ট্রাম্পের সৌদি সফরের নেপথ্যে মুসলিম ইস্যু, অস্ত্র বিক্রি?

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রথম বিদেশ সফরের স্থান হিসেবে সৌদি আরবকে বেছে নিয়েছেন। ট্রাম্পের এক সমর্থক বলছেন, এর মাধ্যমে মুসলিমবিশ্বের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ও মুসলিম নেতাদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এতে সন্ত্রাসবাদ দমনে তার কঠোর ভূমিকার ইঙ্গিত মিলছে। শুক্রবার পাকিস্তান বংশোদ্ভূত এক মার্কিনি সাজিদ তারার পিটিআইকে বলেন, সৌদি আরবে ট্রাম্পের প্রথম বিদেশি সফরের ঘোষণায় এটার আভাস পাওয়া যাচ্ছে যে তিনি ইসলামবিরোধী নন, কিন্তু জঙ্গিবাদের ঘোর বিরোধী। মুসলিম আমেরিকান ফর ট্রাম্পের প্রতিষ্ঠাতা সাজিদ আরও বলেন, সৌদিতে তার প্রথম সফরের মধ্যে অনেক কিছুই লুকায়িত রয়েছে। তিনি মুসলিম নেতাদের সঙ্গে সখ্য গড়তে চান বলেও ইঙ্গিত মিলছে। বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে ধর্মীয় সংগঠনগুলোর কর কমানোর বিষয়ে নির্বাহী আদেশ জারি উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে ট্রাম্প সৌদি সফরের ঘোষণা দেন। ওই অনুষ্ঠানে মুসলিম নেতাদের মধ্যে আমন্ত্রিত অতিথিদের একজন ছিলেন সাজিদ। তিনি বলেন, ‘এটি একটি ভালো সিদ্ধান্ত যে ট্রাম্প তার প্রথম সফর সৌদি আরব থেকে শুরু করবেন।
এরপর ইসরাইল যাবেন, সেখান থেকে তিনি ভ্যাটিকান সিটিতে সফর করবেন। এর মাধ্যমে আইএস জঙ্গি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তার যুদ্ধ ও মধ্যপ্রাচ্যকে পরিবর্তন করে দেয়ার অঙ্গীকারের প্রতিফলন ঘটছে।’ সাজিদ দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘মুসলিম বিশ্বের নেতারা কট্টর ইসলামিক জঙ্গিবাদ দমনে তাদের কার্যকর ভূমিকা পালন করছেন না। বর্তমানে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কী ঘটছে? এ ইস্যুটি ইয়েমেন ও ইরানের মতো দেশের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। অথচ উভয় দেশই সৌদি আরবের ঘোর শত্রু।’ মার্কিন নির্বাচনে প্রচারণার সময় থেকে প্রথম কোনো মুসলিম নেতা হিসেবে সাজিদ তারার ট্রাম্পের পক্ষে সমর্থন জানিয়ে আসছেন। তিনি আরও বলেন, ট্রাম্প ইসলামের বিরুদ্ধে নন। তিনি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে। নির্বাচনী প্রচারণার সময় থেকে তিনি বারবার বলে এসেছেন, তিনি ধর্মবিরোধী নন। অথচ বিগত মার্কিন প্রশাসন ৮ বছরে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর ও কার্যকর ভূমিকা নিতে দোটানায় ছিল। চলতি মাসের শেষদিকে ট্রাম্প তার প্রথম সফরে সৌদি আরব, ইসরাইল ও রোমে যাবেন। আগামী ২৫ মে ব্রাসেলসে ন্যাটো সম্মেলন এবং ২৬-২৭ মে ইতালির সিসিলিতে জি-৭ সম্মেলনে যোগ দেয়ার মাধ্যমে তিনি তার সফর শেষ করবেন। এর আগে ২৪ মে ভ্যাটিকানে যাত্রা বিরতি করবেন ট্রাম্প। সেখানে ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে তার বৈঠক হতে পারে।
সৌদির কাছে বিপুল অস্ত্র বিক্রি করবে যুক্তরাষ্ট্র : ডোনাল্ড ট্রাম্পের আসন্ন সৌদি আরব সফরে হাজার কোটি ডলার সমমূল্যের অস্ত্র চুক্তি স্বাক্ষর করার পরিকল্পনা রয়েছে। চুক্তিতে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা টার্মিনাল হাই অলটিচিউড এরিয়া ডিফেন্স (থাড) ব্যবস্থাও অন্তর্ভুক্ত করার সম্ভাবনা রয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তার বরাতে রয়টার্স জানায়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সৌদি আরবের সঙ্গে মার্কিন অস্ত্র উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান লকহিড মার্টিনের তৈরি ১০০ কোটি ডলার মূল্যের থাড ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা চুক্তির ব্যাপারে দরকষাকষি করবেন। চুক্তিতে যুদ্ধ কমান্ড, কন্ট্রোল এবং কমিউনিকেশনের জন্য সি২বিএমসি সফটওয়্যার সিস্টেম অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এছাড়া অন্তর্ভুক্ত থাকবে স্যাটেলাইট ব্যবস্থাও। যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবের সঙ্গে চারটি মাল্টি-মিশন যুদ্ধ জাহাজ ও প্রযুক্তিগত সহায়তার জন্য ১ হাজার ১৫০ কোটি ডলার মূল্যের চুক্তিও স্বাক্ষর করবে। এ চুক্তিটি ২০১৫ সালে ওবামা প্রশাসন অনুমোদন দেয়।
কিন্তু দুই দেশের মতবিরোধের কারণে এখনও তা কার্যকর হয়নি। এছাড়া ট্রাম্প সৌদির কাছে ১০০ কোটি ডলারেরও বেশি মূল্যের যুক্তরাষ্ট্রের রাইথিওয়ান কোম্পানির তৈরি লেজার বোমা বিক্রি করবে। এ ধরনের বোমা সৌদি সরকার ইয়েমেনে ব্যবহার করে আসছে যেগুলো যুক্তরাষ্ট্র সৌদিতে সরবরাহ করে। তবে ২০১৫ সালে ওবামা সৌদিতে লেজার বোমা বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন। বর্তমানে মার্কিন প্রশাসন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে গুরুত্ব দিচ্ছে। বারাক ওবামা প্রশাসনের সময় ইরান ও ছয় রাষ্ট্রের মধ্যে পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ায় নাখোশ ছিল সৌদি আরব। কিন্তু মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস গত মাসে তার সৌদি সফরের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের ওপর গুরুত্ব দেন। সৌদির কাছে হাজার কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রি করবে যুক্তরাষ্ট্র।

No comments

Powered by Blogger.