মমতার বিকল্প প্রস্তাব আমলে নেয়নি ঢাকা

তিস্তা চুক্তি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বিকল্প প্রস্তাব আমলেই নেয়নি বাংলাদেশ। তিস্তার পরিবর্তে তোর্সাসহ দুটি নদীর পানিবণ্টনের প্রস্তাব কোনোভাবেই ঢাকার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। কাজেই তিস্তার পানির প্রশ্নে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আশ্বাসের ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে। কবে নাগাদ পানি পাওয়া যাবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সময়সীমার নিশ্চয়তা না পাওয়ায় অপেক্ষার প্রহর দীর্ঘতর হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ সফরে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সই হবে না, সেটা আগেই খোলাসা হয়েছিল। দিল্লির তরফে আগেভাগেই বলা হয়েছিল- এ নিয়ে কোনো চমকের সম্ভাবনাও নেই। তবে উভয় দেশের কর্মকর্তারা আশা করেছিলেন, শীর্ষ রাজনৈতিক নেতারা বসে জট খোলার একটা উপায় খুঁজে পাবেন। আলোচনা হয়েছে, কিন্তু সেই পথের দেখা মেলেনি। ফলে সমস্যা সমাধানের পথ এখনও স্পষ্ট নয়। এ ছাড়া পানি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এবার গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্পে ভারতের সঙ্গে কোনো চুক্তি হয়নি। তবে এ ক্ষেত্রে দু’পক্ষের কারিগরি কমিটি একসঙ্গে কাজ করবে। এটা সামান্য অগ্রগতি। অববাহিকাভিত্তিক নদী ব্যবস্থাপনায় ভারত সম্মত হলেও এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। এ সফরে বাংলাদেশের চেয়ে ভারত বেশি লাভবান হয়েছে।
দিল্লির প্রত্যাশার সবচেয়ে বড় ইস্যু ছিল জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে সহায়তা এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদার করা। স্পষ্টত ভারতের এই প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে দু’দেশের সহযোগিতা আগেই ছিল। এবার যৌথ বিবৃতিতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে- শুধু সন্ত্রাসী গোষ্ঠীই নয়, বরং কোনো সন্ত্রাসী দেশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে দু’দেশ এক হয়ে কাজ করবে। এদিকে দিল্লিতে ঢাকার কূটনীতিকরা বলছেন, তিস্তা চুক্তি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বিকল্প প্রস্তাবে রাজি নয় ঢাকা। রোববার অপর এক কূটনীতিক যুগান্তরকে বলেন, এ প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়। তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে বিগত ২৩ বছর ধরে ভারতের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। এই আলোচনা শুরু হয়েছিল ১৯৮৮ সালে। ২০১১ সালে দু’দেশের সম্মতিতে তিস্তা চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। এটাকে বাদ দিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু করা সম্ভব নয়।’ তবে তিনি এও বলেন যে, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যৌথ নদী কমিশন রয়েছে। সেটাকে সক্রিয় করে অভিন্ন ৫৪টি নদীর পানিপ্রবাহ কীভাবে বাড়ানো যায় সেই চেষ্টা করা প্রয়োজন।’ একই সঙ্গে তিস্তা ইস্যুর সমাধান হওয়া জরুরি। কারণ এই তিস্তাও দু’দেশের মধ্যে প্রবাহিত অভিন্ন নদীরই অংশ। এই কূটনীতিক বলেন, প্রথমে উভয় দেশ ৫০ শতাংশ করে তিস্তার পানি ভাগাভাগির ফর্মুলা ঠিক করা হয়েছিল। পরে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ঠিক রাখার জন্য ২০ শতাংশ পানি নদীতে রাখার বিষয়ে উভয় পক্ষ সম্মত হয়। বাকি ৮০ ভাগ পানিবণ্টনের ফর্মুলা চূড়ান্ত করা হয়। এতে বাংলাদেশ ৩৭ ভাগ এবং ভারত ৪৩ ভাগ পানি পাবে। এভাবেই তিস্তা চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়।
এত বিস্তারিত হিসাব-নিকাশের পর এখন নতুন করে ভাগাভাগি নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং বাংলাদেশ সফরের সময় চুক্তিটি সই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি শেষ মুহূর্তে চুক্তির বিরোধিতা করে মনমোহনের প্রতিনিধি দল থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নেন। ফলে ওই সময় চুক্তি সই হয়নি। দিল্লিতে বাংলাদেশি এ কূটনীতিক অবশ্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি আস্থা রাখছেন। তিনি বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছেন- বর্তমান সরকারের আমলেই তিস্তা চুক্তি সই হবে। এ থেকে আগামী এক বছরের মধ্যে তিস্তা চুক্তি সই হবে বলে আমরা আশা করি।’ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি শনিবার দুপুরে দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে শেখ হাসিনার সম্মানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দেয়া মধ্যাহ্নভোজে এবং রাতে রাষ্ট্রপতি ভবনে আয়োজিত অনানুষ্ঠানিক নৈশভোজে বলেছেন যে, তিস্তায় পর্যাপ্ত পানির প্রবাহ নেই। তাই তিনি তোর্সাসহ পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলীয় চারটি ছোট ছোট নদী থেকে পানি নেয়ার জন্য শেখ হাসিনাকে প্রস্তাব দিয়েছেন। দিল্লির বিশ্লেষকরাই বলছেন, তিস্তা ইস্যু বাংলাদেশের রাজনীতিতে বেশ আলোড়ন তুলেছে। ফলে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এই ইস্যুর নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ভারত বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়ানো উচিত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আশ্বাস দিয়েছেন যে, তার ও শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে তিস্তা সমস্যার সমাধান হবে। খোদ দিল্লিতে তার এই আশ্বাসের ব্যাপারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।
কেউ কেউ বলছেন, প্রধানমন্ত্রী যেহেতু জনসমক্ষে আশ্বাস দিয়েছেন, ফলে তিনি শেখ হাসিনাকে নিরাশ করবেন না। প্রতিশ্রুতি পূরণে মোদি আন্তরিক বলেই এখানকার অনেক মানুষ মনে করেন। ফলে মোদি এই সমস্যার একটা ম্যাজিক সমাধান খুঁজে পাবেন। সীমান্ত চুক্তির মতো তিনি তিস্তার সমাধানও বের করবেন। এক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সম্মতি আদায় করার সব ধরনের চেষ্টা চালাতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করার ক্ষমতাও কেন্দ্রীয় সরকারের রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, মমতাকে রাজি করানো সহজ হবে না। ইতিমধ্যে মমতা তিস্তা চুক্তির বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। এতে প্রমাণ করে তিনি তিস্তা চুক্তি না করার ব্যাপারে নিজের অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। এছাড়া মোদির সঙ্গে মমতার সম্পর্ক এখন ভালো নয়। কাজেই নরেন্দ্র মোদির সুবিধার জন্য মমতা ছাড় দেবেন এটা ভাবার কোনো অবকাশ নেই। টেলিগ্রাফের সাংবাদিক সোনিয়া সরকার যুগান্তরকে বলেছেন, ‘মোদি বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনে জয়ী হয়ে খুবই উল্লসিত। তিনি এখন পশ্চিমবঙ্গে অবস্থান দৃঢ় করার চেষ্টা করছেন। পশ্চিমবঙ্গে বহু বছরের বাম শাসনের পর কিছুদিন হল মমতার তৃণমূল ক্ষমতায় গেছে। এ কারণে মমতা তার রাজ্যে মোদির দল ক্ষমতাসীন বিজেপিকে মোকাবেলার চেষ্টা করছেন’। তবে দিল্লির অন্য একজন সাংবাদিক বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গের জন্য বড় বাজেটের আর্থিক সহায়তা দিয়ে মমতাকে রাজি করানো মোদির পক্ষে অসম্ভবও নয়। বাংলাদেশে ভারতের সাবেক হাইকমিশনার বীণা সিক্রি বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর খুবই ইতিবাচক। এই সফরকালে উইন উইনভাবে সবই হয়েছে।’
তিনি অন্য নদী থেকে পানি নেয়ার ব্যাপারে মমতা ব্যনার্জির প্রস্তাবে নেতিবাচক কিছু দেখছেন না। বীণা সিক্রি বলেন, বাংলাদেশ-ভারত প্রতিরক্ষা সহযোগিতা খুবই প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের ভারত সফরে দিল্লির প্রত্যাশার সবচেয়ে বড় ইস্যু ছিল জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে সহায়তা এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদার করা। স্পষ্টত ভারতের এই প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে দু’দেশের সহযোগিতা আগেই ছিল। এবার যৌথ বিবৃতিতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, শুধু সন্ত্রাসী গোষ্ঠীই নয়, বরং কোনো সন্ত্রাসী দেশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে দুই দেশ এক হয়ে কাজ করবে। এই বিবৃতিতে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে কোনো দেশের নাম উল্লেখ করা না হলেও এটা সহজেই অনুমেয় বাংলাদেশ একাত্তরের গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ে ভারতের সমর্থন পেয়েছে। যৌথ বিবৃতিতে গণহত্যার তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। দিল্লির বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এবং নিরাপত্তা সহযোগিতা একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। ফলে প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতার রূপরেখাসহ যে চারটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে তাতে ভারতের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। এসব রূপরেখায় বাংলাদেশে ভারতের সমরাস্ত্র বিক্রির পথ খুলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, এবারের সফরে ভারত বাংলাদেশে সমরাস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির জন্য ৫০ কোটি ডলার ঋণ দেবে বলে এমওইউ সই হয়েছে। তবে এই এমওইউ কোনো বাধ্যতামূলক নয়।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, বাংলাদেশের প্রয়োজন এবং অগ্রাধিকার মোতাবেক এই অর্থ ব্যবহার করতে পারবে। সমরাস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির এই ঋণের বাইরেও তৃতীয় ‘লাইন অব ক্রেডিট’ (এলওসি) হিসেবে আরও ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ভারত। ফলে সব মিলিয়ে বিগত ছয় বছরে বাংলাদেশকে আটশ’ কোটি ডলারের ঋণ দিয়েছে। এসব ঋণ বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নের কাজে ব্যয় হবে। এদিক থেকে এই ঋণ পাওয়া বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক হিসাবেই অনেকেই মনে করছেন। তবে এ ক্ষেত্রে ঋণের শর্ত এবং তা বাংলাদেশের অগ্রাধিকার প্রকল্পে ব্যবহার হবে কিনা সেটিও বিবেচ্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরকালে ভারতের রাজধানী দিল্লির প্রাণকেন্দ্র পার্ক স্ট্রিটকে বঙ্গবন্ধু সড়ক হিসেবে ঘোষণা করাও বাংলাদেশের প্রতি একটা বিরল সম্মান বলে বিবেচিত। এই সফরে শান্তিপূর্ণভাবে মহাকাশ ব্যবহারের লক্ষ্যে একটি এমওইউ সই হয়েছে। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে এটা খুবই কাজে লাগবে। উভয়পক্ষের জন্যই এই এমওইউ উপকারী। পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারে এবং আণবিক শক্তি কমিশনের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত এমওইউ সই হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ রুশ সহায়তায় রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে। এতে ভারতের অংশগ্রহণ সহায়ক হলেও পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে নিবিড় যোগাযোগের স্পর্শকাতর দিক রয়েছে। সাইবার নিরাপত্তা ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সহযোগিতা সংক্রান্ত একাধিক এমওইউ সই হয়েছে। এগুলো উভয় দেশের জন্য উপকারী। বিশেষ করে ভারত তথ্যপ্রযুক্তিতে উন্নতি করায় এবং বাংলাদেশ ডিজিটাল উন্নতির লক্ষ্য নির্ধারণ করায় এই চুক্তি বাংলাদেশের কাজে লাগবে। বাণিজ্য ক্ষেত্রে সীমান্ত হাটসহ আরও অনেক সহযোগিতার ব্যাপারে এই সফরে এমওইউ সই হয়েছে। এটা বাণিজ্য বাধা দূর করতে এবং উভয় দেশের জনগণকে কাছাকাছি আনতে কাজে লাগবে। বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের লক্ষ্যে সই করা এমওইউ বাংলাদেশের এই বিভাগের কর্মকর্তাদের সমর্থ বাড়াতে সহায়তা করবে। নৌপরিবহনসংক্রান্ত এমওইউ ভারতের নৌ ট্রানজিট সুবিধাকে অবারিত করবে। কানেকটিভিটি বাড়াতে যাত্রীবাহী জাহাজ চলাচলের এমওইউ একইভাবে ভারতের জন্য সহায়ক।
এ ছাড়াও, কানেকটিভিটির অপরাপর সহযোগিতার লক্ষ্যও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে দেশটির অপর অংশের সংযোগ স্থাপনে খুবই প্রয়োজন। এদিক থেকে খুলনা ও কলকাতার মধ্যে যাত্রীবাহী বাস ও ট্রেন যোগাযোগ দু’দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে সহায়ক। যৌথ বিবৃতিতে উপ-আঞ্চলিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদারের তাগিদ রয়েছে। এসব থেকে উভয় দেশই লাভবান হতে পারে। তবে আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার কথা থাকলেও বাস্তবে এ অঞ্চলে এ ধরনের সত্যিকার কার্যকর সহযোগিতা গড়ে ওঠেনি। ফলে এসব এখন বিবৃতির মধ্যে সীমিত হয়ে পড়েছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্য পদে ভারতের প্রতি বাংলাদেশের সমর্থন প্রতিবেশী বড় দেশটির প্রতি ছোট দেশের উদার বন্ধুত্বের নিদর্শন। ভিসা সহজ করার বিষয়ে বেশ খানিকটা অগ্রগতি হয়েছে। বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধাদের পাঁচ বছর মেয়াদি ভিসা দেয়ার ঘোষণা ইতিবাচক। তাদের সন্তানদের বৃত্তি দেয়ার মেয়াদ বৃদ্ধিও বাংলাদেশের প্রতি ভারতের মৈত্রীর নিদর্শন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের সফরকালে অনেক পদক্ষেপের ফলে ভারত লাভবান হবে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে সহযোগিতার অঙ্গীকার বাংলাদেশের জন্য উপকারী। তবে বাংলাদেশের বড় প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় জনমনে তা খুব বেশি ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারেনি। কেননা অনেকে মনে করেন, চুক্তিগুলোর সংখ্যার চেয়ে গুণগত মানের দিক সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে তিস্তা চুক্তির মতো বহুল প্রত্যাশিত চুক্তি এখন ঝুলে থাকায় প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের অনেক অর্জনই ম্লান বলে মনে হতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.