৭০ জঙ্গি-সহযোগী নিয়ে মাহফুজ সক্রিয় হন ভারতে

২০ জন প্রশিক্ষিত জঙ্গি ও ৫০ সহযোগী নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে নব্য জেএমবির কার্যক্রম শুরু করেছিলেন হলি আর্টিজান হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা সোহেল। জিজ্ঞাসাবাদে জেএমবির সর্বকনিষ্ঠ শূরা সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী সোহেল এসব কথা অবলীলায় স্বীকার করেছেন। তবে হাতকাটার পর সংগঠনে তার গুরুত্ব কমে যাওয়ার বিষয়টিও বলেছেন সোহেল মাহফুজ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার ভয়ে ২০০৪ সালে পশ্চিমবঙ্গের শীর্ষ জঙ্গি বিল্লালের হাত ধরে তিনি ভারতে পাড়ি জমান। সেখানে দীর্ঘ সময় ধরে তৎপর ছিলেন তিনি। কিন্তু তাকে পশ্চিমবঙ্গের আমীর না করে দায়িত্ব দেয়া হয় সবুজ নামের আরেকজনকে। এতে তিনি কিছুটা হতাশ হন এবং ২০১৫ সালে দেশে ফিরে নাম লেখান নব্য জেএমবিতে। জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের সদস্যদের (সিটিটিসি) সঙ্গে আলাপে এসব তথ্য পাওয়া যায়। স্পেশাল টাস্কফোর্স অব কলকাতা পুলিশও (এসটিএফ) তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। বর্ধমান হামলাসহ ভারতে জঙ্গি তৎপরতায় তার সম্পৃক্ততা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন এসটিএফ সদস্যরা। তিন সদস্যের এ ভারতীয় গোয়েন্দা টিমটি শনিবার ও রোববার কয়েক ঘণ্টা ধরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তারা শুধু বাংলাদেশি জঙ্গিদের ভারত কানেকশন নয়, সোহেল মাহফুজ কিভাবে, কার হাত ধরে, কেন জঙ্গিবাদে জড়ালেন- এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছেন। আজ সোমবার ভারতের আরও একটি টিমের বাংলাদেশে আসার কথা জানিয়েছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে উপস্থিত সিটিটিসির একাধিক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, সোহেল নিজ থেকে কোনো তথ্য আমাদের দিচ্ছেন না।
আমরা জানতে চাইলেই কেবল তিনি উত্তর দিচ্ছেন। এসটিএফের জিজ্ঞাসাবাদে সোহেল মাহফুজ জানিয়েছেন, তিনি জেএমবির সর্বকনিষ্ঠ শূরা সদস্য ছিলেন। ২০০৮ সাল থেকেই তার সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বাংলা ভাই যখন রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে জঙ্গি কার্যক্রম শুরু করেন, তখনই মাহফুজ জেএমবিতে সক্রিয় হয়ে উঠেন। বাংলা ভাইকে মোটরসাইকেলের পেছনে বসিয়ে তিনি ঘোরাফেরা করতেন। তাকে নিয়ে বহু অপারেশনেও যান বাংলা ভাই। সংগঠনের অনেক কিছুই মাহফুজের জানা। ২০০৪ সালেই ভারতে জেএমবির শাখা গড়ে তোলার বিষয়টি মাথায় আসে তৎকালীন শীর্ষ জঙ্গি শায়খ আবদুর রহমানের। জঙ্গি মাহফুজ বলেছেন, ২০০৪ সালের প্রথমদিকে ভারতের মুর্শিদাবাদ থেকে বিল্লাল নামের এক সদস্য বাংলাদেশে আসেন। শীর্ষ নেতাদের সিদ্ধান্তে বিল্লালের সঙ্গে মাহফুজকে ভারতে পাঠানো হয়। সিটিটিসির এক অতিরিক্তি উপ-কমিশনার যুগান্তরকে বলেন, রিমান্ডে সিটিটিসির পাশাপাশি এসটিএফের সদস্যরাও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদে বর্ধমান হামলা ও পশ্চিমবঙ্গে নব্য জেএমবির নেটওয়ার্ক নিয়ে অনেক তথ্য দিয়েছেন মাহফুজ। তিনি বলেন, তাকে নুতন করে রিমান্ডে আনা হবে। পুলিশ সদর দফতরের এআইজি মিডিয়া সোহেলী ফেরদৌসি যুগান্তরকে বলেন, জঙ্গি সোহেল মাহফুজকে জিজ্ঞাসাবাদে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইয়ের একটি টিমেরও সোমবার বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.