা মাথায় ঘোরা ফেরা সত্ত্বেও পারস্যরাজের নিমন্ত্রণে ভেতরের চঞ্চল মনটি তার সাথে সাথেই আগ্রহী হয়ে উঠলো। প্রথমে বিমানে করে কলকাতা থেকে এলাহাবাদ হয়ে বোম্বে। সেখান থেকে ১২ই এপ্রিল জাহাজে উঠে পারস্য যাত্রা। ইরাণে ঢুকেই প্রথম যে বিষয়টি তাঁকে মুগ্ধ করে তা’ হলো রেজা শাহ পাহলভি কর্তৃক নতুন বিধান অনুযায়ী মোল্লা বা ধর্মীয় পুরোহিতের পোশাক পরতে বা পদবি পেতে রীতিমতো পরীক্ষায় পাশ করতে হবে। ভারতের অসংখ্য পাণ্ডা পুরোহিত ও সন্ন্যাসী পেশায় যে তীব্র ব্যবসা দেখা যায়, প্রকৃত সন্তের বদলে ভণ্ডদেরই এই সংখ্যাধিক্য রোধে এমন একটি পরীক্ষা হলে বেশ হতো বলে কবি মনে করেন এবং সে ভাবনা আমাদের পাঠকদের সাথেও ভাগ করে নেন: ‘সাধুতা ও সন্ন্যাস যদি নিজের আধ্যাত্মিক সাধনার জন্য হয় তা হলে সাজ পরবার বা নাম নেবার দরকার নেই, এমন-কি নিলে ক্ষতির কারণ আছে; যদি অন্যের জন্য হয় তা হলে যথোচিত পরীক্ষা দেওয়া উচিত।’

পারস্যে পা দিয়েই রবীন্দ্রনাথ আরো জানতে পারেন অতীতে সেখানে অগ্নি উপাসক বা বাহাই সম্প্রদায়ের মানুষদের উপর নানা অত্যাচার হলেও রেজা শাহ পাহলভি দেশটিতে পরমতের প্রতি সহনশীলতা চর্চায় ব্রতী। ১৩ই এপ্রিল ইরাণের বুশেয়ারে পৌঁছতে পৌঁছতে বিমান যাত্রা, পশ্চিমা বিজ্ঞানের আবিষ্কার, অস্ত্রবিদ্যা সহ নানা ভাবনার প্রসঙ্গ বিস্তার ঘটাতে গিয়েই এ রচনার শুরুর উদ্ধৃত ভাবনার সাথে রবীন্দ্রনাথ আমাদের পরিচয় ঘটান, ‘ইরাক বায়ুফৌজের ধর্মযাজক তাঁদের বায়ু-অভিযানের তরফ থেকে আমার কাছে বাণী চাইলেন, আমি যে বাণী পাঠালুম সেইটে এইখানে প্রকাশ করা যাক।

From the beginning of our days man has imagined the seat of divinity in the upper air from which comes light and blows the breath of life for all creatures on this earth.— If in an evil moment man’s cruel history should spread its black wings to invade that realm of divine dreams with its cannibalistic greed and fratricidal ferocity then God’s curse will certainly descend upon us for that hideous desecration and the last curtain will be rung down upon the world of Man for whom God feels ashamed. (আমাদের সভ্যতার সূচনা লগ্ন থেকেই মানুষ ঊর্ধ্বাকাশকে দেবতার স্থান বলে কল্পনা করেছে যেখান হতে আলো আসে এবং পৃথিবীর সকল প্রাণীর নিঃশ্বাস নেবার বাতাস উৎপন্ন হয়। যদি কোনো মন্দ মুহূর্তে মানবের নিষ্ঠুর ইতিহাস তার কালো পাখা সমেত সেই স্বর্গীয় স্বপ্নের রাজ্যে তার যাবতীয় নরমাংসভোজী লোভ ও ভ্রাতৃঘাতী নৃশংসতা নিয়ে আগ্রাসী হয়ে ওঠে, তবে ঈশ্বরের অভিশাপ নিঃসন্দেহে আমাদের উপর বর্ষিত হবে এবং পৃথিবীর উপর শেষ পর্দাটা পড়বে যার জন্য ঈশ্বর লজ্জিত হবেন।–(অনুবাদ: লেখক)

‘পারস্যে’র প্রথম কয়েক পাতা জুড়েই আমরা দেখতে পাব একদা য়ুরোপ যাত্রীর ডায়েরি রচয়িতা রবীন্দ্রনাথ ইউরোপের প্রতি আগের সেই সসম্ভ্রম প্রেম হারিয়ে ফেলছেন। বোধ করছেন তিক্ততা। লিখছেন, ‘…আমরা এশিয়ার লোক, য়ুরোপের বিরুদ্ধে নালিশ আমাদের রক্তে। যখন থেকে তাদের জলদস্যু ও স্থলদস্যু দুর্বল মহাদেশের রক্ত শোষণ করতে বেরিয়েছে সেই আঠারো শতাব্দী থেকে আমাদের কাছে এরা নিজেদের মানহানি করেছে। লজ্জা নেই, কেননা, এরা আমাদের লজ্জা করবার যোগ্য বলেও মনে করে নি।’ পারস্যে (পৃ. ৬৩১)

রবীন্দ্রনাথ আরো বলছেন, ‘আমি এই কথা বলি, এশিয়া যদি সম্পূর্ণ না জাগতে পারে তা হলে য়ুরোপের পরিত্রাণ নেই। এশিয়ার দুর্বলতার মধ্যেই য়ুরোপের মৃত্যুবাণ। এই এশিয়ার ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে যত তার চোখ রাঙারাঙি, তার মিথ্যা কলঙ্কিত কূট কৌশলের গুপ্তচরবৃত্তি। ক্রমে বেড়ে উঠেছে সমরসজ্জার ভার, পণ্যের হাট বহুবিস্তৃত করে অবশেষে আজ অগাধ ধনসমুদ্রের মধ্যে দুঃসহ করে তুলছে তার দারিদ্র্যতৃষ্ণা।’ (পৃ. ৬৩২, প্রাগুক্ত)

আবার রবীন্দ্রনাথের সময়েই জাপান এশিয়ার ভেতর নব্যপ্রাপ্ত শিক্ষা-অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি-সমর শক্তিতে প্রবল হয়ে উঠছে। কিšত্ত, ভবিষ্যৎদ্রষ্টা কবি বলছেন, ‘দেখলুম জাপান য়ুরোপের অস্ত্র আয়ত্ত করে এক দিকে নিরাপদ হয়েছে, তেমনি অন্য দিকে গভীরতর আপদের কারণ ঘটল। তার রক্তে প্রবেশ করেছে ইম্পীরিয়ালিজম্, সে নিজের চারি দিকে মথিত করে তুলেছে বিদ্বেষ।… এশিয়ায় যদি নতুন যুগ এসেই থাকে তবে এশিয়া তাকে নতুন করে আপন ভাষা দিক। তা না করে য়ুরোপের পশুগর্জনের অনুকরণই যদি সে করে সেটা সিংহনাদ হলেও তার হার।’ (পৃষ্ঠা ৬৩৩, প্রাগুক্ত)। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানের যে বিপর্যয় হিরোশিমা-নাগাসাকির ধবংসযজ্ঞে সাধিত হতে যায়, তা’ সাম্রাজ্যবাদের মারীরই একটা দিক বৈকি।
বেদুয়িনদের তাঁবুতে রবীন্দ্রনাথ 
তুরস্কে কামাল পাশার উত্থান ও ব্রিটিশের বিরুদ্ধে তার বিজয়ে রবীন্দ্রনাথ বলছেন, ‘ইংলন্ডের রাষ্ট্রতক্তে তখন বসে আছেন লয়েড জর্জ ও চার্চহিল্ । ১৯২১ খৃস্টোব্দে ইংলন্ডে তখনকার মিত্রশক্তিরা একটা সভা ডেকেছিলেন। সেই সভায় আঙ্গোরার প্রতিনিধি বেকির সামী তুরুস্কের হয়ে যে প্রস্তাব করেছিলেন তাতে
তাঁদের রাষ্ট্রীয় স্বার্থ অনেকটা পরিমাণে ত্যাগ করতেই রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু গ্রীস আপন ষোলো-আনা দাবির ’পরেই জেদ ধরে বসে রইল, ইংলন্ড পশ্চাৎ থেকে তার সমর্থন করলে। অর্থাৎ কালনেমি-মামার লঙ্কাভাগের উৎসাহ তখনো খুব ঝাঁঝালো ছিল।…এ দিকে চলল গ্রীস তুরুস্কের লড়াই। এখনো আঙ্গোরা-পক্ষ রক্তপাত-নিবারণের উদ্দেশে বার বার সন্ধির প্রস্তাব পাঠালে। কিন্তু ইংলন্ড ও গ্রীস তার বিরুদ্ধে অবিচলিত রইল। শেষে সকল কথাবার্তা থামল গ্রীসের পরাজয়ে। কামালপাশার নায়কতায় নূতন তুরুস্কের প্রাণপ্রতিষ্ঠা হল আঙ্গোরা রাজধানীতে।’ (পৃ. ৬৩৩, প্রাগুক্ত)

কামাল পাশা প্রবর্তিত নারী শিক্ষা নীতির কথা উল্লেখ করেছেন করি। কিম্বা, রবীন্দ্রনাথ এটাও উল্লেখ করতে ভোলেন না যে প্যালেস্টাইনে এক ইংরেজ রাজকর্মচারী তার বিদায় ভাষণে যখন প্যালেস্টাইনকে ‘মুসলিম দেশ’ হিসেবে বর্ণনা করে ইহুদি ও খ্রিষ্টান সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সমূহ হতে প্রতিনিধিত্ব সাপেক্ষে সেই ‘মুসলিম দেশ’-এর সরকার ‘মুসলিম’দের হাতেই থাকবে বলে আশ্বাস দেন, ‘তখন জেরুজিলামের মুফতি হাজি এমিন-এল্-হুসেইনি উত্তর করলেন, ‘For us it is an exclusively Arab, not a Mahommedan question. During your sojourn in this country you have doubtless observed that here there are no distinctions between Mahommedan and Christian Arabs. We regard the Christians not as a minority, but as Arabs.’ (পৃ. ৬৩৪, প্রাগুক্ত)

সন্দেহ নেই কবিতা, মখমল গালিচা ও গোলাপের দেশ পারস্যে কবি রবীন্দ্রনাথ সমাদর পেয়েছেন বিস্তর। ইন্দো-আর্য সংহতি বোধও ছিল। বেদ ও আবেস্তা দুই পরষ্পর বিচ্ছিন্ন ভ্রাতৃ বংশের দুটো পরমা গ্রন্থ: ‘কাব্য পারসিকদের নেশা, কবিদের সঙ্গে এদের আন্তরিক মৈত্রী। পারসিকদের কাছে আমার পরিচয়ের আরো-একটু বিশিষ্টতা আছে। আমি ই-ো-এরিয়ান (পৃষ্ঠা ৬৩৪, প্রাগুক্ত)।’

তুর্কি বংশোদ্ভূত বাসক্রি জাতি কিম্বা তুর্কিদেরই আর একটি শাখা কাজার সম্রাট মহম্মদ খাঁর দানবিক নিষ্ঠুরতার সময় হতে তামাক ব্যবসায়ী ইংরেজ, রেলওয়ের মালিক প্রতিবেশী রাশিয়া আর বেলজিয়মের বহুজাতিক ঠেলাঠেলি পারস্য বা ইরানকে ক্রমাগত দলিত মথিত করেছে: ‘অবশেষে একদা ইংরেজে রাশিয়ানে আপস হয়ে গেল। দুই কর্তার একজন পারস্যের মু-ের দিকে আর-একজন তার লেজের দিকে দুই হাওদা চড়িয়ে সওয়ার হয়ে বসল, অঙ্কুশরূপে সঙ্গে রইল সৈন্যসামন্ত। উত্তর দিকটা পড়ল রুশীয়ের ভাগে, দক্ষিণ দিকটা ইংরেজের, অল্প একটুখানি বাকি রইল সেখানে পারস্যের বাতি টিম্ টিম্ করে জ্বলছে।’ (পৃ. ৬৩৯, প্রাগুক্ত)

তবে, রাশিয়াতে অক্টোবর বিপ্লবের পর লেনিন জার সাম্রাজ্যের অধীনস্থ এশিয় মুসলিম জাতিগুলো সম্পর্কে যে উদার নীতি গ্রহণ করলেন ও পড়শি দেশের ভূখ-ে সাম্রাজ্য বিস্তারের অভিযানে ক্ষান্ত দিলেন, তারই ফলশ্রুতিতে ব্রিটিশের সাথে যুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়ন ইরানকে শুধু মুক্ত হতেই সাহায্য করলো না, বরং ইরাণে রাশিয়ার নতুন রাষ্ট্রদূত রট্স্টাইন এই ঘোষণা দিলেন রাশিয়া ইরানকে তার সব দেনা হতে মুক্ত ঘোষণা করছে, ইরাণে তৈরি রাশিয়ার যাবতীয় পথ ও বন্দর বিনা মূল্যে ইরানকে দেওয়া হলো ও জারের রাশিয়া কর্তৃক দখলিকৃত সব ভূমি ইরানকে বিনা শর্তে ফিরিয়ে দেয়া হবে। সমকালীন বিশ্ব রাজনীতির নানা ফাঁক-ফোঁকড় এভাবেই আমাদের চিনিয়ে দিচ্ছেন রবীন্দ্রনাথ।

নাহ্, শুধু প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের রাজনীতি বিশ্লেষণ করেই কবিমন তৃপ্ত নিঃসন্দেহে নয়। ইরাণের নিসর্গ… শিরাজ নগরীর দিকে যাবার পথে উপলবিকীর্ণ পথ, পপলার কমলালেবু চেস্ট্নাট এলম গাছের মাথা, গমের ক্ষেতে সদ্য গজানো নতুন চারা… সব কিছুই প্রবীণ কবির সজীব দৃষ্টিতে উদ্ভাসিত হয়ে উঠছে। শিরাজের গবর্নর কর্তৃক আহুত সভায় শেখ সাদি ও হাফিজের শহরে প্রাচ্যের অপর কবি রবীন্দ্রনাথকে শংসা জানানো হয়। কৃতজ্ঞতা জানাতে রবীন্দ্রনাথ বলেন যে একদা বঙ্গাধিপতির আমন্ত্রণ পেয়েও শেষ অবধি হাফিজ নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে পারেন নি। বাংলার কবি তারই প্রতিদানে আজ পারস্যের আমন্ত্রণ গ্রহণ করে কৃতার্থ। সাদির সমাধি দেখতে গিয়ে কবির বিস্ময়: ‘সাদির সমাধিতে স্থাপত্যের গুণপনা কিছুই নেই। আজকের মতো ফুল দিয়ে প্রদীপ দিয়ে কবরস্থান সাজানো হয়েছে।’

শিরাজ হতে ইস্পাহান যাবার পথে রবীন্দ্রনাথ পারসিক সম্রাট দিগি¦জয়ী দরিয়ুসের ভগ্নপ্রাপ্ত পর্সিপোলিস নগরী দেখার রোমাঞ্চিত বর্ণনা দিচ্ছেন: ‘এই পর্সিপোলিসে ছিল দরিয়ুসের গ্রন্থাগার। বহু সহস্র চর্মপত্রে রুপালি সোনালি অক্ষরে তাঁদের ধর্মগ্রন্থ আবেস্তা লিপীকৃত হয়ে এইখানে রক্ষিত ছিল। আলেকজান্দার আজ জগতে এমন কিছুই রেখে যান নি যা এই পর্সিপোলিসের ক্ষতিপূরণ-স্বরূপে তুলনীয় হতে পারে।’ (পৃ. ৬৪৪, প্রাগুক্ত)।

পারস্যের ইতিহাস সংক্ষেপে জানাতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ আরো বলছেন, ‘পারস্যের ইতিহাস যখন শাহনামার পুরাণকথা থেকে বেরিয়ে এসে স্পষ্ট হয়ে উঠল তখন পারস্যে আর্যদের আগমন হাজার বছর পেরিয়ে গেছে। তখন দেখি আর্যজাতির দুই শাখা পারস্য-ইতিহাসের আরম্ভকালকে অধিকার করে আছে, মীদিয় এবং পারসিক। মীদিয়েরা প্রথমে এসে উপনিবেশ স্থাপন করে, তার পরে পারসিক। এই পারসিকদের দলপতি ছিলেন হখমানিশ। তাঁরই নাম-অনুসারে এই জাতি গ্রীকভাষায় আকেমেনিড (Achaemenid) আখ্যা পায়। খৃস্টজন্মের সাড়ে-পাঁচশো বছর পূর্বে আকেমেনীয় পারসিকেরা মীদিয়দের শাসন থেকে সমস্ত পারস্যকে মুক্ত করে নিজেদের অধীনে একচ্ছত্র করে। সমগ্র পারস্যের সেই প্রথম অদ্বিতীয় সম্রাট ছিলেন বিখ্যাত সাইরস, তাঁর প্রকৃত নাম খোরাস। তিনি যে শুধু সমস্ত পারস্যকে এক করলেন তা নয়, সেই পারস্যকে এমন এক বৃহৎ সাম্রাজ্যের চূড়ায় অধিষ্ঠিত করলেন–সে যুগে যার তুলনা ছিল না। এই বীরবংশের এক পরম দেবতা ছিলেন অহুরমজদা। ভারতীয় আর্যদের বরুণদেবের সঙ্গেই তাঁর সাজাত্য। …ভারতবর্ষের বৈদিক আর্যদেবতার মতোই তাঁর মন্দির ছিল না, এবং এখানকার মতোই ছিল অগ্নিবেদী।’ (পৃ. ৬৪৬, প্রাগুক্ত) ইস্পাহানের আর্মেনীয় খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ইতিহাসও নাড়াচাড়া করেছেন রবীন্দ্রনাথ তাঁর এই ভ্রমণপঞ্জিতে।

‘পতন-অভুদ্যয়-বন্ধুর-পন্থা’র ভেতর দিয়েই পারস্য বা ইরান তার কালের যাত্রা অব্যাহত রেখেছে। নাদির শাহের রক্তাক্ত আগ্রাসন কিম্বা কাজার বংশীয় সম্রাট তুর্কি আগা মহম্মদ খাঁ কীভাবে পারস্যের কর্মান শহরে পাশবিকতার চূড়ান্ত অধ্যায় সঙ্ঘটিত করেছেন, সেই ব্যখ্যাও দেন তিনি: ‘কোথা থেকে এল কাজার-বংশীয় তুর্কি আগা মহম্মদ খাঁ। খুন করে, লুঠ করে, হাজার হাজার নারী ও শিশুকে বন্দী করে আপন পাশবিকতার চুড়ো তুললে কর্মান শহরে, নগরবাসীর সত্তর হাজার উৎপাটিত চোখ হিসাব করে গ’ণে নিলে।’ (পৃ. ৬৫৩-৫৪, প্রাগুক্ত)

আরব-পারস্যের দ্বন্দ্ব-মিলনের চিত্রও অবিশ্বাস্য নিরপেক্ষতায় তুলে ধরেছেন রবীন্দ্রনাথ। বঙ্কিমচন্দ্র যেমন ভারত উপমহাদেশের বিপুল সংখ্যক নিম্নবর্গের মানুষের ইসলামের সমতায় আকৃষ্ট হয়ে ধর্মান্তরকে অস্বীকার করে কেবলি ‘যবনের বলপ্রয়োগ ও অত্যাচার’কে ধর্মান্তরের কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন, অস্বীকার করেছেন হিন্দু ধর্মের বর্ণাশ্রমের কালিমা, রবীন্দ্রনাথ তাঁর গোরাসহ একাধিক উপন্যাসে ইসলামের সাম্যবাদকে অস্বীকার করেন নি। শরৎচন্দ্রও। সেটুকু সত্যবাদিতা ও নিরপেক্ষতা শেষোক্ত দুই লেখকেরই ছিল। বঙ্কিমের মতো মিথ্যাচার তারা করেন নি। পারস্যেও ভারতের মতো প্রবল না হলেও জাতিভেদ বা সামাজিক শ্রেণীবিভাগ ছিল কঠিন যা ধীরে ধীরে গরিষ্ঠ সংখ্যক পারস্যবাসীকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করে যদিও আরব-পারস্যের ভেতর ভাষাগত বা সংস্কৃতিগত দ্বন্দ্বের একটি দিক ছিল যা আজো আছে। রবীন্দ্রনাথ এসব দিককেই অতি পরিমিত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে একটি স্তবকে এভাবে সঙ্কলিত করেন: ‘পারস্যের ইতিহাসক্ষেত্রে একদিন যখন আরব এল তখন অতি অকস্মাৎ তার প্রকৃতিতে একটা মূলগত পরিবর্তন ঘটল। এ কথা মনে রাখা দরকার যে, বলপূর্বক ধর্মদীক্ষা দেওয়ার রীতি তখনো আরব গ্রহণ করে নি। আরবশাসনের আরম্ভকালে পারস্যে নানা সম্প্রদায়ের লোক একত্রে বাস করত এবং শিল্পরচনায় ব্যক্তিগত স্বাধীন রুচিকে বাধা দেওয়া হয় নি। পারস্যে ইসলাম ধর্ম অধিবাসীদের স্বেচ্ছানুসারে ক্রমে ক্রমে সহজে পরিবর্তিত হয়েছে। তৎপূর্বে ভারতবর্ষেরই মতো পারস্যে সামাজিক শ্রেণীবিভাগ ছিল কঠিন, তদনুসারে শ্রেণীগত অবিচার ও অবমাননা জনসাধারণের পক্ষে নিশ্চয়ই পীড়ার কারণ হয়েছিল। স্বসম্প্রদায়ের মধ্যে ঈশ্বরপূজার সমান অধিকার ও পরস্পরের নিবিড় আত্মীয়তা এই ধর্মের প্রতি প্রজাদের চিত্ত আকর্ষণ করেছিল সন্দেহ নেই। এই ধর্মের প্রভাবে পারস্যে শিল্পকলার রূপ পরিবর্তন করাতে রেখালংকার ও ফুলের কাজ প্রাধান্য লাভ করেছিল। তার পরে তুর্কিরা এসে আরব সাম্রাজ্য ও সেইসঙ্গে তাদের বহুতর কীর্তি ল-ভ- করে দিলে, অবশেষে এল মোগল। এই-সকল কীর্তিনাশার দল প্রথমে যত উৎপাত করুক, ক্রমে তাদের নিজেদেরই মধ্যে শিল্পোৎসাহ সঞ্চারিত হতে লাগল। এমনি করে যুগান্তে যুগান্তে ভাঙচুর হওয়া সত্ত্বেও পারস্যে বার বার শিল্পের নবযুগ এসেছে।’ (পৃ. ৬৫৪-৬৫৫, প্রাগুক্ত)

তেহরানের গোলাপের গন্ধমাধুর্যে মুগ্ধ হবার পাশাপাশি বেহালায় বাজানো পারস্য সঙ্গীতের সাথে ভারতীয় ভৈরোঁ রামকেলি রাগের সাদৃশ্য বা পারস্যের তালযন্ত্র ডম্বক যে আমাদের বাঁয়া-তবলার চেয়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ এমন কিছু পর্যবেক্ষণও পারস্য সঙ্গীত বিষয়ে রবীন্দ্রনাথ করেছেন তাঁর এই ভ্রমণপঞ্জিতে। তেহরানের পর বাগদাদ যেতে ইরাণের সীমান্ত শহর কাজবিন (সাসানীয় কালের শহর) ও বেহি¯ত্তন ভ্রমণেরও বর্ণনা দেন : ‘অবশেষে আমাদের রাস্তা এসে পড়ল বেহি¯ত্তনে। এখানে শৈলগাত্রে দরিয়ুসের কীর্তিলিপি পারসিক সুসীয় ও ব্যাবিলোনীয় ভাষায় ক্ষোদিত। এই ক্ষোদিত ভাষার ঊর্ধ্বে দরিয়ুসের মূর্তি। এই মূর্তির সামনে বন্দীবেশে দশজন বিদ্রোহীর প্রতিরূপ। …দরিয়ুসের মাথার উপরে অহুরমজ্‌দার মূর্তি।’ (পৃ. ৬৬১-৬৬২, প্রাগুক্ত)।’

বেহিস্তুনে আকেমেনীয়, সাসানীয় ও পার্থীয় রাজবংশের সময়কার নানা গুহাচিত্র দেখে রবীন্দ্রনাথ কির্মানশা ও কাস্রিশিরিন পার হয়ে পৌঁছে যান ইরাকের বাগদাদ। টাইগ্রিস নদীর তীরে একটি হোটেলে ঠাঁই নিয়ে অপরাহ্নে ইরাকি কবি সাহিত্যিকদের এক আমন্ত্রণে বক্তব্য দানের সময় বলেন, ‘আজ আমি একটি দরবার নিয়ে আপনাদের কাছে এসেছি। একদা আরবের পরম গৌরবের দিনে পূর্বে পশ্চিমে পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক ভূভাগ আরব্যের প্রভাব-অধীনে এসেছিল। ভারতবর্ষে সেই প্রভাব যদিও আজ রাষ্ট্রশাসনের আকারে নেই, তবুও সেখানকার বৃহৎ মুসলমান সম্প্রদায়কে অধিকার করে বিদ্যার আকারে, ধর্মের আকারে আছে। সেই দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে আমি আপনাদের বলছি, আরবসাগর পার করে আরব্যের নববাণী আর-একবার ভারতবর্ষে পাঠান–যাঁরা আপনাদের স্বধর্মী তাঁদের কাছে–আপনাদের মহৎ ধর্মগুরুর পূজ্যনামে, আপনাদের পবিত্রধর্মের সুনামী রক্ষার জন্য।’ (পৃ. ৬৬৫, প্রাগুক্ত)

ইরাকের বেদুইন তাঁবুতে প্রচ- শরীর খারাপের ভেতরেও রবীন্দ্রনাথ গেলেন অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্য। কারণ, দেশে থাকতে যে মাত্র তিরিশ বছর বয়সে মরুভূমিতে না এসেই লিখে ফেলেছিলেন, ‘ইহার চেয়ে হতেম যদি আরব বেদুয়িন।’ বেদুয়িনদের এক থালা হতে খাদ্যগ্রহণ, যোদ্ধা নৃত্য মুগ্ধ করে কবিকে। বেদুয়িন-আতিথেয়তার পাশাপাশি অভিজ্ঞতার জন্য বেদুয়িন-দস্যুতার পরিচয় দিতে বেদুয়িন নেতাকে অনুরোধ করলে নেতা জানান বয়সে প্রাচীন ও জ্ঞানী ব্যক্তিদের গায়ে বেদুয়িনরা হস্তক্ষেপ করে না। একটু মনঃক্ষুণ্ন রবীন্দ্রনাথের উপলব্ধি, ‘সত্তর বছর বয়সে যৌবনের পরীক্ষা চলবে না।… যুবকে যুবকে দ্বন্দ্ব ঘটে, সেই দ্বন্দ্বের আলোড়নে সংসারপ্রবাহের বিকৃতি দূর হয়। দস্যু যখন বৃদ্ধকে ভক্তি করে তখন সে তাকে আপন জগৎ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। যুবকের সঙ্গেই তার শক্তির পরীক্ষা, সেই দ্বন্দ্বের আঘাতে শক্তি প্রবল থাকে, অতএব ভক্তির সুদূর অন্তরালে পঞ্চাশোর্ধ্বং বনং ব্রজেৎ।’ (পৃ. ৬৬৮, প্রাগুক্ত)

এখানেই শেষ হচ্ছে রবীন্দ্রনাথের ‘পারস্যে’ বা পারস্যনামা। হালের ইরাকে মার্কিনী অক্ষশক্তির সদম্ভ পদচারণা, ইরানের সাথেও যুদ্ধ লাগাবার পাঁয়তারা সহ গোটা মধ্যপ্রাচ্য ও আরব বিশ্বে খনিজ সম্পদলোভী পশ্চিমা সভ্যতার আগ্রাসনের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথের ‘পারস্যে’র পুনঃপাঠ হওয়া একান্ত জরুরি।

ঢাকা, ৫/৮/২০১০
=============================
অদিতি ফাল্গুনী
জন্ম
যশোর, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৪

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে আইন শাস্ত্রে সম্মান ও স্নাতকোত্তর।

বই

১) অধিবর্ষ অপরিচয়ের (কাব্যগ্রন্থ, ফেব্রুয়ারি ২০০৮, বাঙলায়ন কর্তৃক প্রকাশিত)।
২) মিকেলেঞ্জেলো: জীবন ও কর্ম (অনুবাদগ্রন্থ, মূল: আলেক্সান্দ্রা গ্রুমলিং, ফেব্রুয়ারি ২০০৮, বাঙলায়ন কর্তৃক প্রকাশিত)।
৩) চিহ্নিত বারুদ বিনিময় (গল্পগ্রন্থ, এপ্রিল ২০০৭, অঙ্কুর কর্তৃক প্রকাশিত)।
৪) দ্য রাখাইনস্ অফ পটুয়াখালি এণ্ড বরগুনা রিজিয়ন: ইন কোয়েস্ট ফর অ্যা ডিসট্যান্ট হোমল্যাণ্ড (গবেষণাগ্রন্থ, কোডেক কর্তৃক প্রকাশিত, ফেব্রুয়ারি ২০০৬)।
৫) বানিয়ালুকা ও অন্যান্য গল্প (গল্পগ্রন্থ, ফেব্রুয়ারি ২০০৫, ঐতিহ্য কর্তৃক প্রকাশিত)।
৬) গোত্রপিতার হেমন্ত (অনুবাদগ্রন্থ, মূল: দ্য অটাম অফ দ্য প্যাট্রিয়ার্ক, গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ, ফেব্র“য়ারি ২০০৪, সন্দেশ কর্তৃক প্রকাশিত)।
৭) আমার জীবন (অনুবাদগ্রন্থ, মূল: মাই লাইফ, মার্ক শাগাল, ফেব্রুয়ারি ২০০১, ঐতিহ্য কর্তৃক প্রকাশিত)।
৮) খসড়াখাতা: নারীবাদী সাহিত্যতত্ত্ব ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (প্রবন্ধ সঙ্কলন, ফেব্র“য়ারি ২০০০, শ্রাবণ কর্তৃক প্রকাশিত)।
৯) ইমানুয়েলের গৃহপ্রবেশ (গল্পগ্রন্থ, ফেব্রুয়ারি ১৯৯৯, স্টুডেন্ট ওয়েজ কর্তৃক প্রকাশিত)।
১০) বাংলার নারী সংগ্রামী: ঐতিহ্যের অনুসন্ধানী (গবেষণাগ্রন্থ, ফেব্রুয়ারি ১৯৯৮, স্টেপস্ টুওয়ার্ডস্ ডেভেলপমেন্ট কর্তৃক প্রকাশিত)।
১১) পারিবারিক আইনে বাংলাদেশের নারী (যৌথ গবেষণাগ্রন্থ, সেপ্টেম্বর ১৯৯৭, আইন ও সালিশ কেন্দ্র কর্তৃক প্রকাশিত)।
============================
উপন্যাস- 'রৌরব'  by লীসা গাজী »»»   (পর্ব-এক) # (পর্ব-দুই) # (পর্ব-তিন) # (পর্ব-চার শেষ)   গল্প- 'পান্নালালের বাস্তু' by সিউতি সবুর   গল্প- 'গোপন কথাটি' by উম্মে মুসলিমা  আহমদ ছফার অগ্রন্থিত রচনা কর্ণফুলীর ধারে  আলোচনা- 'খানিক ছফানামা' by কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর  প্রবন্ধ- অল্পবিদ্যা কংকরবোমা : 'ফ্রয়েড, এডোয়ার্ড স. প্রবন্ধ- 'তাদের সঙ্গে, তাদের এলাকায়' by আকিমুন রহম  প্রবন্ধ- 'রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্পে ও গদ্যে মুসলমানের.   প্রবন্ধ- 'কবিতা, মানবজাতির মাতৃভাষা' by মাসুদ খান   প্রবন্ধ- 'কাজী নজরুল:রবীন্দ্রনাথ ও জীবনানন্দের পার   প্রবন্ধ- 'জাতীয় কবিতা উৎসব ২০০৯-এ পঠিত প্রবন্ধ সাম   প্রবন্ধ- 'রবীন্দ্রজন্মের দেড়শ বছর “একজন তৃতীয় সারি  প্রবন্ধ- 'রবীন্দ্রজন্মের দেড়শ বছর গায়ক রবীন্দ্রনাথ.    প্রবন্ধ- 'গণশিক্ষায় কেসস্টাডি ‘হৈমন্তি’র অপুরুষ বন


bdnews24 এর সৌজন্যে
লেখকঃ অদিতি ফাল্গুনী

এই প্রবন্ধ'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.