আমরা মাত্র ১০ শতাংশ ফাঁসি দেই : প্রধান বিচারপতি

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় (যুদ্ধাপরাধ) আপিল বিভাগে ১০ শতাংশ ফাঁসি হয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। আজ রোববার সকালে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম ও জাতীয় পার্টির  নেতা সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের  আপিল শুনানির তারিখ ধার্য করার সময় প্রধান বিচারপতি এ মন্তব্য করেন। শুনানি কালে প্রধান বিচারপতি বলেন, ট্রাইব্যুনালে গেলে বলা হয় সব ফাঁসি। আমরা সবগুলোয় ফাঁসি দেই না। ২০ থেকে ২৫টি অভিযোগের মধ্যে মাত্র একটি বা দুটিতে ফাঁসি দেই। বাতি অভিযোগে ফাঁসি দেয়া হয় না। আমরা মাত্র ১০ শতাংশ ফাঁসি দেই। এ সময় আসামীপক্ষের আইনজীবী এসএম শাহজাহান বলেন, একটি বা দুটি অভিযোগে ফাঁসি দিলেই তো হয়। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও এটিএম আজহারের পক্ষে জয়নুল আবেদীন তুহিন উপস্থিত ছিলেন। পরে আদালত  এ টি এম আজহারুল ইসলাম ও জাতীয় পার্টির  নেতা সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের  আপিল শুনানি ১০ অক্টোবর তারিখ ধার্য করেন। আদালতে এটিএম আজহারের পক্ষে অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন তুহিন এবং আর সৈয়দ কায়সারের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট এসএম শাজাহান। অপর দিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটির্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম খালাস চেয়ে ২০১৫ সালের ২৯ জানুয়ারি আপিল করেন। আপিলে তার খালাসের পক্ষে ১১৩টি যুক্তি তুলে ধরা হয়। ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করে রায় দিয়েছিল। অন্যদিকে জাতীয় পার্টির (জাপা) নেতা সাবেক কৃষি প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার খালাস চেয়ে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। আপিলে ট্রাইব্যুনালের রায় বাতিলের পাশাপাশি তাকে বেকসুর খালাস দেয়ার আবেদন জানানো হয়। ২০১৫ সালের ১৯ জানিুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায়  এই আপিল করা হয়। আপিলে খালাসের আরজিতে ৫৬টি যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে। ৫০ পৃষ্ঠার মূল আপিলের সঙ্গে প্রয়োজনীয় নথি সংযুক্ত রয়েছে। ২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আদালত কায়সারকে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করে রায় দেন। গণহত্যার একটি, হত্যা, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠনের ১৩টি ও ধর্ষণের দুটিসহ মোট ১৬টি অভিযোগ তার বিরুদ্ধে আনা হয়। এর মধ্যে ১৪টি ট্রাইব্যুনালের রায়ে প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে ৩, ৫, ৬, ৮, ১০, ১২ ও ১৬ নম্বর অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি এটিএম আজহারুল ইসলাম খালাস চেয়ে আপিল করেন। খালাসের পক্ষে আপিলে যুক্তি রয়েছে প্রায় ১১৩টি। মূল আপিল আবেদনে ৯০ পৃষ্ঠার সঙ্গে মোট দুই হাজার তিন শত ৪০ পৃষ্ঠার আবেদন জমা দেয়া হয়েছে। এডভোকেট অন রেকর্ড জয়নুল আবেদীন তুহিন এই আপিল দায়ের করেন। আপিল দায়েরের পর এটিএম আজহারের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আপিলে আমরা প্রত্যেকটি অভিযোগ চ্যালেঞ্জ করেছি। আমরা দেখিয়েছি, তিনি কোনো অপরাধের সাথে জড়িত ছিলেন না। এ মামলায় স্বাক্ষীদের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য এটিএম আজহারুল ইসলামকে নির্দোষ প্রমান করে।

No comments

Powered by Blogger.