বিএনপি ও আ’লীগ প্রার্থীরা সরব

আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে হাওর এলাকা সুনামগঞ্জ-১ (জামালগঞ্জ-ধর্মপাশা-তাহিরপুর ও মধ্যনগর) আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা তৎপর রয়েছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে এখন পর্যন্ত পাঁচজন এবং বিএনপি থেকে ছয়জন প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে কাজ করছেন। রাজনৈতিক কর্মসূচি ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে নিজেদের প্রার্থিতা জানান দিচ্ছেন ভোটারদের। দলীয় মনোনয়ন পেতে সম্ভাব্য প্রার্থীরা কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে ব্যাপক লবিং ও দৌড়ঝাঁপ করছেন। কে পাবেন আওয়ামী লীগ-বিএনপির মনোনয়ন নামের সোনার হরিণ এ নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। দু’দলের এসব প্রার্থীর মধ্যে রয়েছেনÑ সুনামগঞ্জ-১ আসনের বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, সাবেক এমপি সৈয়দ রফিকুল হক সোহেল, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম শামীম, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক যুগ্ম সচিব বিনয় ভূষণ তালুকদার, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রনজিৎ সরকার, জামালগঞ্জের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শামীমা শাহরিয়ার।
অন্য দিকে বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণায় রয়েছেন- সাবেক এমপি সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজির হোসেন, সাবেক ড্যাব সভাপতি গেল নির্বাচনের প্রার্থী ডা: রফিক চৌধুরী, তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সাংগঠানিক সম্পাদক কামরুজ্জামান কামরুল, তাহিরপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি মো: আনিসুল হক, যুক্তরাজ্য প্রবাসী ব্যারিস্টার হামিদুল হক আফিন্দি লিটন এবং ধর্মপাশার উপজেলা চেয়ারম্যান মো: মোতালিব খান। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এই আসনটি ধরে রাখার জন্য দুইবারের এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে হাওরের গ্রামে গ্রামে ঘুরে উন্নয়ন কাজ করে সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম শামীম তৃণমূল নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন জোরেশোরে। অপর দিকে এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন সাবেক এমপি সৈয়দ রফিকুল হক সোহেল। তিনিও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক যুগ্ম সচিব বিনয় ভূষণ তালুকদার দলীয় কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে প্রচার চালিয়ে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। সুনামগঞ্জ-১ আসনে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রনজিৎ সরকার মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে তৃতীয়বারের মতো সমর্থক ও দলীয় নেতাকর্মী নিয়ে মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন দীর্ঘ দিন থেকে।
ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেছেন, আমি দুইবার নির্বাচিত হওয়ার পর সুনামগঞ্জ-১ আসনে যে উন্নয়ন হয়েছে অতীতে এমন উন্নয়ন কেউ কখনো করেনি। আমি নির্বাচিত হয়ে এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা, বিদ্যুতায়ন, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান, দরিদ্র ভূমিহীনদের ভূমিদানসহ সব ক্ষেত্রেই সুদূরপ্রসারী উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এলাকার উন্নয়ন আরো ত্বরান্বিত করতে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করব। সবাইকে নৌকার পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। রেজাউল করিম শামীম বলেন, আমি ছাত্রজীবন থেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে ছাত্রলীগের রাজনীতি করে আসছি, স্মরণকালের অকাল বন্যায় সৃষ্ট দুর্যোগে হাওরাঞ্চলের মানুষের পাশে বারবার গিয়ে সাহস জুগিয়েছি। শেখ হাসিনা যদি আমাকে মনোনয়ন দেন তাহলে আমি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আছি। নির্বাচনী এলাকায় যথেষ্ট জনপ্রিয়তা আমার রয়েছে। তৃণমূল নেতাকর্মী ও ভোটারেরা আমাকে নৌকার প্রার্থী দেখতে চান। বিনয় ভূষণ তালুকদার বলেন, সামাজিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে আওয়ামী লীগ সরকারের সফলতা, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিগুলোর বিষয়ে জনগণকে অবহিতকরণসহ শেখ হাসিনার ভিশন ২০২১-’৪১ বাস্তবায়নে কার্যকর অংশগ্রহণের লক্ষ্যে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে আসছি। রনজিৎ সরকার বলেন, আমি এলাকার ছেলে এলাকায় আমার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। সবার সাথে যোগাযোগ হচ্ছে, সবাই আমাকে গ্রহণ করছে। তৃণমূলের মতামত নিলে আমি দলীয় মনোনয়ন পেতে তৃতীয়বারের মতো কাজ করছি। এবার নির্বাচনে নৌকা মার্কা নিয়ে অংশ গ্রহণ করব, আশা করি প্রধান মন্ত্রী এবার আমাকে নিরাশ করবে না। অন্য দিকে, বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা সুনামগঞ্জ-১ আসনটি উদ্ধারে পছন্দের প্রার্থীদের নিয়ে মরিয়া হয়ে প্রচারণায় নেমেছেন। বিএনপির সাবেক এমপি নজির হোসেন বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার সাথে কথা বলেছি, উনার নির্দেশেই দলের স্বার্থে এলাকায় গণসংযোগ করছি। সবার সাথে যোগাযোগ করছি দল চাঙ্গা করতে, তৃণমূল নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা আমাকেই প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান। অতীতে আমার উন্নয়ন কাজের কারণে এই এলাকায় আমার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। সব সময় তৃণমূলে উৎসাহজনক সাড়া পাচ্ছি। তিনি মনে করেন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করলে এই আসনে বিজয় সুনিশ্চিত। নজির হোসেন বলেন, বেগম খালেদা জিয়া যাকে মনোনয়ন দেবেন তার পক্ষে কাজ করলে এই আসনটিতে আমরা নিশ্চিত বিজয়ী হবো। ডা: রফিক চৌধুরী বলেন, আমি ধানের শীষ নিয়ে এই এলাকায় নির্বাচন করেছি, আমাকে কৌশলে অল্পের জন্য পরাজিত করা হয়েছে। আমার বিশ্বাস বেগম খালেদা জিয়া এবার আমাকেই বিএনপির প্রার্থী করবেন। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমিই পাস করব।
কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর তৃণমূল নেতাকর্মী ও সমর্থকদের চাপে সংসদ নির্বাচন করার জন্য মাঠে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। হাওরের মানুষের নানা আন্দোলন-সংগ্রামে আমি সোচ্চার। নির্বাচনে মনোনয়নের প্রত্যাশায় আমি দলীয় নেতাকর্মী নিয়ে সাধারণ মানুষের সাথে ব্যাপকভাবে গণসংযোগ করে যাচ্ছি। অপর প্রার্থী জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনিসুল হক বলেন, গত বছর আমি মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলাম, দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে মাঠ সরব রেখেছি। ইতোমধ্যে আমি দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করে নির্বাচন করার সুযোগ চেয়েছি। বিএনপি চেয়ারপারসনের নির্দেশে ক্ষতিগ্রস্ত হাওরাঞ্চলের মানুষের মধ্যে গণসংযোগ করে যাচ্ছি। সাধ্যমতো হাওরবাসীর পাশে থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছি। সেই সাথে আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে, সুনামগঞ্জ-১ আসনে সব আন্দোলন-সংগ্রামে ত্যাগী নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে কাজ করছি। আশা করি কেন্দ্রীয় নেতারা আমাকে মূল্যায়ন করবেন। ধর্মপাশা উপজেলা চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আ: মোতালিব খান বলেন, আমি সব সময় সাধারণ মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে আছি, আর সবসময় থাকব। প্রতিটি উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে গণসংযোগ করছি। আমিও দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করি। আশা করি আমার জনসমর্থন মূল্যায়ন করবেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

No comments

Powered by Blogger.