ফরাসি নির্বাচনে ইতিহাসের কালো ছায়া

‘এটা এমন এক অতীত, যা অতিক্রম করা যায় না’- ফরাসি ইতিহাসবিদ হেনরি রুসো এই বাক্যটি প্রথম বলেছিলেন। ফ্রান্সের এমন কিছু কালো ইতিহাস আছে, যা চাইলেই মুছে ফেলা যাবে না। এই প্রবাদটি আরও বেশি উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইহুদি নিধনযজ্ঞ হলোকাস্টে ফ্রান্সের সহযোগিতা আর ঔপনিবেশিক অপরাধ- এই দুই জঘন্য ইতিহাসের নতুন ব্যাখ্যা দিচ্ছেন বর্তমানের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। রোববারের নির্বাচনে ভোটাররা বেছে নেবেন ইতিহাসের বিকৃতিকারী ও নৃশংসতার অস্বীকারকারীকে ক্ষমতায় পাঠাবেন কিনা। এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও মেরিন লি পেন চূড়ান্ত পর্বের রানঅফ ভোটে প্রার্থী। ম্যাক্রোঁ একজন সাবেক ব্যাংকার ও একাডেমিক এলিট। রাজনীতিতে নবাগত এই নেতা ইউরোপঘেঁষা মধ্যপন্থী দর্শনে বিশ্বাসী। অপরজন লি পেন উগ্র ডানপন্থী জাতীয়তাবাদী। তিনি অর্থনৈতিক সংরক্ষণবাদ ও সীমান্ত বন্ধে বিশ্বাস করেন। এই দুই প্রার্থী তাদের দীর্ঘ ও তিক্ত নির্বাচনী প্রচারণায় ফ্রান্সের কালো ইতিহাস নিয়ে পরস্পরের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছেন। মেরিন লি পেনের বাবা জ্যঁ ম্যারি লি পেন একজন হলোকাস্ট অস্বীকারকারী।
তিনি অনেকবারই বলেছেন, নাৎসিরা ইহুদিদের গ্যাস চেম্বারে ঢুকিয়ে হত্যা করেনি। তার মেয়ে লি পেনের মতে, ওই ইতিহাস নিয়ে ফ্রান্সের লজ্জিত হওয়ার কিছু নেই। গত মাসেই টেলিভিশন বক্তব্যে প্রকাশ্যে লি পেন বলেছেন, হলোকাস্টের সময়কার কুখ্যাত কাজে ফ্রান্সের কোনো দায় নেই। অথচ সে সময় ফরাসি সরকার ১৩ হাজার ইহুদিকে আটক করে নাৎসিদের গ্যাস চেম্বারে মৃত্যুর মুখে পাঠিয়েছিলেন। ইতিহাস বলে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ফরাসি কর্তৃপক্ষ ৭৬ হাজার ইহুদিকে নাৎসি ক্যাম্পে পাঠিয়েছিল, যারা আর কখনোই ফিরে আসেনি। লি পেন বলেন, ওই ঘটনায় যদি কারও দায় থেকে থাকে, তবে সে সময় যারা ক্ষমতায় ছিল তাদের। এটা নিয়ে ফরাসি রাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করা যাবে না। ২০১৭ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হলোকাস্ট অস্বীকারের নতুন নতুন ভার্সন সামনে এসেছে। শুধু লি পেনই নন, তার দল ন্যাশনাল ফ্রন্টের অনেক নেতাই একই বক্তব্য রেখেছেন। অন্যদিকে এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ রাজনৈতিক ঝুঁকি নিয়েও কালো ইতিহাসের নিন্দাই জানাচ্ছেন। বিশেষ করে ঔপনিবেশিক ফ্রান্সের ইতিহাস নিয়ে সমালোচনা করছেন। ফেব্রুয়ারিতে তিনি আলজেরিয়ায় গিয়েছিলেন। আলজেরিয়া ফরাসি উপনিবেশ ছিল ১৩২ বছর। ১৯৫৪ থেকে ১৯৬২ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধে ফরাসি বাহিনী বর্বর নিপীড়ন চালিয়েছিল। ম্যাক্রোঁ এক সাক্ষাৎকারে বলেন, সেসব অপরাধ ও বর্বরতা আজকের যুগে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ বলে গণ্য হবে। এর প্রতিক্রিয়ায় লি পেন ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, ম্যাক্রোঁ ফরাসি জনগণকে অপমান করেছেন। ওয়াশিংটন পোস্ট।

No comments

Powered by Blogger.