ছায়ানটের বর্ষবরণের বিষয় ‘মানবতা’

ছায়ানট ভবন মিলনায়তনে বর্ষবরণ নিয়ে আয়োজিত
সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা দেন সন্‌জীদা খাতুন
এবার এমন এক সময়ে বাংলা নববর্ষের আগমন, যখন দেশ চলছে এক কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে। দেশ যে অর্থনৈতিকভাবে অনেকটাই এগিয়েছে, তার নিদর্শন আমরা খালি চোখেই দেখতে পাই। সেই সঙ্গে চোখে পড়ে শুভচেতনা, মানবিকতাবোধ আর কল্যাণ মানসিকতার চরম অবমাননা আর বিনাশের চিত্র। হিংসা, হানাহানি আর নারী নির্যাতন হয়ে উঠেছে নিত্যদিনের ঘটনা। এমনই এক পরিস্থিতিতে দুয়ারে সমাগত বাঙালির নববর্ষ। এ কারণে ছায়ানটের কাছে ১৪২৩ বঙ্গাব্দের প্রথম সূর্যোদয়ের তাৎপর্য ভিন্নতর। এ যেন শুধুই নতুন বছরকে আবাহন জানানো নয়, এবারের নববর্ষ আসছে প্রকৃত অর্থে বাঙালি জাতির নতুন করে জেগে ওঠার তাগিদ নিয়ে। গতকাল সোমবার বিকেলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ছায়ানটের মূল বক্তব্য ছিল এমনটাই। প্রতিষ্ঠানটির মূল মিলনায়তনে বর্ষবরণের প্রস্তুতিতে অনুশীলনে ব্যস্ত ছিলেন শিল্পীরা। এক ফাঁকে তাঁদের পাশে রেখে সংবাদ সম্মেলনে সংবাদকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করেন ছায়ানটের সভাপতি সন্‌জীদা খাতুন, সহসভাপতি সারওয়ার আলী ও সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আনাম। সন্‌জীদা খাতুন বলেন, ছায়ানটের বর্ষবরণের এবারের বিষয় মানবতা। গানে, কবিতায় মানবতার মর্মবাণী দর্শকদের সামনে তুলে ধরবেন শিল্পীরা। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বরাবরের মতো এবারের অনুষ্ঠানও শুরু হবে ভোর সোয়া ছয়টায়। ভোরের রাগালাপ দিয়ে শুরু হবে মূল পর্ব। শেষ হবে সকাল সাড়ে আটটার মধ্যে। ১৫টি একক গান, ১২টি সম্মেলক গান, ৩টি আবৃত্তি ও পাঠ দিয়ে সাজানো অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটবে সন্‌জীদা খাতুনের শুভেচ্ছা কথনের মাধ্যমে। পুরো আয়োজনে প্রায় দেড় শ জন শিল্পী অংশ নেবেন। ‘হাজারওকণ্ঠেবর্ষবরণ’ বিগত চার বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও পুরোনো বছরকে বিদায় এবং নতুন বছরকে বরণ করার উদ্যোগ নিয়েছে চ্যানেল আই ও সুরের ধারা। ‘হাজারও কণ্ঠে বর্ষবরণ ১৪২৩’ শিরোনামের এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। অনুষ্ঠানটির বিস্তারিত জানাতে গতকাল দুপুরে চ্যানেল আই ভবনে আয়োজন করা হয়েছিল এক সংবাদ সম্মেলনের। এতে উপস্থিত ছিলেন চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তাপ্রধান শাইখ সিরাজ, সুরের ধারার অধ্যক্ষ ও চেয়ারম্যান রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা এবং পৃষ্ঠপোষক ছিলেন ইউনিলিভারের ব্র্যান্ড বিল্ডিং ডিরেক্টর জাভেদ আখতার। অনুষ্ঠানে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা বলেন, অনুষ্ঠানটি শুরু হবে ১৩ এপ্রিল সন্ধ্যা ছয়টায়। নাটকের গান দিয়ে সুরের ধারা শুরু করবে চৈত্রসংক্রান্তির অনুষ্ঠান। পরদিন ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে হাজারও কণ্ঠে বর্ষবরণ করা হবে। শাইখ সিরাজ বলেন, সুরের ধারার অনুষ্ঠানটি শেষ হবে ১৪ এপ্রিল সকাল নয়টার মধ্যে। তারপরই দেশবরেণ্য শিল্পীরা গাইবেন। বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে নাচ, গান, আবৃত্তি, নৃত্যনাট্য, শিশু-কিশোরদের পরিবেশনা ছাড়াও আয়োজন করা হয়েছে দিনব্যাপী নববর্ষের মেলা। যেখানে থাকবে দেশের ক্ষুদ্র, কুটির ও লোকজ শিল্পপণ্যের সমাহার। বৈশাখউৎসবেআজলোকগানেরআসর বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের পাঁচ দিনের বৈশাখ উৎসবের গত সন্ধ্যায় ছিল অতুলপ্রসাদ সেন, রজনীকান্ত সেন ও দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের গান ও রাগাশ্রয়ী গান। ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় গান শোনান সুবীর নন্দী, ইফ্ফাত আরা দেওয়ান, ফারহানা রহমান, অলোক কুমার সেন, মাহমুদুল হাসান, অনিন্দিতা চৌধুরী, ঝুমা খন্দকার, তানভীর আলম। গত রোববার সন্ধ্যায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান ও কবিতার মধ্য দিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানান শিল্পীরা। ‘চক্ষে আমার তৃষ্ণা’ গানটি দিয়ে এই আসর শুরু করেন সেমন্তী মঞ্জরী এবং আসর শেষ হয় রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার গানের মধ্য দিয়ে। গানের ফাঁকে কবিতা আবৃত্তি এবং শিলাইদহ ও শাহজাদপুর থাকাকালীন ইন্দিরা দেবীকে লেখা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা চিঠি থেকেও পাঠ করেন আসরের সঞ্চালক আবৃত্তিকার হাসান আরিফ। উৎসবে আজ থাকছে লোকসংগীতের আয়োজন।

No comments

Powered by Blogger.