অনুন্নয়ন ব্যয় ৪১ হাজার কোটি টাকা বাড়ছে

আগামী অর্থবছরের বাজেটে অনুন্নয়ন খাতে ব্যয়ের সম্ভাব্য লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা, যা জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) ১১ দশমিক ১ শতাংশ। এর মধ্যে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা খাতে ব্যয় হবে প্রায় সাড়ে ৫৭ হাজার কোটি টাকা। ভর্তুকি খাতে ব্যয় হবে সাড়ে ২৭ হাজার কোটি টাকা। বাকি ব্যয় ধরা হয়েছে দেশি-বিদেশি ঋণের সুদ, পেনশন গ্র্যাচুইটি, প্রণোদনাসহ আনুষঙ্গিক খাতে। চলতি অর্থবছরে এ ব্যয় ছিল ২ লাখ ৬ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা (সংশোধিত)। এ হিসাবে অনুন্নয়ন ব্যয় বাড়বে ৪০ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এ তথ্য। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বাজেট) জালাল আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে অনুন্নয়ন ব্যয়ে নতুন কোনো খাত সৃষ্টি হয়নি। ফলে অস্বাভাবিকভাবে ব্যয় বাড়ার সুযোগ নেই। অনুন্নয়ন খাতে যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে তা স্বাভাবিক। চলতি অর্থবছরে অনুন্নয়ন খাতে মূল ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ লাখ ১৫ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা। পরে সংশোধিত বাজেটে ৯ হাজার ২২০ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। বর্তমান লক্ষ্য জিডিপির ১০ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর শতভাগ পেনশন উত্তোলনকারী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নববর্ষের ভাতা দেয়ার বিধানের ক্ষেত্রে নতুন ব্যয় বেড়েছে। যদিও বাংলা নববর্ষের ভাতা ২০১৬ সাল থেকে শুরু হয়।  কিন্তু শতভাগ পেনশন বিক্রিকারী সরকারি চাকরিজীবীরা এ সুবিধার আওতায় ছিলেন না। চলতি মাসে সরকার অবসরপ্রাপ্ত শতভাগ পেনশন উত্তোলনকারীদের এ সুবিধা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।  এ সুবিধার আওতায় আসবেন লক্ষাধিক পেনশনভোগী। ফলে অনুন্নয়ন খাতে নতুন আরও একটি ব্যয়ের খাত সংযুক্ত হয়েছে। সূত্রমতে, আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্র্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা খাতে ব্যয় বাড়বে ৬ হাজার ৮২০ কোটি টাকা।
এজন্য এখন পর্যন্ত সম্ভাব্য ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৭ হাজার ৪২০ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে এ বরাদ্দ ছিল ৫০ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। ২০১৫ সালে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য অষ্টম বেতন কাঠামো ঘোষণা দেয়ায় এ খাতে বড় ধরনের ব্যয় বেড়েছে। এর আগে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এ খাতে সরকারের ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৯ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। এ ছাড়া আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি খাতেও ব্যয় কমবে। এরপরও বড় একটি অঙ্ক ভর্তুকি খাতে ব্যয় করা হবে। নতুন বাজেটে এজন্য ব্যয়ের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত এ বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ২ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে মূল বাজেটে এ বরাদ্দ ছিল ২৮ হাজার কোটি টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটে তা কমে নির্ধারণ করা হয় ২৩ হাজার কোটি টাকা। অর্থবছর শেষে সংশোধিত বাজেটে দেয়া বরাদ্দ থেকে নিট খরচ হতে পারে ১৮ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা। জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমার কারণে এ বছর জ্বালানি খাতে ভর্তুকির প্রয়োজন হচ্ছে না। কৃষি খাতেও নতুন করে ভর্তুকি বাড়ানো হচ্ছে না। ফলে নতুন বাজেটে ভর্তুকির চাপ কমবে। অর্থনীতিবিদদের মতে, বাজেটে ভর্তুকি চাপ কমলে এটি অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক ভূমিকা বহন করবে। জানা গেছে, আগামী বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ বেশি হবে। সম্ভাব্য বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। এ ঘাটতি পূরণ করতে সরকার ব্যাংকিং খাত ও সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ গ্রহণ করবে। এ ছাড়া বিদেশ থেকেও ঋণ নিবে। এতে সরকারকে বড় অঙ্কের সুদ পরিশোধ করতে হবে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে সুদ বাবদ ৩৯ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে। আগামী বাজেটে সুদ পরিশোধ খাতে ব্যয় আরও বাড়বে। ফলে অনুন্নয়ন খাতের বড় একটি অংশ ব্যয় হবে সুদ পরিশোধে।

No comments

Powered by Blogger.