খেলাপি ঋণে আক্রান্ত চামড়া শিল্প

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে চামড়া শিল্পে খেলাপি ঋণের ছড়াছড়ি। অধিকাংশ গ্রাহক টাকা ফেরত দিচ্ছে না। গত পাঁচ বছরে সোনালী, রূপালী ও বেসিক ব্যাংক মোট ঋণ বিতরণ করেছে প্রায় ১ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। বাকি টাকাও বকেয়া রয়েছে। ৩১ আগস্টের মধ্যে পরিশোধে ব্যর্থ হলে পুরো অর্থই খেলাপি হিসেবে বিবেচিত হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাভারে ট্যানারি শিল্প স্থানান্তর, নানা অব্যবস্থাপনা, ট্যানারি খাতের নেতাদের অতিমাত্রায় ঋণ গ্রহণ, যাচাই-বাছাই না করে ঋণ অনুমোদন ও দুর্বল প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়ার কারণে বিতরণকৃত ঋণের একটি বড় অংশ খেলাপি ও অবলোপন হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে বর্তমানে বিতরণ করা প্রায় ৯৯ ভাগ ঋণই বকেয়া। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সোনালী ব্যাংক গত পাঁচ বছরে চামড়াশিল্পে ঋণ বিতরণ করেছে প্রায় ৬৬৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ফান্ডেড ও নন ফান্ডেড মিলে প্রায় ৮০ কোটি টাকার ঋণ গেছে নিয়মিত চামড়াশিল্পে। বাকি ৫৮৩ কোটি টাকা গেছে কোরবানির চামড়া ক্রয়ে। এসব ঋণ মোট ১০ প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে প্রায় ৫৫৮ কোটি টাকা। ব্যাংকটির গ্রাহক প্রতিষ্ঠান ভুলুয়া ট্যানারি, আমিন ট্যানারি, কালাম ব্রাদার্স ট্যানারি এবং মোহাম্মদিয়া লেদারের কিছু টাকা বকেয়া থাকলেও লেনদেন নিয়মিত আছে।
কিন্তু বাকি ছয় প্রতিষ্ঠান টাকা ফেরত দিচ্ছে না। এসব ঋণ পুরোটাই এখন কুঋণে পরিণত হয়েছে। মেসার্স ভারসেজ সুজের কাছে সোনালী ব্যাংকের বকেয়া রয়েছে ৭ কোটি ২০ লাখ টাকা। একইভাবে গ্রেট ইস্টার্ন ট্যানারি এক কোটি টাকা, এক্সিলেন্ট ফুটওয়্যার প্রায় ১০ কোটি টাকা, দেশমা সু ইন্ডাস্ট্রিজ প্রায় সাড়ে ২৩ কোটি, এসএনজেট ফুটওয়্যার প্রায় সাড়ে ১৪ কোটি টাকা এবং আনান ফুটওয়্যারের কাছে ব্যাংকের বকেয়া প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা। এসব ঋণ বর্তমানে খেলাপি হয়ে গেছে। সোনালী ব্যাংকের এজিএম মফিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া পুরনো সব পার্টি খেলাপি। কেউ টাকা ফেরত দিচ্ছে না। সূত্র আরও জানায়, কোরবানির চামড়া কিনতে গত বছর তিনটি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ৭০ কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয় সোনালী ব্যাংকের বঙ্গবন্ধু এভিনিউ কর্পোরেট শাখা থেকে। এর মধ্যে ভুলুয়া ট্যানারি বেশিরভাগ ঋণ পরিশোধ করেছে। এবার প্রতিষ্ঠানটি ৪০ কোটি টাকা ঋণ চেয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ঋণ ফেরত দেয়ার অভ্যাস থাকায় এবারও প্রায় ২৫ কোটি টাকা ঋণ দেয়ার চিন্তা করছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। গত বছরের নেয়া আমিন ট্যানারি ২৫ কোটি ও কালাম ব্রাদার্স ট্যানারি ২০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে পারেনি। প্রতিষ্ঠান দুটি আরও এক বছর সময় চেয়েছে। বঙ্গবন্ধু এভিনিউ কর্পোরেট শাখার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, ভুলুয়া ট্যানারির ঋণ ফেরত দেয়ার অভ্যাস আছে। তাই প্রতিষ্ঠানটিকে এবারও প্রায় ২৫ কোটি টাকা ঋণ দেয়ার চিন্তা আছে। তবে এখনও চূড়ান্ত হয়নি। আর আমিন ট্যানারি ও কালাম ব্রাদার্স ঋণ পরিশোধে সময় চেয়েছে। সেটি কর্তৃপক্ষ ভেবে দেখবে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, রূপালী ব্যাংক ২০১৬ সাল পর্যন্ত চামড়াশিল্পে ঋণ বিতরণ করেছে ৬৪৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে গত বছরই চার প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়েছে ১৬৭ কোটি টাকা। ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ঋণ পরিশোধের মেয়াদ থাকায় এখনও খেলাপি হয়নি। তবে বকেয়া রয়েছে পুরোটাই। এ ছাড়া পুরনো খেলাপি আছে ১৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে হোসেন ব্রাদার্স ২৭ কোটি ২০ লাখ, মাইজদী ট্যানারি ২৪ কোটি, এফ কে লেদার ৫১ কোটি ও মিজান ট্রেডার্সের খেলাপি ৩২ কোটি টাকা। এসব ঋণ ১৯৮৫ সাল থেকে খেলাপি হয়ে আসছে। জানতে চাইলে রূপালী ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, খেলাপি ১৩৫ কোটি টাকা আদায়ে মামলা করা হয়েছে। এবার এখনও কেউ ঋণ চায়নি। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বেসিক ব্যাংকে এ পর্যন্ত চামড়াশিল্পে ৩৫ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। এর মধ্যে সব ঋণ নিয়মিত আছে বলে ব্যাংক সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র দাবি করেছে। অপর একটি সূত্র জানায়, ৩১ আগস্টের মধ্যে পরিশোধ না করলে কিছু ঋণ খেলাপি হয়ে যাবে। এরপরও খাতটিতে আরও ২শ’ কোটি টাকা অনুমোদন দেয়া আছে।

No comments

Powered by Blogger.