‘বালিকা বধূ’ প্রত্যুষা গৃহকর্মীর কাছে ধার করতেন!

প্রত্যুষা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাহুল রাজ সিং
ভারতীয় টেলিভিশনের জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘বালিকা বধূর’ পরিচিত মুখ বাঙালি অভিনেত্রী প্রত্যুষা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর গৃহকর্মীর কাছ থেকে অর্থ ধার নিতেন। প্রত্যুষার কাছ থেকে তাঁর প্রেমিক রাহুল রাজ অর্থ নিতে নিতে ওই অভিনেত্রীর এমন অবস্থা করেছিলেন। পুলিশকে দেওয়া জবানবন্দিতে প্রত্যুষা ও রাহুলের ফ্ল্যাটের গৃহকর্মী রেনু সিং এ তথ্য দিয়েছেন। খবর জি নিউজের। এদিকে গত বৃহস্পতিবার এই মামলায় আগাম জামিন বাতিল হওয়ার পর আজ সোমবার আবারও মুম্বাই হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেছেন প্রত্যুষার প্রেমিক অভিনেতা-প্রযোজক রাহুল রাজ সিং। কাল এই আবেদনের শুনানি হতে পারে। জবানবন্দিতে রেনু সিং বলেন, তিনি অনেক দিন ধরেই প্রত্যুষার বাসায় কাজ করতেন। গত ২০ মার্চ তিনি কাজ ছেড়ে দেন। এ সময় প্রত্যুষার আর্থিক অবস্থা শোচনীয় ছিল। তিনি বলেন, প্রত্যুষার মা তাঁকে রাহুলকে ছেড়ে আসতে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু প্রত্যুষা ওই অনুরোধ কানে তোলেননি। উল্টো রাহুলের পক্ষ নিয়ে তিনি মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করেছিলেন। এরপর রাহুল প্রত্যুষাকে তাঁর মা–বাবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বারণ করেন। পরে তিনি মা–বাবার ফোন নম্বর তাঁর মোবাইলে ব্লক করে রাখেন। রেনু সিং বলেন, প্রত্যুষা খুব মজার মেয়ে ছিলেন। তিনি বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে ঘুরতে পছন্দ করতেন। কিন্তু এতে সাবেক প্রেমিকের সঙ্গে যোগাযোগ হতে পারে ভেবে রাহুল সন্দেহ করতেন তাঁকে। প্রত্যুষা যখন শ্রীলঙ্কায় গিয়েছিলেন, তখন রাহুল তাঁকে সন্দেহ করে বলেছিলেন যে তিনি সাবেক প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। এতে প্রত্যুষা খুব কষ্ট পেয়েছিলেন। প্রত্যুষা রাহুলকে অনেক ভালোবাসতেন। রাহুল শুধু ভালোবাসার ভান করতেন।  রেনু সিং আরও বলেন, ‘রাহুল যখন বাইরে যেতেন, তখন প্রত্যুষা আমাকে অনেক কথা বলতেন। রাহুল প্রত্যুষাকে মারধর করতেন। সেই মারধরের চিহ্নও প্রত্যুষা আমাকে দেখাতেন।’ তিনি বলেন, তাঁরা দুজন প্রায়ই অর্থসংক্রান্ত ব্যাপারে ঝগড়াঝাঁটি করতেন। প্রায়ই রাহুল প্রত্যুষার কাছে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ রুপি করে চাইতেন। প্রত্যুষা বিয়ের জন্য চাপ দিলে রাহুল কৌশলে তা এড়িয়ে যেতেন। রেনু বলেন, প্রত্যুষার কাছ থেকে রাহুল অর্থ নিতে নিতে তাঁর এমন পরিণতি করেছিলেন যে প্রত্যুষা তাঁর (রেনু) কাছ থেকে ছয় থেকে সাতবার অর্থ ধার করেছেন। এই অর্থনৈতিক অবস্থা প্রত্যুষাকে অন্ধকারে ফেলে দিয়েছিল। রেনু সিং বলেন, ‘হঠাৎ​ করেই রাহুলের সাবেক প্রেমিকা সালোনি একটি আলাদা চাবি দিয়ে তালা খুলে বাসায় আসতে শুরু করলেন।
প্রত্যুষা বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রত্যুষা ভাবতেন, সালোনি আমার কাছে এই চাবি পেয়েছেন। কিন্তু আমি আদৌ জানি না যে তিনি কীভাবে চাবি পেয়েছিলেন।’  এদিকে মামলা থেকে মানবিক কারণে সরে যাওয়া রাহুলের পক্ষের আইনজীবী নীরাজ গুপ্ত সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি রাহুলের বিরুদ্ধে তথ্য উপস্থাপন করেন। নীরাজ গুপ্ত বলেন, প্রত্যুষার আত্মহত্যার আগের রাতে ৩১ মার্চ রাহুল একটি মেয়ের সঙ্গে বোরা বোরা রেস্তোরাঁয় পার্টি করেছিলেন। সেখানে মেয়েটির সঙ্গে রাহুলের মারামারির ঘটনাও ঘটেছে। এই আইনজীবী বলেন, যেদিন প্রত্যুষা মৃত্যু হয়, সেদিন সকাল থেকে তিনি প্রচুর মদ্যপান করেছিলেন। এমন অবস্থায় কী করে তিনি গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করতে পারলেন? প্রত্যুষার নাক ও চোখের নিচে হাড়ে আঘাতের চিহ্নও পাওয়া গেছে। নীরাজ গুপ্ত বলেন, আগে সৌগতা মুখার্জি নামের একজন বিমানবালাকে বিয়ে করেছিলেন রাহুল। এখন পর্যন্ত তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়নি। ১ এপ্রিল মুম্বাইয়ের ফ্ল্যাট থেকে প্রত্যুষার গলায় ফাঁস দেওয়া ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিকভাবে পুলিশ অনুমান করেছিল, প্রত্যুষা আত্মহত্যা করেছেন। পরে ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে জানানো হয়, শ্বাসরোধে প্রত্যুষার মৃত্যু হয়েছে। প্রত্যুষা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর তোলপাড় শুরু হয়েছে বলিউডে। ‘বালিকা বধূ’র ‘আনন্দী’ কি আত্মঘাতী হলেন, নাকি তাঁকে পরিকল্পনা করে খুন করা হয়েছে? কলকাতার জামশেদপুরের মেয়ে প্রত্যুষা বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন। তাঁর অভিনীত শেষ সম্প্রচারিত ধারাবাহিক ‘শ্বশুরাল সিমার কি’। রিয়্যালিটি শো ‘বিগ বস ৭’-এ দেখা গেছে তাঁকে।

No comments

Powered by Blogger.