পেঁয়াজের দামে মাথায় হাত

চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি হওয়ায় বাজারে অস্বাভাবিক হারে কমেছে পেঁয়াজের দাম। এতে খুচরা বাজারে গত বছরের তুলনায় কেজিপ্রতি দেশী পেঁয়াজের দাম কমেছে ১৫ টাকা। আর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ৫ থেকে ৬ টাকা কমেছে। কৃষি অধিদফতর বলছে, দেশে পেঁয়াজের ভরা মৌসুম। এ বছর ফলনও ভালো হয়েছে; কিন্তু প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে চাহিদার তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। ভারতীয় পেঁয়াজের দাম দেশী পেঁয়াজের চেয়ে কম হওয়ায় দামে মার খাচ্ছেন চাষীরা। প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন, ইয়াসিন রহমান (ঢাকা), লোকমান চৌধুরী (চট্টগ্রাম)।
ঢাকা : ঢাকার বাজারে অস্বাভাবিকভাবে কমেছে পেঁয়াজের দাম। ভরা মৌসুমে পার্শ^বর্তী দেশ ভারত থেকে প্রচুর পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। পেঁয়াজের পাইকারি আড়ত কারওয়ানবাজার ও শ্যামবাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজ পাইকারি দরে মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ১৪ থেকে ১৯ টাকায়। আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৮ থেকে ১৯ টাকায়; যা গত বছর এসময় দাম অনেক বেশি ছিল। সেক্ষেত্র ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছর দেশী পেঁয়াজ পাইকারি দরে বিক্রি হয়েছে ৩২ থেকে ৩৫ টাকায়। আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়। অন্যদিকে রাজধানীর নয়াবাজার, শান্তিনগর কাঁচাবাজার ও কারওয়ানবাজারের খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে দেশী পেঁয়াজ মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়। আর আমদানি করা পেঁয়াজ মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৪ টাকায়; যা গত বছর এসময় দেশী পেঁয়াজের দাম ছিল ৩৮ থেকে ৪০ টাকা।
আর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকা। পেঁয়াজের দাম কমার চিত্র ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) গত বৃহস্পতিবারের দৈনিক বাজারদরে মূল্য তালিকায়ও দেখা গেছে। সেখানে আমদানি করা পেঁয়াজের মূল্য দিয়েছে প্রতি কেজি ২০ থেকে ২২ টাকা। দেশী পেঁয়াজের মূল্য ২২ থেকে ২৮ টাকা। এক সপ্তাহ আগে আমদানি করা পেঁয়াজের মূল্য ছিল ২০ থেকে ২২ টাকা। দেশী পেঁয়াজের মূল্য ছিল ২০ থেকে ২৫ টাকা। আর এক বছর আগে একই সময় অমদানি করা পেঁয়াজের মূল্য ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকা। দেশী পেঁয়াজের মূল্য ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। সেক্ষেত্রে এক বছরে অমদানি করা পেঁয়াজের মূল্য কমেছে ২৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ। আর দেশী পেঁয়াজের মূল্য কমেছে ৩০ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে রয়েছে পেঁয়াজের বড় বিপণিকেন্দ্র হামিদউল্লাহ মিয়া মার্কেট। দেশের প্রধান এ মার্কেটে প্রতিদিন সীমান্তবর্তী স্থলবন্দর এবং দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রাকে ট্রাকে আসে আমদানি করা এবং দেশী পেঁয়াজের চালান। গত দুই সপ্তাহ ধরে এ মার্কেটে পেঁয়াজ রাখার জায়গা হচ্ছে না। দোকান, গুদাম ছেড়ে পেঁয়াজের বস্তা রাখতে হচ্ছে সামনের রাস্তায়। পেঁয়াজের এমন সরবরাহ অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। এখনও আসছে পেঁয়াজ। চাহিদার তুলনায় আমদানি বেশি হওয়ায় এবং দেশী পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম কমছে ‘অস্বাভাবিক হারে’। অবস্থা এমন হয়েছে স্থলবন্দরে যে দামে বিক্রি হচ্ছে, খাতুনগঞ্জে এর চেয়ে কম দামে মিলছে পেঁয়াজ। ভারত থেকে আমদানি করা উন্নতমানের নাসিক পেঁয়াজ খাতুনগঞ্জে বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৪ টাকা কেজিতে। একই দামে বিক্রি হচ্ছে স্থলবন্দরেও। মেহেরপুর থেকে আসা ভালো মানের দেশী পেঁয়াজ ১০ টাকা কেজি। চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত সরবরাহ এবং পচনশীল হওয়ায় লোকসান দিয়েই পেঁয়াজ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
গত বুধবার খাতুনগঞ্জে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি দোকান ও গুদাম পেঁয়াজে ভরপুর। ভারতের নাসিক জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৩ থেকে সর্বোচ্চ ১৪ টাকায়। বাজারে এ জাতের পেঁয়াজের চাহিদা সর্বোচ্চ। এছাড়া বাজারে দেশী পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। মুড়ি কাটা পেঁয়াজ ছাড়াও গত সপ্তাহে বাজারে এসেছে মেহেরপুর থেকে আসা উন্নতমানের পেঁয়াজ। যদিও চট্টগ্রামে এ জাতের পেঁয়াজের চাহিদা খুব বেশি নয়। ফাহিম ট্রেডার্সের আবদুল মান্নান বলেন, পেঁয়াজের দাম এত বেশি পড়ে গেছে, আমদানিকারক-বেপারি সবাই লোকসান দিচ্ছেন। সীমান্তের স্থলবন্দর থেকে এখানে ২০ টন পেঁয়াজ আনতে ট্রাকভাড়া পড়ছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। অর্থাৎ কেজিপ্রতি গাড়িভাড়া ও অন্যান্যসহ তিন টাকা খরচ পড়ে। বেপারিরা বাজার ধরে রাখার জন্যই এখনও পেঁয়াজ নিয়ে আসছেন। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, দেশে প্রতি বছর ১৮ থেকে ২০ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা থাকলেও এ বাজার অনেকাংশে আমদানিনির্ভর।

No comments

Powered by Blogger.