দ্বিতীয় পর্বে মুখোমুখি হচ্ছেন ম্যাক্রোঁ ও লি পেন

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম রাউন্ডে কট্টর-ডানপন্থী দল ন্যাশনাল ফ্রন্টের (এফএন) প্রার্থী ম্যারিন লি পেন ও উদার মধ্যপন্থি প্রার্থী এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ জয়ী হয়েছেন। প্রাক্কলিত ফলাফলে ফ্রান্সের সাবেক  অর্থমন্ত্রী ম্যাক্রোঁ পেয়েছেন ২৩.৭ শতাংশ ভোট। অন্যদিকে লি পেন পেয়েছেন ২১.৭ শতাংশ ভোট। তাদের ঠিক পরেই সমান করে ১৯.৫ ভাগ ভোট পেয়ে তৃতীয় ও চতুর্থ অবস্থানে রয়েছেন মধ্য-ডানপন্থী রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থী ফ্রঁসোয়া ফিলোঁ এবং কট্টর-বামপন্থী প্রার্থী জঁ-লাক মেলেচঁ। ফলে দ্বিতীয় পর্বে আগামী ৭ মে মুখোমুখি হবেন ম্যাক্রোঁ ও লি পেন। খবর বিবিসি ও সিএনএনের। নির্বাচনের মাত্র ৩ দিন আগে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে পুলিশের ওপর চালানো প্রাণঘাতী হামলার পর কড়া নিরাপত্তায় দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম পর্বের ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়। প্রথম পর্বের ভোটে কোনো প্রার্থী সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট না পাওয়ায় ৭ মে অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় রাউন্ড ভোট গ্রহণ। অবশ্য ১৯৬৫ সালের পর থেকে ফ্রান্সের সবগুলো নির্বাচন দ্বিতীয় পর্বে গড়িয়েছে। বিবিসি জানায়, দেশজুড়ে নির্বাচনী বুথগুলোর নিরাপত্তায় ৫০ হাজার পুলিশ ও ৭ হাজার সন্ত্রাসবিরোধী সেনাসদস্য মোতায়েন করা হয়। ফ্রান্সে সম্প্রতি একের পর এক সন্ত্রাসী হামলার কারণে দেশটিতে প্রথমবারের মতো জরুরি অবস্থার মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হল। প্রায় ৪ কোটি ৭০ লাখ ভোটার এ নির্বাচনে ভোট দেয়ার জন্য নিবন্ধিত। দেশজুড়ে ৬৬ হাজার ৫৪৬টি বুথে সকাল ৮টায় (বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টা) ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে সন্ধ্যা ৭টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা) শেষ হয়। প্রথম পর্বের ভোটে ‘এগিয়ে চলো’ আন্দোলনের নেতা উদার মধ্যপন্থী এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর জয়ে ফ্রান্সের সবচেয়ে কম বয়সী প্রেসিডেন্টের ইতিহাস সৃষ্টি তৈরি হতে চলেছে। অন্যদিকে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা লি পেন জয়ী হলে তিনি হবেন দেশটির ইতিহাসে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। যে কোন ভাবেই হোক ফ্রান্স নতুন রাজনৈতিক ইতিহাস গড়তে চলেছে। নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থী ১৪ মের মধ্যে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলান্দের কাছ থেকে কার্যভার গ্রহণ করবেন।
আধুনিক ফ্রান্সের ইতিহাসে এ প্রথম ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য নির্বাচনে প্রার্থী হননি। সমাজতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলান্দের জনপ্রিয়তা তলানিতে নেমে যাওয়ায় তিনি নির্বাচনে লড়েননি। ইউরোপের ভবিষ্যৎতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিধায় বিশ্বজুড়ে পর্যবেক্ষকরা এ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছেন। ফ্রান্সের এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আন্তর্জাতিক মঞ্চেও বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে। প্রথমত, সে দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে এমন অনিশ্চয়তা কখনও দেখা যায়নি। দ্বিতীয়ত, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভবিষ্যৎও অনেকটা এবারের নির্বাচনের ফলের ওপর নির্ভর করছে। ম্যারিন লি পেনের মতো ইইউ ও জোটের একক মুদ্রা ইউরোবিরোধী নেত্রী ক্ষমতায় এলে এ রাষ্ট্রজোটের মৌলিক কাঠামো বড় ধাক্কা খেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ব্রিটেনের মতো ফ্রান্সও ইইউ থেকে বের হয়ে (ফ্রেক্সিট) যেতে পারে। এমন হুশিয়ারিও নির্বাচনী প্রচারণায় দেন লি পেন। ফ্রেক্সিট বাস্তবায়নের ইঙ্গিত দিয়ে ‘অনলি ফ্রান্স’ (শুধু ফ্রান্স) স্লোগানে মাঠে নামেন পেন। ব্রেক্সিটের পর ফ্রান্সে অভিবাসী সংকট তীব্রতর হয়েছে উল্লেখ করে নির্বাচনী প্রচারণায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতোই অভিবাসীবিরোধী অবস্থানের ঘোষণা দেন তিনি। অন্যদিকে ম্যাক্রোঁ ইইউয়ের জোরালো প্রবক্তা। তিনি জার্মানির সমর্থন নিয়ে ইউরোপে সামাজিক সুরক্ষার কাঠামো আরও জোরদার করতে চান। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পরেও গরম থাকবে ফ্রান্সের রাজনৈতিক জগত। কারণ তার ঠিক পরপরই অর্থাৎ ১১ ও ১৮ জুন সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ৫৭৭ জন সংসদ সদস্যের এ নির্বাচনে প্রতিষ্ঠিত দলগুলোর এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এরপর ২৪ সেপ্টেম্বর পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটের ৩৪৮ আসনের মধ্যে ১৭০ জনকে সিনেট সদস্য হিসেবে নির্বাচিত করবে ইলেক্টোরাল কলেজ।

No comments

Powered by Blogger.