লুটের লক্ষ্যেই সরকার গ্যাস ব্যবসায়ীদের সুযোগ দিচ্ছে

গ্যাস শেষ হয়ে যাচ্ছে- এসব কথা বলে বলে সরকার মূলত বিদেশী কোম্পানিগুলোকে ব্যবসার সুযোগ করে দিচ্ছে। গ্যাস উত্তোলনে দেশীয় কোম্পানিগুলোর সক্ষমতা নেই বলে যে প্রচারণা চালানো হচ্ছে, তাও মূলত লুটপাটের জন্যই। শনিবার দুপুরে রাজধানীর মুক্তিভবন মিলনায়তনে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি আয়োজিত ‘বাংলাদেশ গ্যাস সম্পদ, জাতীয় সক্ষমতা ও জ্বালানি খাতে সরকারী নীতি’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় এসব অভিযোগ করা হয়েছে। আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, সাধারণ মানুষকে নিঃস্ব করে সরকার নিজেকে বিত্তশালী দেখাতে চাচ্ছে। একই সঙ্গে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করতে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ব্যবসায়ীদের হয়ে কাজ করছে সরকার। গ্যাস উত্তোলনে ৫৯ ভাগ ক্ষেত্রেই বিদেশী কোম্পানির ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে আমাদের। অথচ দেশীয় কোম্পানিগুলোকে ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. বদরুল ইসলাম, অধ্যাপক এম এম আকাশ, গণসংহতির প্রধান সমন্বয়কারী জুনায়েদ সাকি, কমিটি নেতা মোশাররফ হোসেন নান্নু, বজলুর রশিদ ফিরোজ, ফখরুদ্দিন কবির আতিক প্রমুখ। মতবিনিময় সভায় মূল প্রতিপাদ্য পাঠ করেন অধ্যাপক মোশায়দা সুলতানা ঋতু। শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, বিদেশীদের হয়ে কাজ করতেই উদ্দেশ্যমূলকভাবে দেশীয় কোম্পানিগুলোকে সক্ষমহীন করে তোলার পাশাপাশি হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করতে মূলত এলপিজি ও এলএনজি গ্যাস ব্যবসায়ীদের সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, গ্যাস রফতানি চুক্তি বন্ধ করতে হবে। দায়মুক্তি আইনের মাধ্যমে সরকার কোটি কোটি টাকা লুটপাট করছে।
এ আইনটি ২০২০ সাল পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। তিনি আশংকা প্রকাশ করে বলেন, এ সময়ে লুটপাট আরও বাড়বে। অভিযোগ করেন, গ্যাসের দাম বাড়িয়ে কারও কারও পকেট ভারি করা হচ্ছে। অনাবিষ্কৃত হ্যাস উত্তোলন ১০ বছর ধরে বন্ধ রাখা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের ১৫ হাজার কোটি টাকা নিয়েও প্রশ্ন করেন। তিনি বলেন, এতগুলো টাকা কোথায় গেল? কে দেবে এর জবাব। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সমালোচনা করে আনু মুহাম্মদ বলেন, অর্থমন্ত্রী বলছেন, বিশ্বে তেল ও গ্যাসের দাম যেহেতেু কমছে বাংলাদেশেও তেল ও গ্যাসের দাম কমানো হবে। আর বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলছেন, তেল ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হবে এবং তা ক্রমান্বয়ে বাড়বে। অর্থমন্ত্রী নিজেই জানেন না কী করে তেল গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে। আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, সরকার বাপেক্সকে পঙ্গু করে এখানে শেভরন, কেয়ার্ন, শেল, ইউনিকল, সান্তোস, কনকো ফিলিপসের স্বার্থ দেখছে। সম্প্রতি চীন, ভারত, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়িক স্বার্থ ঊর্ধ্বে রেখে রফতানিমুখী চুক্তিসহ নানা সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর ফলে দেশের মানুষ স্থল, জলভাগের গ্যাসের কোনো সুবিধাই পাবে না। সভায় গ্যাসের দাম বৃদ্ধি এবং রফতানিমুখী গ্যাস চুক্তির আয়োজন বন্ধ করে সুন্দরবন বিনাশী রামপাল প্রকল্প বাতিলসহ জাতীয় কমিটির সাত দফা বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়। অধ্যাপক এমএম আকাশ বলেন, গ্যাস উত্তোলনে বিদেশীনির্ভরতা ত্যাগ করে দেশীয় কোম্পানিগুলোকে স্বয়ংস্পূর্ণ করতে হবে। বিশ্বে যখন তেল ও গ্যাসের দাম কমছে তখন বাংলাদেশে কেন দাম বাড়ছে। এর জবাব সরকার দিচ্ছে না। বিদেশনির্ভর আমাদের সরকারের কি হাত-পা বাঁধা, তা আমরা জানতে চাই।

No comments

Powered by Blogger.