যুগান্তর শাহজাদপুর প্রতিনিধিকে হত্যার চেষ্টা

বাঘাবাড়ী তেল ডিপো থেকে তেল চুরির ঘটনা ওপেন-সিক্রেট। বিষয়টি ওই অঞ্চলের মানুষের মুখে মুখে। আর তেল চুরির সংবাদ পরিবেশন করায় হামলার শিকার হয়েছেন যুগান্তর ও বিজয় টিভির শাহজাদপুর প্রতিনিধি মো. মুমীদুজ্জামান জাহান। শ্রমিক নামধারী একটি চক্র এই তেল চুরির সঙ্গে জড়িত। তারাই রোববার দুপুরে খোদ বাঘাবাড়ী অয়েল ডিপো অফিসে মুমীদুজ্জামানকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে, হত্যার অপচেষ্টা চালায়। গুরুতর আহত জাহান বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। মুমীদ পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাঘাবাড়ী তেল ডিপোতে যান। ওতপেতে থাকা তেলচোরের দল তাকে দেখে অতর্কিত হামলা চালায়। প্রাণ রক্ষার্থে তিনি দৌড়ে যমুনা অয়েল ডিপো অফিস কক্ষে ঢুকে পড়েন। সন্ত্রাসীরা সেখানে ঢুকেই তাকে বেধড়ক মারধর করে। গুরুতর আহত মুমীদ বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। শনিবার ‘বাঘাবাড়ী নৌবন্দর, ছয় লাখ লিটার অবৈধ ডিজেল কালোবাজারে বিক্রি’ শিরোনামে যুগান্তরের শেষ পৃষ্ঠায় খবর প্রকাশিত হয়। এর ‘ফলো আপ’ করতে রোববার দুপুর ১২টার দিকে মুমীদুজ্জামানসহ ৩ সাংবাদিক বাংলাদেশ পেট্রোরিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) বাঘাবাড়ী অয়েল ডিপোতে যান। অপর সাংবাদিকরা হলেন, কালের কণ্ঠের আতাউর রহমান পিন্টু ও সকালের খবরের আবদুল কুদ্দুস। নিরাপত্তা কর্মীদের সামনেই ডিপোর ভেতরে ট্যাংকলরি থেকে তেল চুরির ঘটনা তাদের দৃষ্টিগোচর হয়। শ্রমিক নামধারী একটি সংঘবদ্ধ চক্র এটা করছিল। মুমীদুজ্জামান এই দৃশ্য ক্যামেরায় ধারণ করেন। এতে দুর্বৃত্তরা ক্ষিপ্ত হয়ে তার ওপর চড়াও হয়। তিনি দ্রুত যমুনা অয়েল ডিপো অফিসে ঢুকে আত্মরক্ষা করেন। এ সময় যমুনা অয়েল ডিপোর ম্যানেজার অফিসে না থাকায় মোবাইলে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার অফিসে সাংবাদিকদের অপেক্ষা করতে বলেন। সাংবাদিকরা তখন সেখানে অপেক্ষা না করে বাঘাবাড়ী পোর্ট অফিসারের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করতে চলে যান। দুপুর ২টার দিকে সেখান থেকে ফিরে আবারও তারা যমুনা অয়েল ডিপোতে যান। সেখানে ডিপোর নিরাপত্তাকর্মীরা তাদের ভেতরে ঢুকতে বাধা দেয়। বাধা পেরিয়ে ভেতরে যাওয়ার সময় ওই তেল দুর্বৃত্তরা মুমীদুজ্জামানের ওপর হামলা চালায়। তিনি প্রাণ বাঁচাতে দৌড়ে যমুনা অয়েল ডিপোর অফিস সহকারীর কক্ষে ঢুকে পড়েন। সন্ত্রাসীরা সেখানেই তার ওপর হামলা চালায়। তার মোবাইল ফোন ও ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। প্যান্টের পকেট থেকে টাকা ছিনিয়ে নেয়। এ সময় অফিস ও আশপাশের লোকজন এবং তার সহকর্মীরা তাকে উদ্ধার করে যমুনা অয়েল ডিপোর ম্যানেজার আবদুল মজিদের কক্ষে নিয়ে যান। শাহজাদপুর থানার ওসি খাজা গোলাম কিবরিয়াকে ফোনে ঘটনাটি জানিয়ে সাহায্য চাওয়া হলে বেশ কিছুক্ষণ পর এসআই কমল দেবনাথ একদল পুলিশ নিয়ে সেখান থেকে জাহানকে উদ্ধার করে বাড়ি পৌঁছে দেন। পরে গুরুতর আহত জাহানকে শাহজাদপুরের পোতাজিয়ার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। বিষয়টি তাৎক্ষণিক বাঘাবাড়ীর উত্তরবঙ্গ ট্যাংকলরির সভাপতি শাহজাহান সিরাজকে জানানো হয়। সিরাজ এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বিষয়টি নিয়ে নিউজ ও মামলা না করার অনুরোধ জানান। এ ছাড়া দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। এ ঘটনায় শাহজাদপুরে কর্মরত সাংবাদিকরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। এ ছাড়া তারা অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শাহজাদপুর থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছিল। জানা যায়, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ী নৌবন্দরের একটি ঘাট দিয়ে অবৈধভাবে ৬ লাখ লিটার ডিজেল উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে পাচার করে কালোবাজারে বিক্রি করা হয়। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। প্রতি লিটার ডিজেল ৬২ টাকা ৮১ পয়সা হিসেবে এর বাজারমূল্য ৩ কোটি ৭৬ লাখ ৮৬ হাজার টাকা বলে জানা যায়।

No comments

Powered by Blogger.