শিশুর ডাউন সিনড্রোম প্রতিরোধে করণীয়

দেশে প্রতি বছর পাঁচ হাজার বা প্রতিদিন প্রায় ১৫টি ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশু জন্ম নিচ্ছে। তবে চিকিৎসকরা আশার কথা শুনিয়েছেন, নারীর গর্ভকালীন পরীক্ষা করে দেশেই ডাউন সিনড্রোম শনাক্ত করা সম্ভব। শুধু তাই নয় সঠিক চিকিৎসায় ওই শিশুদের ঘাটতি পূরণও সম্ভব বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। মঙ্গলবার বিশ্ব ডাউন সিনড্রোম দিবস উপলক্ষে এমনই আশার কথা জানালেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. বিকাশ। তিনি যুগান্তরকে জানান, জিনগত সমস্যা ডাউন সিনড্রোম কোনো রোগ নয় বরং এটি শরীরের জেনেটিক পার্থক্য এবং ক্রোমজমের একটি বিশেষ অবস্থা। গর্ভাবস্থায় শিশুর শরীরের কোষ বিভাজনের সময় সংঘটিত হয়, যা জন্মগতভাবে একটি অতিরিক্ত ক্রোমজম প্রতিটি দেহকোষের ক্রোমজমে অবস্থান করে। সাধারণত ৩৫ বছরের পর থেকে গর্ভধারণে এ ঝুঁকি বাড়তে পারে। ডা. বিকাশের মতে, দেশে ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে এটা ঠিক। তবে, আশার কথা হল- গর্ভবতী নারীর শরীর পরীক্ষা করে, এখন দেশেই এ রোগ শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে। তিনি জানান, ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশুরা সাধারণত বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হিসেবে বেঁচে থাকে। তারা অন্য শিশুদের তুলনায়, শারীরিক ও মানসিকভাবে দেরিতে বেড়ে ওঠে। তিনি আরও জানান, ডাউন সিনড্রোম শিশুরা শারীরিক জটিলতায় ভোগে। তাদের লিউকেমিয়া, থায়রয়েড সমস্যা, দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণ-শক্তির সমস্যা, পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা, জীবাণু সংক্রমণ, শারীরিক স্থুলতা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।
এছাড়া ডাউন সিনড্রোম শিশুর জন্মগত হার্টের সমস্যা থাকতে পারে বলেও জানান ডা. বিকাশ। তিনি পরামর্শ দেন, ডাউন সিনড্রোম শিশুদের সঠিক চিকিৎসা ও পরিচর্যার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারবে। বিশেষ করে পুষ্টিকর খাবার, স্পিচ ও ল্যাংগুয়েজ এবং ফিজিক্যাল থেরাপির মাধ্যমে তাদের স্বনির্ভর করা যেতে পারে। উল্লেখ্য, ২০০৬ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী ২১ মার্চ বিশ্ব ডাউন সিনড্রোম দিবস পালিত হয়ে আসছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ হয়েছে- ‘আমাদের কণ্ঠস্বর, আমাদের সমাজে, সরকারের সব কাজে, ডাউন সিনড্রোমকে রাখবে পাশে।’ ব্রিটিশ চিকিৎসক জন ল্যাঙ্গডন ডাউন ১৮৬৬ সালে এ শিশুদের চিহ্নিত করেন বলে তার নামানুসারে ‘ডাউন সিনড্রোম’ কথাটি প্রচলিত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতি ৮শ’ শিশুর মধ্যে একজন ডাউন সিনড্রোম শিশু বা ডাউন শিশু জন্ম নিয়ে থাকে। সারা পৃথিবীতে প্রায় ৭০ লাখ ডাউন সিনড্রোম লোক রয়েছে। বাংলাদেশে এ নিয়ে কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে বিশেষজ্ঞদের প্রাথমিক হিসাবে, দেশে প্রতি বছর পাঁচ হাজার বা প্রতিদিন প্রায় ১৫টি ডাউন শিশুর জন্ম হয়। প্রতি ৫শ’ থেকে ৭শ’ শিশুর মধ্যে একটি ডাউন শিশু জন্ম নেয়। বর্তমানে দেশে ২ লাখ ডাউন সিনড্রোম ব্যক্তি বসবাস করছে। মায়েরা বেশি বয়সে গর্ভধারণ করলে এ ধরনের শিশু জন্মের শংকা বেশি।

No comments

Powered by Blogger.