শিশুদের বধিরতার কারণ ও প্রতিকার

সারা বিশ্বের ৩৬ কোটি মানুষ কানে কম শোনে। এর মধ্যে ৩.২ কোটি হচ্ছে শিশু- যার অধিকাংশ নিন্ম বা মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য। শিশুদের কথা শেখার, শিক্ষা লাভের এবং সামাজিকীকরণের জন্য কানে শোনা গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে, শিশুদের ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ বধিরতাই প্রতিরোধ যোগ্য।
সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না করালে তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভালো করতে পারে না, ফলে পরবর্তী জীবনে ভালো কর্মসংস্থান হয় না বা হলেও ঠিক মতো দায়িত্ব পালন করতে পারে না। এই শিশুরা সবার সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে মেলামেশা ও খেলাধুলা করতে পারে না বলে তাদের মেজাজ খিটখিটে থাকে, মানসিক চাপ এবং একাকিত্বে ভুগতে থাকে যা তাদের আবেগ ও মানসিক বিকাশের অন্তরায়।
শিশুদের বধিরতার কারণ
* ৪০ শতাংশ বধিরতা জন্মগত বংশগত হয়ে থাকে। এ ছাড়াও শিশু যদি নির্ধারিত সময়ের আগে ভূমিষ্ঠ হয়, শিশু স্বাভাবিকের চেয়ে যদি কম ওজনের হয়, জন্মের সময় যদি শ্বাসকষ্ট হয় এবং জন্মের পরপর শিশুর যদি জন্ডিস হয় তাহলে শিশু বধিরতা জনিত সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে।
* গর্ভবতী মা যদি রুবেলা বা সাইটোমেগালো ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়, শিশুদের যদি হাম, মাম্পস্ মেনিন্জাইটিস হয়, শিশুদের কানে যদি জীবাণুর সংক্রমণ হয় বা কান থেকে পুঁজ বা পানি বের হয় এক্ষেত্রে শিশু বধিরতার পাশাপাশি জীবনের জন্য হুমকি স্বরূপ জটিলতা দেখা দিতে পারে।
* কানে অত্যধিক খৈল জমা হওয়া বা মধ্যকর্ণে পানি জমা হওয়াও শিশুদের বধিরতার কারণ।
* স্মার্ট ফোন বা হেডফোনে উঁচু ভলিউমে দীর্ঘ সময় ধরে গান শোনা, গুলি, বোমা ও পটকার আওয়াজ, লম্বা সময় ধরে আইসিইউতে অবস্থান।
* ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মা ক্যান্সার এবং কানের রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত কিছু ওষুধের যথেচ্ছ ব্যবহারও বধিরতার কারণ।
বধিরতা প্রতিরোধে করণীয় বধিরতা প্রতিরোধে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, সামাজিক সংগঠন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সুশীল সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও পদক্ষেপ প্রয়োজন।
* হাম, রুবেলা, মাম্পস্, মেনিনজাইটিস সঠিকভাবে টিকা দান কর্মসূচির মাধ্যমে নির্মূল করতে হবে।
* মাতৃ ও শিশু-স্বাস্থ্যের উন্নয়ন, উন্নত পুষ্টি ব্যবস্থা, নিরাপদ জন্মদানকে উৎসাহিতকরণ, অতি দ্রুত নবজাতকের জীবাণু সংক্রমণ এবং জন্ডিসের চিকিৎসা করা, পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি করা।
* প্রয়োজন অনুযায়ী হিয়ারিং এইড এবং কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট ব্যবহারের মাধ্যমে শ্রবণের পুনর্বাসন করা, স্পিচ থেরাপির ব্যবস্থা করা।
* মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীদের কানের প্রাথমিক পরিচর্যার ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দেয়া।
* ওষুধ বিক্রয় ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের জন্য শাস্তির বিধান রেখে আইন প্রণয়ন ও যথাযথ প্রয়োগ করা।
* শিশুদের কানের যত্ন সম্পর্কে অবহিত করা এবং নিরাপদ শ্রবণের অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য সচেতনতা তৈরি করা।
লেখক : নাক কান গলা রোগ বিশেষজ্ঞ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা

No comments

Powered by Blogger.