হাওরে কাজের জন্য আসা দাওয়ালরা স্কুল বারান্দায়

এবার  কিশোরগঞ্জের হাওরে এসে ধান কাটার কাজ না পেয়ে মানবেতরজীবন কাটাচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা হাজার-হাজার দাওয়াল (ধান কাটার শ্রমিক)। অতিবর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে অধিকাংশ এলাকার বোরো ফসল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কাজ না পেয়ে আটকা পড়েছে এসব দাওয়াল।এখন টাকার অভাবে বাড়ি ফিরতে না পেয়ে হাওরের আশপাশের স্কুল-মাদ্রাসা কিংবা বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের বারান্দায় আশ্রয় নিয়ে নিয়ে তারা অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত বৃহত্তর হাওরাঞ্চলের ‘গেটওয়ে’ ও বোরো ফসলের অফুরন্ত ভাণ্ডার হিসাবে পরিচিত কিশোরগঞ্জ জেলায় প্রতি বছর জামালপুর,শেরপুর,সিরাজগঞ্জ,বগুড়া,রংপুর, দিনাজপুর ও টাঙ্গাইল জেলাসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানের হাজার হাজার শ্রমিক ধান কাটতে আসে।কিন্তু এবার আগাম পাহাড়ি ঢল ও অতিবর্ষণে হাওরের অধিকাংশ পাকা ও আধা-পাকা বোরো ধান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ধান কাটার কাজ মিলছে না তাদের। আর এ কারণে হাওরবাসীর কাছে দাওয়াল হিসাবে পরিচিত এসব কৃষি শ্রমিকরা টাকার অভাবে বাড়ি ফিরতে পারছেন না। রোববার বিকালে হাওরের অন্যতম প্রবেশপথ জেলার কটিয়াদী উপজেলার করগাঁও এলাকা সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা গেছে,করগাঁও হাইস্কুল ও করগাঁওই ইউনিয়ন পরিষদের মাঠ ও বারান্দায় শতশত বহিরাগত দাওয়াল শুয়ে-বসে অলস সময় কাটাচ্ছে। এসময় ইউনিয়ন পরিষদের বারান্দায় আশ্রয় নেয়া ৪০/৪৫ জনের দাওয়ালদের একটি দলের লোকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলা থেকে এসেছেন বলে জানান।
এ সময় শফিকুল ইসলাম নামের এক যুবক জানান, প্রতিবছরই তারা ধান কাটতে কিশোরগঞ্জের হাওরে আসেন।গেলবার তারা এক সপ্তাহ ধান কেটে প্রায় প্রত্যেকেই ধানকেটে নগদ ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন।এবার ৫ দিন ধরে এখানে অবস্থান করেও কোন কাজ পাচ্ছেন না তারা।হাতের টাকাও অনেক আগেই ফুরিয়ে গেছে। এ দলের মুরুব্বী ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ লোকমান মিয়া জানালেন, বাবা গেলবারতো বেশ টাকা নিয়া বাড়ি ফিরতে পারছি।এবার সে টাকাতো দূরের কথা বাড়ি ফেরার টাকাওতো যোগাড় উপার্জন করতে পারলাম না।এহানে শুয়ে-বসে চেয়ে-মেগে কোনোরকমে সময় কাটাইতাছি।কেমনে বাড়ি ফিরুম এহনও বুঝতাছি না। করগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শরাফ উদ্দিন লস্কর পারভেজ জানান,নিজের পকেট থেকে এবং এলাকাবাসী ও করগাঁও বাজারের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সাহায্য তুলে গত কয়েকদিনে তিনি কয়েকশ' দাওয়ালকে বাড়ি ফেরার টাকা সংগ্রহ করে দিয়েছেন।এখনও ইউনিয়ন পরিষদের বারান্দায় আশ্রয়গ্রহণকারীদের বাড়ি পাঠানোর টাকা যোগাড় করছেন। এ সময় তিনি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সাহায্য-সহযোগিতার পাশাপাশি ধান কাটতে এসে আটকেপড়া দাওয়ালদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

No comments

Powered by Blogger.