ভালোবেসে প্রাণ গেল কিশোরের

স্বপ্ন ছিল ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে ঘর বাঁধার। তাই প্রেমিকাকে নিয়ে পালিয়েছিল কিশোর মহব্বত শিকদার (১৫)। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে রাতে স্থানীয় যুবকদের হাতে ধরা পড়ে যায়। তাদের উদ্ধারের খরচ মেটানোর জন্য বসানো হয় সালিশ বৈঠক। সেখানে দু’ পরিবারকে অর্থদণ্ড করা হয়। জরিমানার টাকা দিয়ে রাতেই বাড়ি ফেরে প্রেমিকা। কিন্তু টাকা পরিশোধ করতে না পারায় মহব্বতকে ধরে নিয়ে যায় কয়েক যুবক। পরে ভোররাতে বাড়ির পাশের গাছে ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়। স্থানীয়রা জানায়, নিহত মহব্বত শিকদার পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার উত্তর কাজীকান্দা গ্রামের বাদশা শিকদারের ছেলে। সে মৌডুবি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্র। তার সঙ্গে সম্পর্ক হয় স্কুলের ৭ম শ্রেণীতে পড়–য়া এক ছাত্রীর। তাকে নিয়ে ঘর বাঁধার আশায় শুক্রবার গভীর রাতে বাড়ি থেকে পালায় মহব্বত। শনিবার রাত ৯টার দিকে পার্শ্ববর্তী তক্তাবুনিয়া গ্রাম থেকে তাদেরকে উদ্ধার হয়। রাতেই দু’জনকে নিয়ে সালিশ বৈঠক বসে দক্ষিণ কাজিকান্দা গ্রামের রাসেল হাওলাদারের বাড়িতে। সালিশে ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা জোবায়ের হাওলাদার, জুয়েল হাওলাদার, সানাউল কারিসহ ৮-১০ জন। সালিশে বলা হয়, দু’জনকে উদ্ধারে স্থানীয় যুবকরা বাইক (মোটরসাইকেল) নিয়ে ঘুরেছেন। তারা বাইকের তেল পুড়েছেন, নিজের টাকা খরচ করে তাদের খুঁজেছেন। তাদেরকে দুই পরিবারের পক্ষ থেকে খরচ দিতে হবে। সে অনুযায়ী ছেলের পরিবারকে ৫০ হাজার এবং মেয়ের পরিবার পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
টাকা দিয়ে কিশোরী রাতেই তার পরিবারের সঙ্গে ঘরে ফেরে। মহব্বতের দাদি আঞ্জুমানারা বেগম বলেন, জরিমানা না দিয়ে তিনি বহু অনুনয়বিনয় করে নাতিকে রাত ১২টার দিকে সালিশ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন। পরে রাত ৩টার দিকে ১০-১২ যুবক তার ঘরে ঢোকে। একপর্যায়ে তার মুখ চেপে নাতিকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। ঘটনার পর তিনি চিৎকার দিলে স্থানীয়রা ছুটে আসে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর ভোরে মহব্বতের লাশ পাওয়া যায় বাড়ির পাশের গাছের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায়। আঞ্জুমানার দাবি, তার নাতিকে হত্যা করা হয়েছে। মহব্বতের বাবা জানান, তিনি এ ঘটনায় মামলা করবেন। এদিকে সালিশদাররা জানান, ভালোবেসে কিশোর-কিশোরী ঘর ছেড়ে পালিয়েছিল। দুই পরিবার তাদের উদ্ধারে স্থানীয়দের সহযোগিতা চেয়েছিল। সে অনুযায়ী স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে পরিবারের জিম্মায় দিয়েছে। গাইয়াপাড়ার ব্যবসায়ী হাসান বাইক ভাড়া বাবদ ৫ হাজার টাকা দাবি করেছিল। মেয়ের পরিবার সে টাকা সালিশ বৈঠক শেষে দিয়েছে। তবে ছেলের পরিবারকে কোনো জরিমানা করা হয়নি। ওসি সামছুল আরেফীন বলেন, এক স্কুলছাত্রের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর রহস্য জানা যাবে।

No comments

Powered by Blogger.