আমের হাট কানসাট

কানসাট আমের হাটে চলছে বেচাকেনা
আম পছন্দ করে না এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম। ভাল আম বলতেই আমরা বুঝ রাজশাহীর আম। সবচেয়ে বেশি আমের চাষ হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায়। এখানকার প্রতিটি পরিবার এই আমের সাথে প্রত্যেক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। বিশেষ করে এ অঞ্চলের অর্থনীতির চাকা দিন দিন সচল হচ্ছে এই আম নিয়েই। আম বেচাকেনা করে মানুষের দিন বদলাচ্ছে। এ ছাড়া আম বেচাকেনা করে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেক শিল্পের বিকাশ ঘটছে এ অঞ্চলে। বছরের অন্তত তিনটি মাস সরগরম থাকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার কানসাট এলাকা। কানসাটই হচ্ছে দেশের বৃহত্তর আমের হাট। এ অঞ্চলের চাষিরা আম বেচাবিক্রির জন্য কানসাটের হাটে আসেন।চাঁপাইনবাবগঞ্জের রাস্তাঘাটগুলোতে ঘুরে বেড়ানোর সময় কাঁচাপাকা আমের ঘ্রাণ নাকে ভেসে না এলেও রাস্তার দু’পাশে সারি সারি আমগাছ আপনাকে মুগ্ধ করবেই। মনপ্রাণ জুড়িয়ে যাবে। আম খাওয়ার চেয়ে আমগুলো গাছে গাছে ঝুলে থাকলে দেখতে বেশ ভালো লাগে। কারণ এত অধিক আম গাছ দেশের অন্য কোনো অঞ্চলে দেখা মেলে না। স্থানীয় কৃষি বিভাগের কাছেও তথ্য নেই যে, এখানে আমগাছের সংখ্যা আসলে কত। তবে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, উৎপাদিত আম বিক্রি করে চাষিরা লাভবান হচ্ছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবপুর উপজেলার আম চাষিরা বর্তমানে অত্যন্ত ব্যস্ত সময় পাড় করছেন।
কথা বলারও ফুরসত নেই যেন তাদের। কেউ গাছ থেকে আম পাড়ছেন, কেউ ঝুড়িতে আম সাজাচ্ছেন, আবার কেউ আম বিক্রির জন্য হাটে নিয়ে যাচ্ছেন। এ সবই যেন রুটিনমাফিক কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমচাষিদের। মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে বাজারে আম উঠতে শুরু করেছে। আগামী দুই মাস পুরোপুরিভাবে বাজারে পাওয়া যাবে আম। এ বছর আমের ভালো ফলন হওয়ায় চাষিরা সন্তুষ্ট। তবে পাইকারি বাজারে আমের দাম কম হওয়ায় কম লাভ হচ্ছে বলে জানান তারা। এ উপজেলার উৎপাদিত আম চাষিরা বিক্রির জন্য কানসাটের হাটে নিয়ে আসেন। এ হাট সারা দেশের মানুষের কাছে আমের হাট হিসেবে খুবই সুপরিচিত। কানসাট সড়কের পাশে প্রায় দুই কিলোমিটার লাইনে বাঁশের ঝুড়িতে করে সাইকেল ও ভ্যানের মধ্যে রেখে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আম বিক্রি করে থাকেন চাষিরা। আবার অনেকে ঝুড়ির মধ্যে রাস্তার দু’পাশে আম পসরা সাজান। আম কেনার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা আসেন এখানে। আম বেচাকেনা হয় সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এ সময় লোকে লোকারণ্য থাকে রাস্তার দুই পাশে।
কানসাটের আমের হাটে আসা কাজল নামে এক বিক্রেতার সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, আমাদের তিনটি আম বাগানে প্রায় ১০০ মতো আমগাছ রয়েছে। সারা বছর গাছের পরিচর্চা বাবদ যে খরচ তা বাদ দিলে প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা লাভ করতে পারি। তিনি জানান, অনেক সময় আমের বাজার নি¤œমুখী হয়ে পড়ে, তখন আর সেভাবে লাভ হয় না। এরশাদ নামে এক ব্যক্তি জানান, আমই হচ্ছে এ অঞ্চলের প্রধান অর্থকরী ফসল। আম বিক্রি করে এ এলাকার মানুষের আশা-আকাক্সার প্রতিফলন ঘটছে। তিনি জানান, আমের বাজার সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিলে এখানকার কৃষকেরা লাভবান হতে পারেন। আম বাজারে ওঠা শুরু থেকে দুই-আড়াই মাস পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে সাধারণত। তখন এখানে উৎসব শুরু হয়। বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় আম মওসুমে অতিথি আপ্যায়ন থেকে শুরু করে অন্যান্য প্রয়োজনীয় কার্যাদি সম্পন্ন করে থাকেন। উৎসবের অংশ হিসেবে ঐতিহ্যবাহী গম্ভীরা গানের আয়োজন করা হয়ে থাকে স্থানীয়ভাবে। প্রথম ধাপে যে আমগুলো বাজারে আসে সেগুলো হচ্ছে হিমসাগর, গোপালভোগ, মোহনভোগ, লক্ষ্মা, ল্যাংড়া, ক্ষুদি খিরসা, খিরসা, আম্রপালি, বোম্বাই গুটি, মিছরিকান্ত। আর পরের ধাপে আসে চুষা, ফজলি ও আশ্বিনা।
গত এক সপ্তাহ আগে থেকে বাজারে আম উঠতে শুরু করেছে। আমের সিজেনটাই তাদের ব্যস্থতার সময়। অবশ্য এ ব্যস্ত সময়টাই তাদের সবচেয়ে সুখের সময়। আর এ জন্যই তারা অপেক্ষা করে থাকে সারা বছর। চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের হাটে যেতে চাইলে আপনাকে ঢাকার কল্যাণপুর অথবা গাবতলী থেকে বাসে যেতে হবে। প্রতিদিন বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জের উদ্দেশে বাস ছেড়ে যায়। সময় লাগে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা। ভাড়া ৫০০ টাকা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ইসিবাইকে যেতে পারবেন কানসাটের আমের হাটে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে রাতে থাকার সুব্যবস্থা রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.