মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ভারতীয় সেনার স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সদস্যদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণে প্রথমবারের মতো উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে এ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারত সরকার, ভারতীয় সেনাবাহিনী ও জনগণের অবদান ব্যাপক। বিশেষত গোলাবারুদ ও প্রশিক্ষণ প্রদান এবং সম্মুখ সমরে শহীদ ভারতীয় সেনা সদস্যদের কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করতেই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। ২ ফেব্রুয়ারি প্রস্তাবের ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) বৈঠক করে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ।
বর্তমানে প্রকল্পটি অনুমোদনের প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে সদ্য অবসরে যাওয়া মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল হান্নান বুধবার যুগান্তরকে বলেন, মিত্রবাহিনীর সদস্যদের জন্য এর আগে কাগজে-কলমে বা ফরমাল আর কোনো স্মৃতিস্তম্ভ হয়নি। এটাই প্রথম স্মৃতিস্তম্ভ করা হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখা সম্ভব হবে। পরিকল্পনা কমিশনে পিইসি সভায় অংশ নেয়া মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব পারভীন আখতার যুগান্তরকে বলেন, হ্যাঁ, আমরা ভারতীয় মিত্রবাহিনীর শহীদ হওয়া সদস্যদের জন্য স্মৃতিস্তম্ভ করছি। তবে আশুগঞ্জে কেন তৈরি করা হচ্ছে, এমন প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি তিনি। সূত্র জানায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে এ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ কোটি ৭৪ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। চলতি বছর থেকে ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ স্মৃতিস্তম্ভে পার্ক, আন্ডারপাস, ফুডকোর্ট ও বিদ্যুতের সাব-স্টেশনসহ বিভিন্ন বিষয় যুক্ত থাকবে। প্রকল্পটির বেশকিছু বিষয়ে মতামত তুলে ধরা হয়েছে পিইসি সভায়। এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের স্বাক্ষরিত মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামোর (এমটিবিএফ) বরাদ্দ সংক্রান্ত তথ্য ও প্রত্যায়নপত্র চাওয়া হয়েছে। এছাড়া মিত্রবাহিনীর যেসব শহীদ সদস্যের নাম স্মৃতিস্তম্ভের ফলকে খচিত থাকবে তাদের তালিকা প্রণয়নের তাগিদ দেয়া হয়েছে।
সভায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং গণপূর্ত অধিদফতরের সমন্বয়ে প্রকল্পটির বাস্তবায়নপরবর্তী ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালনের বিষয়ে মত দেয়া হয়। প্রকল্পের প্রস্তাবিত সেবা ও সরবরাহ, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ, গাড়ি ক্রয় এবং বৈদেশিক প্রশিক্ষণ খাত নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। পরবর্তীতে সরবরাহ ও সেবা, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতের ব্যয় যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ এবং গাড়ি কেনার পরিবর্তে গাড়ি ভাড়ার সংস্থান রাখা এবং বৈদেশিক ভ্রমণ খাত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) থেকে বাদ দেয়ার বিষয়ে সবপক্ষই একমত পোষণ করে। পিইসি সভার কার্যবিরণী সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাবিত বিজ্ঞাপন ব্যয়, গণপূর্ত ও স্থাপত্য অধিদফতরের অনুকূলে ব্যয় বা বরাদ্দ যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ এবং পূর্ণকালীন প্রকল্প পরিচালকের পরিবর্তে খণ্ডকালীন প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। সভায় প্রকল্পের আওতায় পার্ক, আন্ডারপাস, ফুডকোর্ট ও সাব-স্টেশন ইত্যাদি ব্যবস্থাপনার জন্য নীতিমালাসহ লিজ দেয়া এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক টয়লেট স্থাপন ও গাড়ি পার্কিং তৈরির বিষয়ে মতামত দেন বাস্তবায়ন, পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিনিধি। তিনি বলেন, টয়লেটগুলো মূল ফটকের পাশে স্থাপন না করে উপযুক্ত স্থানে স্থাপন করতে হবে। এছাড়া প্রকল্পের ক্রয় পরিকল্পনায় সমজাতীয় প্যাকেজগুলো একসঙ্গে করে গুডস ও ওয়ার্কসের প্যাকেজ সংখ্যা যথাসম্ভব সীমিত রাখার তাগিদ দেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.