বাংলাদেশের রিপোর্টে ভারতে সতর্কতা



ভারতে জঙ্গি অনুপ্রবেশ নিয়ে দিল্লিকে সতর্ক করেছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি রিপোর্ট দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এর প্রেক্ষিতে ভারতের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো সতর্কতা অবলম্বন করছে। অনলাইন টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। সাংবাদিক শৈবাল গুপ্ত’র লেখা প্রতিবেদনটির শিরোনাম ‘জিহাদিস এন্টারিং ইন্ডিয়া, ওয়ার্নস বাংলাদেশ’। এতে বলা হয়, রিপোর্ট অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরায় ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে তিনগুন বেশি হরকতুল জিহাদ আল ইসলামী (হুজি) ও জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)’র জঙ্গিরা প্রবেশ করেছে। এ তথ্যটিকে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বা উল্লেখযোগ্য বলে বিবেচিত হচ্ছে। কারণ, ২০১৪ সালের অক্টোবরে বর্ধমানের খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণে বহির্বিশ্বের সন্ত্রাসী সম্পৃক্ততা ও জেএমবির সরাসরি জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে ভারতের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএ। রিপোর্টে বলা হেেছ, ভারতের ওই তিনটি রাজ্যে প্রবেশ করেছে হুজি ও জেএমপির প্রায় ২০১০ অপারেটিভ। এর মধ্যে নিরাপদে সীমান্ত গলিয়ে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করেছে প্রায় ৭২০ জন। বাকি সন্দেহভাজন ১২৯০ জন আসাম ও ত্রিপুরা দিয়ে প্রবেশ করেছে। তবে এ রিপোর্টের বিষয়ে সংশয় রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কর্মকর্তাদের। তা সত্ত্বেও এ সংখ্যা উদ্বেগজনক। কারণ, গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৪ ও ২০১৫ সালে যথাক্রমে ৮০০ ও ৬৫৯ জন অনুপ্রবেশ করেছে ভারতে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, এ রিপোর্টের সত্যতা যাচাই করতে তথ্য সংগ্রহ করছেন তারা। ওদিকে বিষয়টি নিয়ে সচেতন আসাম পুলিশ। আসাম পুলিশের অতিরিক্ত ডাইরেক্টর জেনারেল পল্লব ভট্টাচার্য বলেছেন, অবশ্যই সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ৬ মাসে আমরা গ্রেপ্তার করেছি জেএমবি’র ৫৪ অপারেটিভকে। অনুপ্রবেশ চেক দিতে আমরা শীর্ষ স্থানীয় পুলিশ সদস্য ও এমএলএ’দের নিয়ে একটি উচ্চ শক্তিশালী কমিটি গঠন করেছি। তারা নিয়মিত সীমান্তে সফর করছেন। নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সঙ্গে বৈঠক করছেন। আরও তথ্য রয়েছে, জেএমবির সেক্রেটারি ইফতাদুর রেহমান এ বছর ১২ই জানুয়ারি ভুয়া পাসপোর্টে ভারতে প্রবেশ করেছে এবং এরই মধ্যে সে আসাম ও পশ্চিমবঙ্গে তার সংশ্লিষ্ট লোকদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছে। গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, দিল্লিও সফর করে থাকতে পারে সে। ইফতাদুর রেহমানের প্রকৃত নাম হলো সাজ্জাদ হোসেন। একটি সূত্র বলেছে, এ ছাড়াও আমাদের কাছে তথ্য আছে আসাম, পশ্চিমবঙ্গ ও দিল্লির লিঙ্কম্যানদের সঙ্গে জেএমবি, হুজির নেতাদের একটি বৈঠক বাংলাদেশের ময়মনসিং জেলায় অনুষ্ঠিত হয়েছে ১৮ই জানুয়ারি। নিরাপত্তা সংস্থার সিনিয়র কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পর এসব জঙ্গিরা তাদের অপারেশনের পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনেছে। এর ফলে তাদেরকে সনাক্ত বা ট্রেস করার ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, এর আগে মালদা, মুর্শিদাবাদ অথবা নদিয়ার মতো স্পর্শকাতর কিছু জেলার সীমান্ত দিয়ে এরা ভারতে প্রবেশ করতো। এখন তারা প্রবেশ করছে আসাম ও ত্রিপুরা দিয়ে। তারপর তারা প্রবেশ করছে পশ্চিমবঙ্গে। তাদের কাছে এভাবে অনুপ্রবেশ খুব সহজ ও নিরাপদ। ওই দুটি সীমান্তে জলাভূমি থাকায় নিরাপত্তা বিষয়ক সংস্থাগুলোর নজরদারি করা খুব কঠিন।

No comments

Powered by Blogger.