দুই কোচের দুই বাজি

দৃশ্যটা সচরাচর মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে দেখা যায়। স্কুল ড্রেস পরে, কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ম্যাচ দেখতে স্টেডিয়ামের গেটে হাজির একদল ছাত্র। ক্রিকেটের মতো অতটা দীর্ঘ না হলেও কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে গ্রামীণফোন ফেডারেশন কাপে দর্শকদের লাইনটাও নেহাত ছোট হচ্ছে না। ফুটবল যে এখনো তরুণদের টানে সেটা বোঝা গেল দ্বিতীয় সেমিফাইনালের দিন; শেখ জামাল ধানমন্ডি-মুক্তিযোদ্ধা ম্যাচে।
সুন্দর ফুটবলের আকর্ষণ যে চিরন্তন, সেটি তো এই ফেডারেশন কাপই কিছুটা বোঝাচ্ছে। এভারটনের ব্রাজিলিয়ান জাদু, ঘানাইয়ান বেনটিলের খানিক নৈপুণ্যের ঝলক দেখতে আগ্রহভরেই স্টেডিয়ামে ঢুকেছে দর্শকেরা। তবে দর্শকদের প্রত্যাশার সবটুকু পূরণ করতে পারেনি ব্রাদার্স ও মুক্তিযোদ্ধা।
খেলা শেষের মিনিট পাঁচেক আগে গোল খেয়ে শেষ চারেই বিদায় মুক্তিযোদ্ধার। অথচ তাদের বড় আশা ছিল ফাইনাল খেলার। দলের কোচ মারুফুল হক এখন নিয়তিবাদী, ‘সব সময় তো মানুষের চাওয়া-পাওয়া এক হয় না।’ হারের পর তিন দিনের ছুটি পেয়ে খেলোয়াড়েরা আপাতত বিশ্রামে। আগামী শনিবার থেকে কোচ নতুন উদ্যমে শুরু করবেন নতুন অভিযান, ‘এখন আমাদের সামনে লিগ আর সুপার কাপ। এগুলো নিয়েই ভাবছি। আশা করি, লিগে আমাদের পারফরম্যান্স আরও ভালো হবে।’ সেমিফাইনালে কেন হারল মুক্তিযোদ্ধা? মারুফুলের মনে হয়েছে, বুকোলার ‘নির্জীব’ থাকা, সঙ্গে অন্যদের গোল মিসের হতাশাও ছড়িয়ে পড়েছিল খেলোয়াড়দের মাঝে, ‘বারবার চেষ্টা করার পরও ছেলেরা গোল পাচ্ছিল না বলে হয়তো ওদের মধ্যে হতাশা এসে গিয়েছিল। ওই সুযোগটাই নিয়েছে শেখ জামাল।’ হতাশা নাকি স্নায়ুচাপ? মুক্তিযোদ্ধার গোলরক্ষক বিপ্লব ভট্টাচার্যের কাছে কারণ এ দুটির কোনোটাই নয়, তাঁর চোখে এটি স্রেফ দুর্ভাগ্যের কারসাজি, ‘ভাগ্য আমাদের পক্ষে ছিল না। তিন-তিনবার বল ক্রসবারে লেগে ফিরে এসেছে। এটা মিরাকল।’
তবে যোগ্য দুই দলই ফাইনালে উঠেছে বলে মেনে নিচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা গোলরক্ষক, ‘সেরা দুই দলই ফাইনালে। লড়াইটা জমজমাটই হবে।’ মুক্তিযোদ্ধার মতো সেমিফাইনালে বাদ পড়ে ব্রাদার্সও তাকাচ্ছে সামনে। ব্রাদার্স কোচ ওয়াসিম ইকবাল বললেন, ‘ফেডারেশন কাপ আমাদের কাছে এখন অতীত। এখন লিগ ও সুপার কাপে আরও ভালো খেলতে হবে আমাদের।’
স্পষ্ট বলেননি, তবে ফেডারেশন কাপে এভারটনকে ঘিরেই যে দলের প্রত্যাশা ঘুরপাক খেয়েছে, প্রকারান্তরে সেটাই কবুল করেছেন ওয়াসিম ‘কোনো সন্দেহ নেই, এভারটন ভালো খেলোয়াড়। কিন্তু ও নিজেই নিজের খেলাটা নষ্ট করেছে। একা একা এত বেশি খেলতে গেছে যা মোটেও ঠিক হয়নি।’ তবে ব্রাজিলিয়ান খেলোয়াড়কে দর্শক-আকর্ষক চরিত্র বলে নিতে তাঁর দ্বিধা নেই, ‘এটা সত্যি, ওর খেলা দেখতে অনেকেই মাঠে এসেছে।’
মাঠের খেলা অনুযায়ী ফাইনালে উঠতে পারত এই দুই দলের যেকোনোটি। শিরোপাও উঠতে পারত এক দলের হাতে। কিন্তু আগামীকালের ফাইনালে তারা দর্শক। তো সেমিফাইনালে পরাজিত এই দুই দল কার হাতে শিরোপা দেখছে? আবাহনী, না শেখ জামাল?
ব্রাদার্সকে হারানো আবাহনীর হাতেই এবার ফেডারেশন কাপের শিরোপা দেখছেন ওয়াসিম, ‘আবাহনীর বিদেশি খেলোয়াড়েরা যদি ফাইনালে ভালো খেলতে পারে তাহলে ওরাই বেরিয়ে যাবে। যদিও কাগজে-কলমে শেখ জামালই এগিয়ে, তার পরও আমার বাজি আবাহনীর পক্ষে।’
মুক্তিযোদ্ধার বিপক্ষে জয়ী শেখ জামালকে এগিয়ে রাখছেন মুক্তিযোদ্ধা কোচ মারুফুল, ‘দলীয় শক্তি এবং খেলোয়াড়দের অভিজ্ঞতার বিচারে শেখ জামালই মনে হয় লড়াইয়ে এগিয়ে থাকবে।’

No comments

Powered by Blogger.