সাহস-বিশ্বাসের মশলায় ভারত-আফগান বাঁধ

আফগানিস্তানের হেরাত প্রদেশে নির্মিত ‘আফগান-ভারত মৈত্রী বাঁধ’ যৌথভাবে উদ্বোধন করেছেন সফররত ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি। শনিবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মোদি বলেন, ইট-বালু-লোহার বুনিয়াদে নয়, বরং সাহসিকতা ও বিশ্বাসের মসলায় নির্মিত হয়েছে এ বাঁধ। ভারতের প্রযুক্তিগত ও লোকবলের সহায়তায় নির্মাণ করা হয়েছে ‘সালমা বাঁধ’ নামে পরিচিত এ বাঁধটি। খবর এএফপি, ফার্স্ট পোস্ট, দ্য ইকোনমিক টাইমস ও টাইমস অব ইন্ডিয়ার। পাঁচ দিনে পাঁচ দেশ সফরের অংশ হিসেবে শনিবার দুপুরে হেরাতে পৌঁছেন মোদি। এদিন সফররত ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকও করেন। এ বৈঠকে আফগানিস্তানের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ১২ হাজার ৮০০ কোটি রুপি ব্যয়ের প্রতিশ্র“তি দিয়েছেন মোদি। এর আগে হেরাত প্রদেশে ১ হাজার ৭৭৫ কোটি রুপি (২৯ কোটি ডলার) ব্যয়ে নির্মিত আফগান-ভারত মৈত্রী বাঁধের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দেন দুই নেতা। সেখানে মোদি বলেন, ১৯৭০ সাল থেকে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখত আফগানিস্তান ও ভারত। দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করতে এটা একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত।
আজ আফগান জনগণ এ বার্তা দিচ্ছে যে, ধ্বংস, মৃত্যু, ঝড়-ঝাপ্টা, বিপদ-আপদ সব সময়ই বিরাজমান নয়। এ সময় আফগানিস্তানের চাষাবাদ সম্পর্কে মোদি বলেন, ‘ইয়ে মুজে গুজরাত কি ইয়াদ দিলা রহো হায়’- অর্থাৎ আফগানিস্তানের কৃষি পদ্ধতি আমাকে গুজরাটের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। উদ্বোধনী এ অনুষ্ঠানে আশরাফ ঘানি ‘আফগানিস্তানকে মোদির দ্বিতীয় বাড়ি’ উল্লেখ করে বলেন, ভারতের সহায়তায় দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছে আফগানিস্তান। এ বাঁধ দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতা ও উন্নতির নতুন দ্বার খুলে দিয়েছে। যতই হিংসা, ধ্বংস নেমে আসুক না কেন, দু’দেশের যৌথ প্রচেষ্টায় তা উত্তরণে চেষ্টা করে যাব। প্রতিবেশী ইরানের পার্শ্ববর্তী হোরাত শহর থেকে ১৬৫ কিলোমিটার দূরবর্তী চিস্ট-ই-শরিফ নদীতে ৭৫ হাজার হেক্টর এলাকা জলসেচন করতে হবে। তাহলে সেখান থেকে ৪২ মেগাওয়াট শক্তিসম্পন্ন বিদ্যুৎ উৎপন্ন সম্ভাবনা রয়েছে। প্রদেশটিকে কৃষিনির্ভর হিসেবে তৈরি করতে আফগান সরকার এ বাঁধ তৈরির পরিকল্পনা করে বলে খবরে প্রকাশ করা হয়েছে। প্রায় ১ হাজার ৫০০ ভারতীয় ও আফগান শ্রমিকের কয়েক বছরের শ্রমে এ বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। সব ধরনের যন্ত্রপাতি ও মালসামগ্রী ভারত থেকে ইরানের সমুদ্রবন্দর ‘বন্দর-ই-আব্বাস’ হয়ে ইরান-আফগানের ইসলাম কিলা সীমান্ত দিয়ে কাবুলে প্রবেশ করেছে। হেরাত প্রদেশটি মধ্যপাচ্য, মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে সংযোগ রুট হওয়ায় খুবই গুরত্বপূর্ণ। আফগানিস্তান সফর শেষে শনিবার সন্ধ্যায় তেলসমৃদ্ধ কাতার সফরে গেছেন মোদি। সেখান থেকে আজ (রোববার) দু’দিনের সফরে সুইজারল্যান্ডের উদ্দেশ্যে উড়াল দেবেন তিনি। এরপর সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমন্ত্রণে ৬ জুন ওয়াশিংটন পৌঁছবেন মোদি। যুক্তরাষ্ট্র সফরে তিনি পঞ্চম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশটির কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। পাঁচ দেশ সফরের শেষ পর্বে ৮ জুন মেক্সিকো সফর করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি। যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড ও মেক্সিকো সফরে পারমাণবিক সরবরাহকারী গ্র“প এনএসজির সদস্য হতে ভারতের উদ্যোগের পক্ষে সমর্থন জোগানোর চেষ্টা করবেন বিজেপির এই নেতা।

No comments

Powered by Blogger.