দুর্গত এলাকায় পুনর্বাসনের সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুর্গত এলাকার মানুষের পুনর্বাসনে সরকার সকল ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘জনগণের সেবার জন্যই আমরা রাজনীতি করি। শুধু সরকারি দলে থাকলেই নয়, বিরোধী দলে থাকতেও আমরা দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। ঘূর্ণিঝড় দুর্গত এলাকার মানুষের সহযোগিতায় সরকারিভাবে এবং দলীয়ভাবে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রশাসনের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কয়েকটি টিম গঠন করা হয়েছে। এসব টিম আজই দুর্গত এলাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে। তারা সেখানে গিয়ে দেখবে দুর্গত মানুষের কি ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন।’ প্রধানমন্ত্রী আজ সংসদে তার জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, ইতোমধ্যে নৌবাহিনীর দুটি জাহাজ ত্রাণ নিয়ে দুর্গত এলাকায় পৌছেছে। বিমান বাহিনীও প্রস্তুত রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। যাদের ঘরবাড়ি নষ্ট হয়েছে তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। নিশ্চয়ই তাদের ঘর-বাড়ি তৈরি করে দেয়া হবে। প্রত্যেকে যাতে ঘর বানাতে পারেন সে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের সময় বিএনপি ক্ষমতায় ছিল। সে সময় ঘুর্ণিঝড়ের আগাম কোন ঘোষণা বা প্রস্তুতি না থাকার কারণে লাখ লাখ মানুষ মারা গিয়েছিল। মানুষের পাশাপাশি গবাদী পশু, জমির ফসল সব পানিতে ভেসে গিয়েছিল। তখনও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে টিম নিয়ে দুর্গত এলাকায় গিয়েছিল। মানুষের দাফনের ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। তখন সংসদে বিষয়টি উত্থাপন করা হলে তৎকালীন সংসদ নেতা বেগম খালেদা জিয়া দাঁড়িয়ে বলেছিলেন-‘যত মানুষ মরার কথা ছিল তত মানুষ মরেনি’। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সব সময় সতর্ক। ঝড় আসলে কি কি করণীয়, এ ব্যাপারে একটি বই ছাপানো হয়েছে। বইটিতে স্থানীয় প্রশাসন ও কেন্দ্রীয়ভাবে কি করণীয় এ ব্যাপারে সব ধরনের গাইড লাইন দেয়া রয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দেশের উপকূলীয় মানুষের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।
১শ’টি বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। আরও ২২০টি বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রের নির্মাণকাজ চলছে। ভবিষ্যতে আরও আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। সতন্ত্র সদস্য রুস্তম আলী ফরাজীর অপর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের সাথী। দুর্যোগ মোকাবেলার সক্ষমতাও আমাদের রয়েছে এবং আমরা এই সক্ষমতার প্রমান রেখেছি।’ হাওর ও উপকুলীয় এলাকায় বেরিবাঁধ নির্মাণ করা হবে উল্লেখ করে তিনি পানি উন্নয়ন মন্ত্রণালয়কে প্রকল্প বাস্তবায়নে আরও গতিশীল হওয়ার আহবান জানান। সরকারি দলের সদস্য মো. আবদুল্লাহ’র এক তারকা চিহ্নিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত হাওরবাসীর দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে আমি স্বয়ং দুইবার দুর্ঘত এলাকা পরিদর্শন করেছি। এছাড়া সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তি, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সচিব ও সিনিয়র সচিবসহ বিভিন্ন কর্মকর্তারা বন্যাকবলিত এলাকা নিয়মিত পরিদর্শন করছেন।’ তিনি বলেন, পাহাড়ি ঢল ও আকষ্মিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হাওরবাসীর দুর্দশা লাঘবে ২২ মে পর্যন্ত ৩ হাজার ৯২৪ মেট্রিক টন জিআর চাল, ২ কোটি ২৪ লাখ ৯৭ হাজার টাকা জিআর ক্যাশ, ৩ লাখ ৩০ হাজার পরিবারকে মাসিক ৩০ কেজি হারে (২৩ এপ্রিল থেকে জুলাই, ২০১৭) ৩ মাস ৮ দিনের জন্য মোট ৩২ হাজার ৩৪০ মেট্রিক টন ভিজিএফ চাল, ৩ লাখ ৩০ হাজার পরিবারকে মাসিক ৫শ’ টাকা হারে ৩ মাসের জন্য (মে-জুলাই, ২০১৭) মোট ৪৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা, অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসৃজন কর্মসূচির আওতায় ৯১ হাজার ৪৪৭ জন সুবিধাভোগীকে ৮২ কোটি ৭ লাখ ৬৮৯ টাকা, ৫টি জেলার ৫০ হাজার ক্ষতিগ্রস্ত মৎসজীবী ও ক্ষুদ্র কৃষক পরিবারকে মাসিক ৩০ কেজি হারে ৩ মাসের জন্য মোট ৪ হাজার ৫ শ’ টন এবং পরিবার প্রতি ৫ শ’ টাকা হারে ৩ মাসের জন্য ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সূত্র : বাসস

No comments

Powered by Blogger.