আপিল বিভাগে মামলার তদন্ত রেকর্ড তলব

বেসিক ব্যাংকের অর্থ লুটপাটের ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তাধীন মামলার নথি তলব করেছেন সুপ্রিমকোর্টে আপিল বিভাগ। মামলাগুলোর তদন্তের সর্বশেষ অবস্থা জানতে আপিল বিভাগ এ আদেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন দুদকের প্রধান কৌঁসুলি খুরশিদ আলম খান। তিনি শনিবার যুগান্তরকে বলেন, বেসিক ব্যাংক সংক্রান্ত মামলা তদন্তের সর্বশেষ অবস্থা জানতে চেয়েছেন প্রধান বিচারপতি। আমি কমিশনকে বলেছি প্রথমে ২টি মামলার তদন্ত রেকর্ড প্রস্তুত করে দিতে। পরে বাকিগুলোরও দেয়া হবে। তিনি জানান, পৃথক দুটি মামলার এক আসামির জামিন বাতিলের বিষয়ে লিভ-টু আপিলের শুনানিতে ১০ আগস্ট এ নির্দেশ আসে আপিল বিভাগ থেকে। এদিকে দুদক সূত্রে জানা গেছে, বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চু ও তার নেতৃত্বাধীন পরিচালনা পর্ষদকে বাদ দিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তারা যে ৫ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন, সে বিষয়ে আগামী বৃহস্পতিবারের আগে কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না কমিশন। কারণ বাচ্চু ও পর্ষদকে মামলায় অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে আপিল বিভাগ থেকে কি ধরনের নির্দেশনা আসে তা দেখতে চায় কমিশন। যদিও এর আগে গত জুলাই মাসে পৃথক এক মামলায় এক আসামির জামিন শুনানির পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বেসিক ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের ওই মামলায় আবদুল হাই বাচ্চু ও পরিচালনা পর্ষদকে আইনের আওতায় আনতে নির্দেশ দিয়েছেন। ওই নির্দেশ বেসিক ব্যাংকের ৫৬ মামলার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য বলে মত দিয়েছেন দুদকের আইনজীবীরা। তবে ৫৬ মামলার মধ্যে ৫ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল হয়েছে বাচ্চু বা পর্ষদকে না জড়িয়েই। ৭ আগস্ট দুদকের ৫ জন কর্মকর্তা কমিশনে পৃথক ৫ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এসব মামলায় বেসিক ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কাজী ফখরুল ইসলাম ও ব্যাংকের ডিএসডিসহ সাবেক ১১ জন কর্মকর্তা এবং ঋণ গ্রহীতা ৫টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত ১৬ জনসহ ২৭ জনকে আসামি করা হয়। ৫ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রায় ১৭৫ কোটি টাকা ঋণের নামে লোপাটের অভিযোগ আনা হয় তদন্ত প্রতিবেদনে। বাকি ৫১ মামলার তদন্ত এখনও শেষ করতে পারেনি দুদক। ব্যাংকিং খাতে বড় ধরনের জালিয়াতির ঘটনায় ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ১২০ জনের বিরুদ্ধে ৫৬টি মামলা করে দুদক। এসব মামলায় অভিযোগ করা হয়, ঋণের নামে ব্যাংক থেকে অন্তত আড়াই হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ ঋণ অনিয়মের সঙ্গে ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চু ও তার নেতৃত্বাধীন পরিচালনা পর্ষদের জড়িত থাকার বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক এমনকি বেসিক ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ তদন্তে বেরিয়ে এলেও তাদের বাদ দিয়ে দুদক সে সময় মামলা করে সমালোচনার মুখে পড়ে। আর তদন্তকালে বাচ্চু বা পর্ষদের বিষয়ে কমিশন থেকে কোনো সিদ্ধান্ত না নেয়ায় তদন্ত কর্মকর্তারাও তাদের বিষয়ে আর আগাননি। দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান জানান, মতিঝিল থানায় দুদকের করা ৫০ ও ৫৩ নম্বর মামলার আসামি বেসিক ব্যাংকের সাবেক ডিজিএম জয়নাল আবেদীন চৌধুরীর জামিন মঞ্জুর করেন হাইকোর্ট। আমরা ওই জামিনের বিরুদ্ধে আবেদন করলে চেম্বার জজ আদালত জামিনের আদেশ স্থগিত করেন। এ অবস্থায় আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে লিভ-টু আপিলের শুনানি চলছে। এ পর্যায়ে আপিল বিভাগ ১০ আগস্ট বেসিক ব্যাংক সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলাগুলোর তদন্তের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানার জন্য রেকর্ডগুলো তলব করেন। ১৭ আগস্ট এ বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য আছে। মেসার্স আবজিহা এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও নীলসাগর এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে ১০৫ কোটি টাকা ঋণের নামে ব্যাংক থেকে নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে মতিঝিল থানায় পৃথক দ–টি মামলা করেছিল দুদক। মামলায় ব্যাংকের সাবেক এমডি কাজী ফখরুল ইসলামসহ ১১ জন আসামি। আইনজীবী জানান, আমরা ১৭ আগস্টের মধ্যে ওই দুটি মামলার তদন্ত রেকর্ড আদালতের নজরে আনব। দুদকের পক্ষ থেকে করা ৫৬ মামলায় মোট আসামি ১২০ জন। আর আত্মসাৎ করা অর্থের পরিমাণ দেখানো হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে বেসিক ব্যাংকের তিনটি শাখায় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ে। এর মধ্যে গুলশান শাখায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা, শান্তিনগর শাখার ৩৮৭ কোটি টাকা, মেইন শাখা প্রায় ২৪৮ কোটি টাকা ও দিলকুশা শাখায় ১৩০ কোটি টাকা অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ শনাক্ত করা হয়। পাশাপাশি বেসিক ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ তদন্তে আরও এক হাজার কোটি টাকার জালিয়াতির ঘটনা বেরিয়ে আসে। সব মিলে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ে।

No comments

Powered by Blogger.