মমতার প্রস্তাবে অস্বস্তিতে দিল্লি, হতাশ হাসিনাও

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির রফাসূত্র মানতে হলে তিস্তা প্রসঙ্গে পাকাপাকি ইতি টানতে হয়। যা ভারত সরকার তো বটেই, বাংলাদেশের কাছে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাই ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও দিল্লি বা ঢাকা মমতার বিকল্প প্রস্তাব নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্যই করছে না। তিস্তার বদলে তোর্সা নদীর পানি দেয়ার যে প্রস্তাব মমতা ব্যানার্জি করেছেন তা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গভিত্তিক একটি নিউজ পোর্টাল এ খবর প্রকাশ করেছে। দুই সরকারি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বর্তমান জানাচ্ছে, তিস্তার বদলে তোর্সার ফরমুলা মেনে সম্পূর্ণ জলবণ্টন পরিকল্পনার কেঁচে গন্ডুষ করতে ঢাকা, দিল্লি কেউই রাজি নয়। বরং মমতার পালটা চালে নরেন্দ্র মোদি চাপে। হাসিনা হতাশ। তাই রোববার রাষ্ট্রপতি ভবনের নৈশভোজে মোদি, হাসিনা, মমতা আবার মিলিত হলেন বটে, আলোচনাও হলো নানাবিধ বিষয়ে। কিন্তু বোঝাই গেল শৈত্য। হাসিনা, মমতা, প্রণববাবুর মধ্যে বাংলায় একপ্রস্থ আড্ডা হলো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলাকালীন। যদিও মোদির সঙ্গে মমতার শীতল সৌজন্য বিনিময় ছাড়া বিশেষ কিছু দেখা গেল না। নিউজ পোর্টালটি জানায়, তবে হাসিনার সফরের শেষ দিনেই মোটামুটি স্পষ্ট যে, তিস্তা চুক্তি নিয়ে আলোচনা আবার চলে গেল স্নায়ুর লড়াইয়ে। কেন্দ্র মমতার ফরমুলা মেনে তিস্তাকে ঠান্ডাঘরে পাঠিয়ে দিতে নারাজ। এক কেন্দ্রীয় মন্ত্র রোববার জানিয়েছেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সফর চলাকালীনই এরকমভাবে একটি বিকল্প প্রস্তাব মিডিয়ার মাধ্যমে প্রকাশ করা কূটনীতির পরিপন্থী। কিছুটা হলেও এর ফলে সফরের সাফল্য ড্যামেজ হলো। অর্থাৎ স্পষ্ট যে কেন্দ্র ক্ষুব্ধ। জানা যাচ্ছে জলবণ্টন নিয়ে তিস্তা ছাড়াও আলোচনা, আর সম্ভাব্য চুক্তির তালিকায় ফেনি, মানু, মুহুরি, দুধকুমার, গুমতি, ধরলা, খোয়াই ‌ ইত্যাদি নদীগুলি ভারত ও বাংলাদেশে দড়ি টানাটানি তথা চর্চায় অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে। কিন্তু প্রথম থেকেই তোর্সা সেভাবে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা অথবা জয়েন্ট রিভার কমিশনেও নেই। মমতা শনিবার তিস্তার বদলে তোর্সা ছাড়া আর যে নদীর জলবণ্টন নিয়ে আলোচনা শুরু করতে বলেছেন,
তার মধ্যে রয়েছে ধরলা বা জলঢাকা। এই জলঢাকা বা ধরলা নদীর জলবণ্টন বিষয়টি গতকাল রাতে প্রকাশ হওয়া ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ বিবৃতিতেও কিন্তু আছে। সুতরাং এমন নয় যে মমতার প্রস্তাবিত নদীগুলির প্রাসঙ্গিকতা নেই। শুধু আচমকা তিনি সামনে নিয়ে এলেন তোর্সাকে। চীন থেকে আসা তোর্সা ভুটান হয়ে ভারতে ঢোকার পর তুফানগঞ্জের কালজানি নদীতে মিশেছে। এবং বাংলাদেশেও কালজানি নামেই প্রবাহিত হয়ে যমুনায় মিশে গিয়েছে। তিস্তা নিয়ে মমতার অনড় মনোভাবের পর দিল্লি ও ঢাকার আশঙ্কা, পদ্মা-গঙ্গা ব্যারাজ নিয়ে নতুন আলোচনার যে রোডম্যাপ তৈরি হয়েছে সেখানেও মমতা আপত্তি করতে পারেন। কারণ সেক্ষেত্রেও পানিবণ্টনের বিষয়টি জড়িত। পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ সামান্যতম ক্ষুণ্ণ করেও মমতা যেকোনো চুক্তিতেই রাজি হবেন না, তা নিয়ে তিনি সংশয় রাখেননি। বস্তুত তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তির সঙ্গে যুক্ত আছে একঝাঁক সমীকরণ—১) মমতার রাজনৈতিক বার্তা যে রাজ্যকে বঞ্চিত করে কোনো বৃহত্তর স্বার্থেই আপস নয় ২) হাসিনার আগামী বছরের নির্বাচনী প্রচারের অন্যতম ইস্যুই তিস্তা ৩) মোদি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কূটনীতিতে চীনের থেকে বাংলাদেশকে দূরে রেখে ঢাকাকে ভারতের পাশে রাখতে তিস্তা উপহার দিতে মরিয়া। কিন্তু সমস্যা হলো মমতার ফরমুলাকেও উড়িয়ে দেয়া তার পক্ষে অসম্ভব। কারণ রাজ্যে পা রাখতে তৎপর বিজেপির পক্ষে তা রাজনৈতিক ড্যামেজ। সুতরাং এখন নিছক নদী নয়। দুই বাংলার রাজনীতি তথা কূটনীতির এক শক্তিশালী ইস্তাহারের নাম তিস্তা!

No comments

Powered by Blogger.