গ্রাহকের অর্থ আত্মসাতের ঘটনা তদন্ত করছে যমুনা ব্যাংক

বেসরকারি খাতের যমুনা ব্যাংকের কুমিল্লা শাখায় গ্রাহকের অর্থ আত্মসাতের ঘটনা নিয়ে তদন্ত চলছে। শাখাটির ব্যবস্থাপক মোশারফ হোসেনের (সেলিম) বিরুদ্ধে গ্রাহকের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে গত রোববার ব্যাংকের তিনটি তদন্ত দল কুমিল্লায় আসে। একটি দল গতকাল সোমবার চলে গেছে, বাকি দুটি দল তদন্ত করছে। এদিকে তদন্ত দলগুলো আসায় ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা দুই দিন ধরে শাখাটিতে ভিড় জমান। তাঁদের অনেকেই তদন্ত দলের কাছে অর্থ খোয়া যাওয়ার অভিযোগ জানান। ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ২৯ জানুয়ারি মোশারফ হোসেন যমুনা ব্যাংকের কুমিল্লা শাখায় যোগ দেন। এরপর থেকে নানা সময় তিনি ব্যাংকের বিভিন্ন গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা ধার নেওয়ার নামে তাঁদের সই করা খালি চেক নিয়ে অতিরিক্ত অর্থ তুলে নিতে থাকেন। একই সঙ্গে জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রাহকের হিসাব থেকেও টাকা তুলে নেন তিনি। এর মধ্যে নগরের হালুয়াপাড়া এলাকার দেলোয়ারা বেগমের ১৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা, বরুড়ার আড্ডা ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মুক্তিযোদ্ধা মীর হারুনুর রশিদের ৮ লাখ টাকা, বাগমারা এলাকার হাফেজ নজরুল ইসলামের ৯ লাখ টাকা এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জসিম খানের ৬ লাখ ৯ হাজার টাকা তুলে নেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় শাখা ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে গত শুক্রবার মামলা হয়েছে। এ বিষয়ে নগরের কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ সামসুজ্জামান বলেন, মোশারফের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গত শুক্রবার রাতে থানায় মামলা করেছেন ওই ব্যাংকের একজন গ্রাহক। অভিযুক্ত ব্যবস্থাপক বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এদিকে ব্যাংকের তদন্ত দলের সদস্যদেরকে কাছে গত রোববার বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী গ্রাহক বলেন, ‘ম্যানেজার সাহেব চেয়েছেন বলে আমরা চেক দিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি যে এ কাজ করবেন, তা আমাদের ধারণার বাইরে ছিল।’ শাখা ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে ব্যাংকের অন্তত ২০ জন গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে ফেরত না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এঁদেরই একজন ঠিকাদার আবুল হোসেন। তিনি আলাপকালে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ম্যানেজার সপ্তাহ খানেক আগে আমার কাছে চার লাখ টাকা ধার চেয়েছিলেন। আমি না করে দিয়েছি। কারণ আগেও টাকা ধার নিয়ে ফেরত দেননি।’ কুমিল্লার টমছমব্রিজ এলাকায় অবস্থিত এই শাখার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক আসাদুল হক বলেন, ‘ম্যানেজার স্যার চেক দিয়ে বলতেন টাকা এনে রাখ। আমরা চেকের বিপরীতে টাকা দিতাম। উনার নির্দেশ অনুযায়ী চেক ফরোয়ার্ড করতাম।’ ব্যাংকের চট্টগ্রামের আঞ্চলিক প্রধান বদিউল আলম, নিরীক্ষা শাখার কর্মকর্তা মাইনউদ্দিন ও মানি লন্ডারিং শাখার কর্মকর্তা শামসুল আলমের নেতৃত্বে আট সদস্যের তিনটি দল ঘটনা তদন্তে রোববার কুমিল্লা আসে।
ব্যাংকটির আঞ্চলিক প্রধান মো. বদিউল আলম রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রধান কার্যালয় গত বুধবারই শাখা ব্যবস্থাপককে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। গ্রাহকদের আমানত নিয়ে কোনো ধরনের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। যাঁদের টাকা খোয়া গেছে, তাঁদের অবশ্যই টাকা ফেরত দেওয়া হবে। তদন্ত সাপেক্ষে আমরা এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

No comments

Powered by Blogger.