বাবা-মায়ের বিচ্ছেদে হতাশা থেকে জঙ্গিবাদে অমি

পারিবারিক হতাশা কুরে কুরে খাচ্ছিল ইংরেজি মাধ্যমে লেখাপড়া করা এ-লেভেলের ছাত্র জঙ্গি ইমতিয়াজ তালুকদার অমিকে। বাবা-মায়ের বিচ্ছেদই হতাশাগ্রস্ত করে তুলে কুমিল্লায় পুলিশের ওপর হামলাকারী এই জঙ্গিকে। আর একেই কাজে লাগায় জঙ্গিরা। ইংরেজিতে পারদর্শী ও অনলাইন যোগাযোগে দক্ষ সেনা কর্মকর্তার ছেলে অমি এক পর্যায়ে জঙ্গিদের বিভিন্ন সাইটে ঢুকে তাদের লেখাগুলো পড়ে নিজেকে বদলে ফেলেন। এছাড়া ফেসবুক-টুইটারে জঙ্গিদের বিভিন্ন পোস্টগুলোও তাকে জঙ্গিবাদে ধাবিত করে দ্রুত। যোগাযোগে দক্ষতার কারণে সে সহজেই নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় নিহত নব্য জেএমবির সমন্বয়ক তামিম আহমেদ চৌধুরীর প্রিয় পাত্র হয়ে ওঠে। টুইটারেই তামিমের সঙ্গে তার পরিচয় এবং সেই থেকে ঘনিষ্ঠতা। তুরস্কে নিহত আইএসের জঙ্গি জিলানী ওরফে আবু জান্দালের সঙ্গে ইমতিয়াজের যোগাযোগ ছিল। মূলত জিলানীর হাত ধরেই সে নব্য জেএমবিতে নাম লেখায়। জিলানীই তাকে ‘কথিত জিহাদে’ যোগ দিতে উদ্বুদ্ধ করে। অবশেষে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে সে ঘর ছাড়ে। ইমতিয়াজ এখন কুমিল্লার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে পুলিশকে এসব তথ্য জানিয়েছে। সুস্থ হলে তাকে রিমান্ডে নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) ও কুমিল্লা ডিবি পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, অমি মূলত নব্য জেএমবির সাংগঠনিক কাজ করত। ফলে বিভিন্ন জঙ্গি আস্তানায় তার যাতায়াত ছিল। অভিযানের কয়েকদিন আগেও সে নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ার আস্তানায় তামিমের সঙ্গে ছিল। অভিযানের আগে সাংগঠনিক কাজে তামিম তাকে বাইরে পাঠায়। মেধাবী হওয়ার কারণে তামিম তাকে অপারেশনাল সেলে অন্তর্ভুক্ত না করে সাংগঠনিক কাজে লাগায়। অল্প দিনের মধ্যেই সে তামিমের আস্থাভাজন হয়ে ওঠে। পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা জানান, অমি পারিবারিক কারণে হতাশ ছিল। বিশেষ করে তার বাবা-মায়ের মধ্যে যোগাযোগ ছিল না। দীর্ঘদিন ধরে তার মধ্যে হতাশা কাজ করছিল। এদিকে পুলিশের ওপর আরেক হামলাকারী জঙ্গি মাহমুদ হাসান কনভার্টেড রোহিঙ্গা। তার বাবা বাংলাদেশী। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এখন সে পুলিশের সিটিটিসি ইউনিটের হেফাজতে। কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মঞ্জুর আলম যুগান্তরকে বলেন, জঙ্গি মাহমুদ হাসানকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অপরদিকে ইমতিয়াজ সুস্থ হলে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তারা দু’জনেই নব্য জেএমবির বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে।
তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। একজন দায়িত্বশীল গোয়েন্দা কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, তামিমসহ নব্য জেএমবির শীর্ষ কয়েকজন জঙ্গির মৃত্যুর পর মাইনুল ইসলাম ওরফে মুসা সংগঠনটির সমন্বয়কের দায়িত্ব পান। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অমি বলেছে, মুসার নেতৃত্বে অধিকাংশ জঙ্গি এখন চট্টগ্রাম এলাকায় রয়েছে। তারা বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনাও করছে। তাদের একটি গ্রুপ যাত্রাবাড়ী এলাকায় অবস্থান করছে বলেও সে তথ্য দিয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে যাত্রাবাড়ীর আস্তানায় বিস্ফোরক পৌঁছে দেয়ার কথা ছিল হামলাকারী দুই জঙ্গির। কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, অমি সাংগঠনিক কাজ করলেও সে প্রশিক্ষণ নিয়ে রেখেছে। জেএমবির অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহকারী জঙ্গি হাদিুসর রহমান সাগর তাকে অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এই সাগর গুলশান হামলার অপারেশনাল কমান্ডার নুরুল ইসলাম মারজানের ভগ্নিপতি। সম্প্রতি মারজান পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা গেছে। অমিকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ : কুমিল্লা ব্যুরো জানায়, অসুস্থ অমিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তিন দিন ধরে পুলিশের জঙ্গি দমন বিভাগ ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এদিকে তার সহযোগী মাহমুদ হাসানকে ঢাকায় নেয়া হয়েছে। সেখানে তাকে নিয়ে বিভিন্ন জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চলছে বলে জেলা পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে। মঙ্গলবার কুমিল্লার চান্দিনায় তল্লাশির সময় বাস থামালে দুই জঙ্গি বাস থেকে নেমে স্কুলব্যাগ ভর্তি বোমা নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা করে। এ সময় দুই জঙ্গিকে পুলিশ ও জনতা আটক করে।

No comments

Powered by Blogger.