‘জানলে রক্ত বেইচ্যা দাবি পূরণ করতাম’

‘ও বোন তুই আমারে বললি না কেন? আমি জানলে রক্ত বেইচ্যা ওই পাষণ্ডের দাবি পূরণ করতাম। তবুও তোরে এভাবে মরতে দিতাম না। মাত্র ২০ হাজার টাকার জন্য আমার বোনটারে পেট্রোলে পুড়িয়ে মারল। এই পাষণ্ডের বিচার হবে তো? আমরা ন্যায়বিচার পাব তো?’ রোববার দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে ঢামেকের লাশকাটা ঘরের পাশের রাস্তায় বসে এমন আহাজারি করছিলেন পটুয়াখালীর বাউফলের জাহিদ হোসেন। আর ওই ঘরের একটি রুমে শেষ গোসল চলছিল তার বোন আয়েশা আক্তারের। মাদকাসক্ত স্বামীর দেয়া আগুনে দগ্ধ হয়ে শনিবার রাতে মৃত্যু হয়েছে আয়েশার। ময়নাতদন্ত শেষে রোববার বিকালে লাশ নিয়ে যাওয়া হয় বাউফলের অমরখালী গ্রামের বাড়িতে। জাহিদ হোসেন যুগান্তরকে জানান, নেশার টাকা না দেয়ায় গত ১১ এপ্রিল আয়েশাকে মারধরের পর গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় তার স্বামী মামুন। এরপর দগ্ধ আয়েশাকে প্রথমে পটুয়াখালী ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে মৃত্যু হয় তার। জানা যায়, আট বছর আগে অমরখালী গ্রামের আবু বক্কর সিকদারের মেয়ে আয়েশার বিয়ে হয় পার্শ্ববর্তী উত্তর পাকডাল গ্রামের হামজু আকনের ছেলে মামুন আকনের সঙ্গে। বিয়ের পর দুই-তিন বছর ভালোই চলছিল সংসার। এরপর মামাতো ভাই শাহীনের খপ্পরে পড়ে নেশার জগতে পা বাড়ায় মামুন। চা দোকানি মামুন গাঁজা, ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ে।
আর এ থেকেই শুরু হয় আয়েশার সংসারে অশান্তি। কথায় কথায় আয়েশাকে মারধর করত মামুন। কারণে-অকারণে চাপ দিত বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে দিতে। আয়েশা একাধিকবার বাবার কাছ থেকে টাকা এনে স্বামীর দাবি পূরণ করেছে। মামুনের অত্যাচার-নির্যাতন দেখে পাড়াপড়শি লোকজন বলতেন বাচ্চা নাও। একটা ছেলে সন্তান হলে হয়তো মামুন ভালো হয়ে যাবে। এরপর বাচ্চা নেয় আয়েশা। তার বড় ছেলে মাহিনের বয়স ৫, আর ছোট ছেলে তুহিনের বয়স দেড় বছর। একে একে দুটি ছেলে সন্তানের বাবা হলেও মামুন নেশার জগত থেকে ফেরেনি। থামেনি আয়েশার ওপর অত্যাচার-নির্যাতন। আয়েশার বাবা আবু বক্কর শিকদার জানান, সর্বশেষ ১১ এপ্রিল সকালে মামুন আয়েশাকে ২০ হাজার টাকা এনে দিতে বলে। রাজি না হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে আয়েশাকে মামুন বেদম মারধর করে। একই দিন রাত ৮টার দিকে মামুন পুনরায় নেশার টাকার জন্য আয়েশাকে মারধর করে। একপর্যায়ে আয়েশা অজ্ঞান হয়ে পড়লে মামুন তার শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করে। আয়েশার চিৎকারে স্থানীয়রা এসে তাকে উদ্ধার করেন। ততক্ষণে আয়েশার মাথা ও মুখের এক পাশ ছাড়া শরীরের সব পুড়ে যায়। তিনি আরও জানান, মামুনসহ পাঁচজনকে আসামি করে বাউফল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে এখনও কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।

No comments

Powered by Blogger.