পরিবেশ যখন বিপন্ন by প্রকৌশলী এস এম ফজলে আলী

আমাদের চার পাশের সব জড় ও জীবকে নিয়ে গড়ে উঠেছে পরিবেশ। এই জীব ও জড়ের মধ্যে রয়েছে নিত্যদিনের সম্পর্ক এবং এ কারণে আমাদের চার পাশে ঘটছে নিত্যদিনের বিচিত্র সব কর্মকাণ্ড। অনেক সময় কর্মকাণ্ড যখন স্বাভাবিক নিয়মে চলতে পারে না, তখন দেখা দেয় পরিবেশের সঙ্কট। আসলে এই সঙ্কটের বেশির ভাগই সৃষ্টি করেছে মানুষেরাই তাদের নানা কর্মকাণ্ডে পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের ভারসাম্য বিনষ্ট করে। ফলে মানুষের জীবনযাত্রা হুমকির মুখোমুখি হচ্ছে। আর একেই আমরা বলি ‘পরিবেশদূষণ। ’ জীব জগতে যখন প্রাণীর সংখ্যা দ্রুত বেড়ে যায়, তখন তারা এমন সব কাজ করে যা তার চার পাশের জগৎকে স্বাভাবিকভাবে চলতে দেয় না। মানুষের কথাই আগে বলা যাক। একটি দেশের মানুষের সংখ্যা যখন বেড়ে চলে তারা তখন নানা রকম অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়। বাড়তি মানুষের জন্য বাড়তি খাবারের দরকার পড়ে। তাই তারা উচ্চফলনের ধানের চাষ করে থাকে। এর হাত ধরে আসে সার, বীজ, কীটনাশক আরো কত কী!
চাষের জমি বাড়াতে, মানুষের পড়তি জমিতে বাড়ি তৈরিতে কাটতে হয় বন। এতে হুমকির সম্মুখীন হয় বন্যপ্রাণী। বায়ুমণ্ডলে বেড়ে যায় কার্বন, ক্ষতিগ্রস্ত হয় ওজোনস্তর ও বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা যায় বেড়ে। বাড়তি মানুষের চাহিদা কেবল খাদ্যে সীমিত নয়, তাদের জন্য পণ্যসামগ্রীর সরবরাহও বাড়াতে হয়। ফলে গড়ে ওঠে নতুন নতুন কল-কারখানা, ইঞ্জিনচালিত নানা প্রকার যানবাহন এসব কলকারখানার রাসায়নিক বর্জ্য আর যানবাহনের কালো ধোঁয়া দূষিত করে পরিবেশ। উন্নয়নের নাম করে আমরা পরিবেশকে তার স্বাভাবিক নিয়মে চলতে দেই না। পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে; কারণ মানুষ তাকে তার বিরাট চাহিদার জন্য স্বেচ্ছাচারীভাবে ব্যবহার করছে। ফলে পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। এটা সারা বিশ্বের উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠছে। পরিবেশদূষণকে আমরা চারটি প্রধান ভাগে ভাগ করতে পারি। এগুলো হচ্ছেÑ মৃত্তিকাদূষণ, পানিদূষণ, বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণ। মাটি জীবনকে ধারণ, লালন ও বিকশিত করে।
কেবল উদ্ভিদ নয়, মানুষ ও অপর সব প্রাণীরও জীবন, লালনপালন ও বিকাশ মাটির ওপর নির্ভরশীল। তাই কবি বলেছেন ‘মাটি তো নয়, জীবনকাঠিÑ কণায় কণায় জীবন তার;/মাটির মাঝে প্রাণের মেলাÑ মাটিই প্রাণের পারাপার।’ কবি মাটির নানা গুণের কথা বললেও আমরা এর প্রতি তেমন যতœশীল নই। মাটি আজ আমাদের হাতে বড় দূষণের শিকার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে মাটিতে বর্জ্যরে পরিমাণ অধিক পরিমাণে বেড়ে যাওয়া। এই দূষণের জন্য দু’টি কারণ প্রধানÑ কঠিন ও রাসায়নিক বর্জ্য। আমরা প্রতিদিন চার পাশেই জমিয়ে তুলছি আবর্জনার স্তূপ। দিনে দিনে জমে ওঠা এসব আবর্জনা আমাদের পরিবেশের ক্ষতি করছে। মানুষ, প্রাণী ও উদ্ভিদের নানা রোগের সৃষ্টি হচ্ছে। অন্যান্য দূষণের সাথে পলিথিনরূপী মারাত্মক দূষণ যোগ হয়েছে। এটা পচে মাটিতে মিশে যেতে প্রায় ৪০০ বছর লাগে। এবং জমিতে ফসল উৎপাদনে বাধার সৃষ্টি করে। মাটির ওপর আস্তরণ পড়ছে। অচল করে দিচ্ছে নর্দমা ও পয়ঃনিষ্কাশনের পথগুলো। ফলে দেখা দিচ্ছে জলাবদ্ধতা। পলিথিন ও কঠিন বর্জ্যগুলো নদী দিয়ে সাগরে পতিত হচ্ছে।
ফলে নদী ও সাগরের মাছ ও অন্যান্য প্রাণী দারুণ বিপদে পড়ছে। রাসায়নিক বর্জ্যও মাটির অশেষ ক্ষতি করছে। মাটি তার উৎপাদনের ক্ষমতা হারাচ্ছে। মাটিতে যেসব প্রাণীর বাস এবং যেসব প্রাণী মাটির ওপরে বসবাস করে তাদের ক্ষতি হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। মূলত কৃষি ও শিল্প থেকে যে রাসায়নিক বর্জ্য সৃষ্টি হচ্ছে, তা মৃত্তিকা দূষণের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের দেশে কীটনাশকের ব্যবহার শুরু হয় ষাটের দশকে। উচ্চ ফলনশীল জাতের ফসল উৎপাদন বাড়াতে এ কীটনাশকের ব্যবহার বেড়েই যাচ্ছে। কীটনাশক শুধু ক্ষতিকারক কীটকেই বিনাশ করছে না, শেষ করছে উপকারী কীটপতঙ্গকেও। উন্নত বিশ্বে কিছু কীটনাশক মানুষ ও প্রাণীর ক্ষতি করে বলে তার ব্যবহার নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। অথচ সেসব ক্ষতিকারক কীটনাশক আমাদের দেশে দেদার ব্যবহার হচ্ছে। কীটনাশকের সাথে আগাছানাশক ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে। এগুলোর ব্যবহার কমিয়ে প্রাকৃতিক নিয়মে বালাইনাশক ব্যবহার করা উচিত, যা স্বাস্থ্যের ও মাটির জন্য ভালো। যেসব উপাদান মাটিকে দূষিত করছে, তা পরে মিশে যাচ্ছে পানিতে ও বায়ুতে।
শিল্পকারখানার বর্জ্য প্রথমে জমি ও পরে মাটিকে দূষিত করে। কলকারখানার বিষাক্ত কালো ধোঁয়া আকাশের অনেক ওপরে উঠে গেলেও বৃষ্টির পানিতে মিশে তা ‘এসিড বৃষ্টি’ হয়ে মাটিতে ফিরে আসে। আমাদের পৃথিবীকে ঘিরে আছে বায়ুমণ্ডল। এ বায়ুমণ্ডল ধারণ ও পোষণ করছে জীবনকে। বায়ু আছে বলেই পৃথিবীর বুকে গড়ে উঠেছে মানুষের বসতি, প্রাণী ও উদ্ভিদের বিপুল ও বিচিত্র সমারোহ। আমরা অনেকে মনে করে থাকি এ বিশাল বায়ুমণ্ডলের ভাণ্ডার ক্ষতির মুখোমুখি হওয়ার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই। যেসব গ্যাস অনবরত উদগিরণ হচ্ছে তার সব কিছুই নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়ার আশ্চর্য ক্ষমতা আছে বায়ুর। এ ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বায়ুর গ্রহণ ক্ষমতা যে সীমিত, তা আমাদের চার পাশের জগৎটির দিকে তাকালেই বোঝা যাবে। আমাদের বড় শহরগুলোতে অসংখ্য মোটরযান যখন ধোঁয়া ছড়ায় তখন আমরা কেমন হাঁসফাঁস করি, যেন দম আটকে গেল। এমন ধারা কিছু দিন চলার পরই শুরু হতে পারে রীতিমতো শ্বাসকষ্ট এবং তা থেকে আরো সব জটিল রোগ। শিল্পকারখানার কালো ধোঁয়া উঠছে অনেক ওপরের আকাশে।
বাতাসে ভেসে বেড়ানো সে ধোঁয়া বৃষ্টির পানিতে মিশে নেমে আসছে পৃথিবীর বুকেই। বিষিয়ে দিচ্ছে নদী ও হ্রদের পানি, ধ্বংস করছে বনভূমি, ঘরছাড়া করছে যেসব প্রাণী বনে বাসা বাঁধছে তাদের। বিষাক্ত ধোঁয়া মেশানো এই বৃষ্টিই পরিচিত এসিড বৃষ্টি হিসেবে। পৃথিবীর চার পাশের বায়ুর বিশাল ভাণ্ডার দূষিত হচ্ছে আরো নানা কারণে। অসংখ্য যানবাহন রোজ রোজ বাতাসে ছড়িয়ে দিচ্ছে কার্বন মনো-অক্সাইড ও হাড্রোকার্বন নামে বিষাক্ত গ্যাস। এসব গ্যাস সবচেয়ে ক্ষতি করছে মানুষের। এতে শ্বাসজনিত রোগ থেকে শুরু করে ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগ পর্যন্ত হতে পারে। যানবাহন ও কারখানাগুলো থেকে বেরিয়ে আসে কার্বন ডাই-অক্সাইড ও কার্বন মনো-অক্সাইড। আমরা জানি, শক্তির একটা প্রধান উৎস হলো কয়লা। নাইট্রোজেন ও সালফার অক্সাইড উৎপন্ন হয় কয়লা পোড়ানো থেকে। এগুলো বাতাসকে দূষিত করে। নাইট্রোজেন ও সালফার অক্সাইড (So) বায়ুমণ্ডলের আর্দ্রতায় যথাক্রমে নাইট্রিক এসিড ও সালফিউরিক এসিডে পরিণত হয়। শীতকালে ধোঁয়া ও কুয়াশা একসাথে মিশে যে ‘ধোঁয়াশা’ তৈরি হয় তা-ও যানবাহন থেকে বেরিয়ে আসা ধোঁয়া ও হাইড্রো কার্বন থেকেই সৃষ্টি হয়। শিল্পকারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া বায়ুদূষণের একটি বড় কারণ।
দুনিয়ার শিল্পায়িত দেশগুলোতে এসিড বৃষ্টি জলজ প্রতিবেশকে দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এসিড বৃষ্টি বনভূমি নষ্ট করারও কারণ বটে। শিল্পকারখানা, খনি ও যান্ত্রিক কৃষিব্যবস্থা থেকে নির্গত সিসা, নিকেল, তামা ও লোহা মানুষের শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। বায়ুদূষণের কারণে এসব সমস্যা দেখা দিয়েছে। আমরা যখন ‘নীল গ্রহ’ বলি, তখন বোঝাই আমাদের পৃথিবীটাকেই। আকাশ থেকে পৃথিবীকে দেখায় নীল আর নীল। আর নীল দেখার কারণ হচ্ছে পৃথিবীজুড়ে বিশাল পানির জগৎÑ নদী, হ্রদ আর সাগর। ভূভাগের ৭১ শতাংশ জুড়ে আছে সাগর, মহাসাগর, আর মাত্র ২৯ শতাংশ জুড়ে আছে স্থল। পৃথিবীর বেশির ভাগই তিনটি মহাসাগরের দখলে রয়েছে। এগুলো হচ্ছেÑ প্রশান্ত মহাসাগর, আটলান্টিক মহাসাগর ও ভারত মহাসাগর। এগুলো আছে বলেই আমাদের পৃথিবী অন্য সব গ্রহ থেকে আলাদা। এদের কারণেই এখানে জন্মেছে উদ্ভিদ ও প্রাণী। পৃথিবীর যে মেঘমালার বিস্তার ওপরে তাও সম্ভব হয়েছে পৃথিবীজুড়ে পানির কারণেই। পানি রয়েছে স্থলভাগের অসংখ্য নদীসহ নানান জলাধারে, পানি রয়েছে পৃথিবীর অভ্যন্তরেÑ ভূগর্ভে। এসবই জীব ও উদ্ভিদকে বাঁচিয়ে রেখেছে আদিকাল থেকে। পানি ও জীবন বাঁধা পড়েছে একই সুতোয়।
পানির অপর নাম জীবন বলা হলেও মানুষ পানিকে ঠেলে দিচ্ছে বিপদ থেকে মহা বিপদের দিকে। অন্য কথায় মানুষ নিজেই তৈরি করছে নিজের জন্য সমস্যা। আর এ বিপদ তৈরি হচ্ছে অর্থনেতিক কর্মকাণ্ডের কারণে। পানিদূষণ আজকে আমাদের জন্য একটি মহা ভাবনার কারণ। আমরা মহাসাগর নামের যে বিশাল জগতের কথা বলি, সে জগৎটিও আজ সমস্যার মুখোমুখি। নগরায়ন ও শিল্পায়নের ফলে পয়ঃনিষ্কাশন ও শিল্পবর্জ্য দ্রুত বেড়ে চলেছে। এসব বর্জ্য নদীতে এবং নদী থেকে সাগরে পতিত হচ্ছে। ফলে বেলাভূমিতে ও সাগরতীরে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া বেড়ে যাচ্ছে। জলযানও দূষিত করছে নদীর পানি। জলযান থেকে নদীতে নিক্ষেপ করা বর্জ্য বিষাক্ত করছে পানিকে। এটা মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর রোগের কারণ হচ্ছে। তেলবাহী জাহাজ দুর্ঘটনায় পড়লে তেল ছড়িয়ে পড়ে নদী ও সাগরে। এ ধরনের তেল নদীর উপরিস্তরে ভেসে থাকে। ফলে নদী ও সাগরের প্রাণী, বিশেষ করে পাখি ও নদীর মাছ মারাত্মক বিপদের সম্মুখীন হচ্ছে।
এ ছাড়া জাহাজগুলো বন্দরে ভেড়ার পর তার বর্জ্য নদীতে ফেলে। এ বর্জ্য দূষিত করছে নদী ও সাগরের পরিবেশ। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কৃষিফলন বাড়ানোর প্রয়োজনে প্রচুর রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়। এসব সার ও কীটনাশক শেষ পর্যন্ত পানিতে মিশে নদীতে পতিত হয়। সেখান থেকে সাগরে যায়। এগুলো মাটির নিচের পানিতেও মিশে যায়। এসব বিষাক্ত বর্জ্য ভূগর্ভস্থ পানি এবং সেই সাথে নদনদী, হ্রদ ও সাগরের পানিকে দূষিত করেছে। পারমাণবিক স্থাপনা পানিদূষণের একটি বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থাপনাগুলো থেকে পারমাণবিক বর্জ্য নিক্ষেপ করা হচ্ছে সাগরে। ফলে সাগরের প্রাণী ও উদ্ভিদকুল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রাসায়নিক বর্জ্য ভূগর্ভস্থের পানিদূষণের মধ্য দিয়ে খাদ্যচক্রের মধ্যেও ঢুকে পড়ছে। আমরা যে সামুদ্রিক মাছ ধরে থাকি, তারা সমুদ্রের জলজ উদ্ভিদ খেয়ে বেঁচে থাকে। এসব উদ্ভিদ সংক্রমিত করছে রাসায়নিক দূষণ। মাছ থেকে তা মানুষের দেহে প্রবেশ করে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি করে থাকে।
অপর দিকে, ভূগর্ভস্থ পানিতে রাসায়নিক বর্জ্য স্থান করে নেয়। সে পানি পান করে আমরা নানা রোগে আক্রান্ত হই। চিকিৎসাবিদেরা অন্ত্রের ক্যান্সারের জন্য, শিশুদের নিউমোনিয়া ও স্তন ক্যান্সারের জন্য পানির রাসায়নিক দূষণকে অনেকাংশে দায়ী বলে মনে করেন। আজ বাংলাদেশে দূষিত পানির দরুন বহু লোক আর্সেনিকে আক্রান্ত হচ্ছে। জীবজগতের প্রায় সবাই কমবেশি শব্দ তৈরি করছে। শুকনো পাতা মর্মর করে ঝরে পড়ে, বিকট শব্দে বাজ পড়ে, সাগর ফুঁসে ওঠে মহাগর্জনে। সেসব ঘটছে হামেশা। প্রয়োজনে মানুষ নানা প্রকার শব্দ করার যন্ত্র আবিষ্কার করেছে। রেলগাড়ি ও লঞ্চ-জাহাজ সিটি বাজায়; মোটরগাড়ি ও কলকারখানা শব্দ না করে চলতে পারে না। শব্দ করছে রেডিও-টেলিভিশন। এগুলো এখন আমাদের নিত্যদিনের সাথী। আমরা শব্দ করছি, আরো শব্দ করছে অনেক জীব। কিন্তু এ শব্দ যখন বেশি জোরে তৈরি হয় তখন হয় বিপত্তি। শব্দ প্রতি সেকেন্ডে ৩৫০ মিটার পথ চলতে পারে। শব্দের কারণে যে কম্পন তৈরি হয়, এর হারকে বলা হয় ফ্রিকোয়েন্সি। একজন সুস্থ মানুষ ২০ থেকে ২০০০০ পর্যন্ত ফ্রিকোয়েন্সিতে শুনতে পায়।
শব্দ যত কাছাকাছি থেকে করা হবে, ততই এর তীব্রতা অনুভূত হবে। চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা মনে করেন, ৫০ শতাংশ রোগের উৎস হচ্ছে শব্দ। তারা এ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন যে শব্দের তীব্রতার কারণে রক্তের নালীর সঙ্কোচন হয়ে থাকে এবং কারো রক্তচাপ বেড়ে যায়। এতে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা হৃদরোগের কারণ। কলকারখানায় যারা কাজ করেন, তারা অনেক সময় শব্দ বধিরতায় ভোগেন। শব্দের সবচেয়ে ক্ষতিকর দিকটি হলো মানসিক। উচ্চ শব্দে মস্তিষ্কের দারুণ চাপের সৃষ্টি হয়। এতে মানুষের কাজ করার ইচ্ছা ও উদ্যম কমে যেতে পারে। শব্দদূষণ থেকে রক্ষা পেতে হলেÑ খুব জোরে গানবাজনা বন্ধ করতে হবে। বেশি দিন একনাগাড়ে ১১০-১২০ ডেসিবল তীব্রতায় শব্দের মধ্যে থাকলে স্থায়ীভাবে শ্রবণশক্তি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। জোরে শব্দ হয় এমন যন্ত্র বা আগ্নেয়াস্ত্র চালানোর সময় কানে কানবন্ধ বা প্লাগ ব্যবহার করতে হবে। কার্পেট বিছিয়ে বা দেয়ালে টাইলস লাগিয়ে ঘরে শব্দদূষণ কমানো যায়। শব্দ কমানোর ব্যাপারে নিজে সতর্ক হতে হবে, অন্যকেও সতর্ক করতে হবে। আজ সারা বিশ্বের পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে।
বিশ্বের উষ্ণতা বাড়ছে। হিমালয় ও মেরুদেশের বরফ গলে সমুদ্রের পানি বাড়ছে। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ঝড়, বৃষ্টি, বন্যা, খরা, প্লাবন ইত্যাদি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। এখন আরব দেশের মতো মরুভূমিতে পর্যন্ত প্রবল বৃষ্টিতে বন্যা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপকে প্রবল তুষারঝড়ে লণ্ডভণ্ড করে দিচ্ছে, অথচ দুই দশক আগেও এ অবস্থা ছিল না। আর এর জন্য অন্য গ্রহের কোনো কিছু নয়; মানুষের কর্মকাণ্ডেই এই মারাত্মক সমস্যা দেখা দিয়েছে। এর সমাধান মানুষেরই হাতে। তারা যদি ভোগবাদী চাহিদা কমিয়ে আনে, তাহলে ফার্নেস তেল পোড়ানো কমে যাবে, কার্বন নির্গমন কম হবে। বিশ্বের আবহাওয়া স্বাভাবিক থাকবে। মানুষের রোগব্যাধি কমে যাবে। সারা বিশ্বে সবাইকে ‘বাঁচাও, বাঁচতে দাও’ নীতিতে অটল থেকে কাজ করতে হবে। শুধু ইউরোপ, আমেরিকার দিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না; উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোকেও আচরণবিধি মেনে চলতে হবে। বিশেষত ভারত, চীন ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোকে খনিজ তেল পোড়ানো কমাতে হবে। বৈশ্বিক জলবায়ু ঠিক রাখার জন্য আমাদের প্রচুর বনায়ন করতে হবে।
লেখক : পরিবেশবিদ ও পানিবিশেষজ্ঞ

No comments

Powered by Blogger.